মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি কিন্তু এতটুকু
উপলব্ধি করতে পারি, কতটুকু চেতনা ও দেশপ্রেম হৃদয়ে ধারণ করলে একজন মানুষ
তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ, নিজের জীবন বাজী রেখে দেশ মাতৃকার রক্ষার
জন্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরতে পারে।তারা আর কেউ নয় বাঙ্গালীর
অহংকার ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা।বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে বিজয়ের ৪১ বছরে পা
রেখেছে। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে তারা এত বড় আত্নত্যাগ করে গেলেন সেই স্বপ্ন
যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে যতই শহীদ বেদিতে ফুল দেই না কেন,যতই স্মরন সভা
করে বড় বড় কথা বলিনা কেন, এতে শহিদের আত্না শান্তি পাবে না এবং তাদেরকে
প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন দেখানো হবেনা।
জাতিকে আজ স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শব্দগুলি দিয়ে নানা ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।কিন্তু এই পক্ষ বিপক্ষের শক্তির কর্মকান্ডের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না। যারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করছে তারাও মানুষ খুন করছে ,দেশের সম্পদ লুটপাট করছে আবার যাদেরকে বিপক্ষের শক্তি হিসেবে প্রচার করা হয় তারাও ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করছে। এই পক্ষ বিপক্ষ মিলে সাধারণ মানুষের মান দাড় করিয়েছে পিপড়া সমতুল্য , যেন ইচ্ছে করলেই একটা ডলা দিয়ে মেরে ফেললে কোথাও কৈফিওত দেয়ার দরকার নেই। এই কথিত পক্ষ বিপক্ষের শক্তি দেশের মানুষের কিছু অনুভূতিকে মার্কেটিং পলেছি হিসেবে ব্যাবহার করে ক্ষমতার পালাবদল করে যাচ্ছে এবং ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিনিয়ত ১৬ কোটি মানুষের অধিকারের সাথে প্রতারনা করে চলছে।
৭১ এর ঘাতক দালাল ও মানবতা বিরোধীদের বিচার আমাদের প্রানের দাবি। জনগনের এই প্রত্যাশাকে পূঁজি করে ব্যাপক জয় জয়কারের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসলো স্বাধীনতার ধারক বাহক দাবিদার আওয়ামীলীগ সরকার। ক্ষমতায় এসেই শুরু করলো এই বিচার প্রক্রিয়া। আমাদেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ রয়েছে যারা ৭১ এর ঘাতক দালালদের বিচার বলতেই পাগল হয়ে যায় আর কোন জ্ঞান থাকেনা। আওয়ামীলীগ সরকার এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে বোকা বানিয়ে শেয়ার বাজার কেলেংকারী করলো,পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্ণীতি করলো,হলমার্ক কেলংকারি করলো,৭১ এর মানবতা বিরোধী বিচারের আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন তাজা তাজা প্রানের খুন উপহার দিলো,বিশ্ব মানবতাকে লাথি মেরে মধ্যযুগীয় বর্বরদের মতো পুলিশ প্রশাসনকে প্রহরায় রেখে নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করালো। প্রতিদিনের তাজা খুনের বিচারের দাবিতে,এই সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা অনেকেই কথা বলিনা,স্বোচ্চার হইনা কারন এরা ৭১ এর ঘাতক দালালদের বিচার করছে,এসবের বিরুদ্ধে দাড়াতে গেলে যদি বিচার বাধাগ্রস্থ হয়। আমাদের সৌখিন বুদ্ধিজীবীদের আচরনে এটাই প্রকাশ পেলো, দেশ রসাতলে যাক কিন্তু বিচারের ব্যাপারে সরকারের সমস্ত মন্ত্রণালয় নিজস্ব কাজ কর্ম ফেলে ৭১ এর বিচার বিচার বলে চিল্লাপাল্লাতো করছে এটাই যেন তাদের শান্তি। এভাবে আমাদের আমাদের সৌখিন বুদ্ধিজীবীদের খুশি করে, তাদেরকে বোকা বানিয়ে আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী নেতা ও তাদের সহযোগীরা বিগত চার বছরে দেশকে লুটপাটের যা করার করে নিয়েছে আর খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ উপহার পেয়েছে ক্ষুধা ,দারিদ্রতা,বেকারত্ব,মুদ্রাস্ফিতি,আর তাজা তাজা প্রাণের বলী। ৭১ এর ঘাতকদের বিচারকার্য এই সরকার আসলেই কি করবে ?নাকি আবার ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাটের জন্য ইস্যু হিসেবে ঝুলিয়ে রাখবে, এটা সময়ই বলে দেবে।
দেশের এমন অবস্থায় সাধারন মানুষ আজ দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে ,মুক্তির পথ খুজে পাচ্ছেনা। মানুষের দুরাবস্থাকে পুঁজি করে রাজনীতির মাঠ দারুন ভাবে গরম করে রেখেছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বি.এন.পি আর তাদের মাথার উপর ছাতা ধরে আছে ৭১ এর মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে সরাসরি ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহকারী দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত বি .এন.পি কে ব্যবহার করছে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য আর বি .এন.পি জামায়াতকে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করার জন্য। বি.এন.পি জামায়াত ক্ষমতায় গেলে হয়তো আবারো দেখা যেতে পারে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চাইনি বরং মুক্তিযোদ্ধাদের পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সহায়তা করেছে তাদের গাড়িতে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা পতপত করে উড়বে, তারা এই দেশটাকে শাসন করবে । এই অপমান,এই গ্লানি জেনেও সাধারন মানুষ হয়তো আগামী সংসদ নির্বাচনে বি .এন.পিকে ভোট দেওয়ার চিন্তা করছে। দিশেহারা হয়ে ভাবছে বর্তমান পেক্ষাপট থেকে বাঁচার এটাই সঠিক পথ,মুক্তির পথ। মুক্তির আশায় সাধারণ মানুষ যাদেরকে ক্ষমতায় পাঠানোর কথা ভাবছে তাদের অনেকেই এখন থেকেই দোকানে বাকী খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতায় গিয়ে পরিশোধের আশায়। তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো এখন থেকেই টেন্ডার-বাজীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ক্ষমতায় পৌঁছানোর পর দেখা যাবে বিগত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক হয়রানির প্রতিশোধ গ্রহনের মহোৎসব,যেসব রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সেই সব সাইনবোর্ড নামিয়ে নতুন সাইনবোর্ড উঠানোর ফিতাকাটা অনুষ্ঠান, লুটপাট,হত্যা,দলীয়করণ ইত্যাদি অপকর্ম। তখন আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দাবিদার আওয়ামীলীগের দেশপ্রেম উতলে উঠবে,অতীতের সমস্ত অপকর্ম ভুলে গিয়ে বি.এন.পির অপকর্ম ঠেকাতে রাস্তায় নামবে ,৭১ এর ঘাতক দালালদের বিচার কার্যকর করার জন্য আবারো আমাদের সৌখিন বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত করে মানবন্ধন করবে,দেশ বিদেশে জনমত তৈরি করবে,হরতাল করবে,রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধংস করবে। এভাবেই হয়তো আরো পাঁচটি বছর পার হয়ে যাবে,মাঝখানে বি.এন.পি ও তার শরীকদের নেতা ও সুবিধাভোগীরা লুটপাট ও অপকর্মের যতটুকু দরকার তা করে নেবে। শ্রমজীবি সাধারন মানুষ আবারো ফাঁকির মধ্যে পড়বে আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র ধীরে ধীরে মুদি দোকান হওয়ার উপক্রম হবে।আর এত সব অপকর্ম দেশের এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ নিরব দর্শকের দেখবে আর বলবে দেশ যাই হোক জামায়াত বি .এন.পি ইসলামের কথা বলছে,ইসলাম রক্ষার কাজ করছে।
দেশ বিজয়ের ৪১ বছরে পা রাখলেও এখনো স্ব-অর্থায়নে একটি পদ্মা সেতু নির্মানের যোগ্যতা অর্জন করেনি। সরকার পদ্মা সেতু নির্মানের জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে হাত পেতেছে। সাধারণ মানুষ দেশের ভালোবাসার জায়গা থেকে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছে কিন্তু দেশের এই দুর্দিনে আমাদের ক্ষমতাসীন দলগুলো কি সাধারণ মানুষের ডাকে সাড়া দিচ্ছে ? দেশ এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের সরকার কালবার্ড নির্মাণের জন্যও জনগনের কাছে হাত পাততে পারে, বর্তমানের অবস্থা থেকে রাষ্ট্র পরিণত হতে পারে মোড়ল রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। এখন প্রতিনিয়তই দেখা যায়, রাষ্ট্রের যে ধরনের দুর্যোগে আমাদের সরকারগুলো দেশের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পাতে। আমার কাছে ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক লাগে, শ্রমজীবী শ্রেনী,সাধারণ মানুষ কি ভিক্ষুক যে বিত্তবানদের অনুগ্রহ গ্রহন করবে?,তাদের কি আত্নসন্মান নেই ? বাংলার শ্রমজীবী মানুষ খেটে খাওয়া শিখেছে,চুরি করা শেখেনি,তাদের আত্নসন্মানবোধ আছে। শ্রমজীবী শ্রেনী দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছে, শ্রমজীবী শ্রেনী চায় তাদের বিপদে রাষ্ট্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে,কোনো বিত্তবানের ভিক্ষা নয়। আমাদের সরকারগুলো বিত্তবানদের কাছে হাত পাতে তাদের অধিকারের জায়গা থেকে কারন প্রতিটি সরকারই যেমন দুর্নীতি করে ব্যক্তিগত অর্থ বিত্ত বানায় এবং তাদের আত্নীয় স্বজন ও দোসরদেরকেও সুযোগ করে দেয় আরার এই হারাম টাকাকে হালাল করার জন্য প্রতিটি সরকারই বাজেট ঘোষনার সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টিও করে রাখে। এভাবে তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গরিব বানিয়ে,শ্রমজীবী শ্রেনীর রক্ত চুষে আজ অনেক বিত্তবান তৈরি করেছে। আবার বিত্তবানদের কাছ থেকে সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সাহায্যে গ্রহন করে দুর্নীতিগ্রস্থ বিত্তবানদের দেশপ্রেমিক,হৃদয়বান,দানশীল উপাধীতে সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সরকারগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকায় আমাদের দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশ প্রেমিক বলতে কুন্ঠাবোধ করেননা।
একবার গ্রামের একটি বাজারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বাজারের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো এক কৃষকের দিকে , কৃষক কাঁচা কলা বিক্রি করছে দু টাকা হালি। কৃষকের সঙ্গে তার বাচ্চা ছেলের নাক দিয়ে অনবরত সর্দি ঝড়ছে । ছেলেটি বাবার কাছে আবদার করছে ,আব্বা চপ খাবো কিন্তু কৃষক ছেলেকে সাত পাঁচ বুঝিয়ে শান্ত করে রাখছে।কৃষকের চিন্তা কলা বিক্রি করে আগে ২ কেজি চালের পয়সা জোগার করতে হবে তার পর ছেলের বায়না মেটানোর কথা ভাবতে হবে।কৃষক ঐ দিন ছেলের একটা চপের আবদার পূরন করেছে কিনা ,২কেজি চাল কিনতে পেরেছে কিনা আমি জানিনা।গল্পটা এজন্য করলাম কারন এটাই বাংলাদেশের প্রকৃত সামাজিক প্রেক্ষাপট আর কৃষকের ঐ কাঁচা কলা আমাদের অর্থনীতি। এই কৃষকের মত দেশের লাখ লাখ মানুষ আজ বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত।ঢাকার আলো ঝলমল জীবনের মাঝে আমাদের অনেক কিছুই বোধগম্য হয়ে উঠেনা।
দেশের বুদ্ধিজীবি ও বিবেকবানদের কাছে আমার প্রশ্ন দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ আর কতকাল এই সব দুর্বৃত্ত সরকারগুলোর গোলামী করবে ?যে দেশের মানুষের এখনো তিন বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার যোগ্যতা অর্জন করেনি সেই দেশের এক শ্রেনীর মানুষের গুলশান বনানীর বিলাশ বহুল জীবন আসে কোথা থেকে ?যে দেশের প্রধান মন্ত্রীকে প্রতিদিন সংবাদ পত্রের পাতায় খুনের খবর পড়ে দিনের কার্যদিবস শুরু করতে হয় সেই দেশের প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মুখ হাস্যজ্জল থাকে কিভাবে ?এখনো কি সময় আসেনি, এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির পথ খোজার ? পরিশেষে বলতে চাই,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
শুধু শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নয়,
শুধু বিশেষ দিনে আলোচনার ঝড় তোলা নয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
কোন শিশু বাংলাদেশের বুকে ঋনের বোঝা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হবেনা।
কোনো বাঙ্গালী অন্য বাঙ্গালীর বুকে আর গুলি চালাবে না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
সুশিক্ষা ও প্রযুক্তির হাত ধরে বাঙ্গালী জাতির অগ্রযাত্রায় পথে হেঁটে চলা,
জাতীয় স্বার্থে দল মত ভুলে গিয়ে এক সুরে কথা বলা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
জাতিকে আজ স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শব্দগুলি দিয়ে নানা ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।কিন্তু এই পক্ষ বিপক্ষের শক্তির কর্মকান্ডের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না। যারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করছে তারাও মানুষ খুন করছে ,দেশের সম্পদ লুটপাট করছে আবার যাদেরকে বিপক্ষের শক্তি হিসেবে প্রচার করা হয় তারাও ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করছে। এই পক্ষ বিপক্ষ মিলে সাধারণ মানুষের মান দাড় করিয়েছে পিপড়া সমতুল্য , যেন ইচ্ছে করলেই একটা ডলা দিয়ে মেরে ফেললে কোথাও কৈফিওত দেয়ার দরকার নেই। এই কথিত পক্ষ বিপক্ষের শক্তি দেশের মানুষের কিছু অনুভূতিকে মার্কেটিং পলেছি হিসেবে ব্যাবহার করে ক্ষমতার পালাবদল করে যাচ্ছে এবং ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিনিয়ত ১৬ কোটি মানুষের অধিকারের সাথে প্রতারনা করে চলছে।
৭১ এর ঘাতক দালাল ও মানবতা বিরোধীদের বিচার আমাদের প্রানের দাবি। জনগনের এই প্রত্যাশাকে পূঁজি করে ব্যাপক জয় জয়কারের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসলো স্বাধীনতার ধারক বাহক দাবিদার আওয়ামীলীগ সরকার। ক্ষমতায় এসেই শুরু করলো এই বিচার প্রক্রিয়া। আমাদেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ রয়েছে যারা ৭১ এর ঘাতক দালালদের বিচার বলতেই পাগল হয়ে যায় আর কোন জ্ঞান থাকেনা। আওয়ামীলীগ সরকার এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে বোকা বানিয়ে শেয়ার বাজার কেলেংকারী করলো,পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্ণীতি করলো,হলমার্ক কেলংকারি করলো,৭১ এর মানবতা বিরোধী বিচারের আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন তাজা তাজা প্রানের খুন উপহার দিলো,বিশ্ব মানবতাকে লাথি মেরে মধ্যযুগীয় বর্বরদের মতো পুলিশ প্রশাসনকে প্রহরায় রেখে নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করালো। প্রতিদিনের তাজা খুনের বিচারের দাবিতে,এই সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে আমরা অনেকেই কথা বলিনা,স্বোচ্চার হইনা কারন এরা ৭১ এর ঘাতক দালালদের বিচার করছে,এসবের বিরুদ্ধে দাড়াতে গেলে যদি বিচার বাধাগ্রস্থ হয়। আমাদের সৌখিন বুদ্ধিজীবীদের আচরনে এটাই প্রকাশ পেলো, দেশ রসাতলে যাক কিন্তু বিচারের ব্যাপারে সরকারের সমস্ত মন্ত্রণালয় নিজস্ব কাজ কর্ম ফেলে ৭১ এর বিচার বিচার বলে চিল্লাপাল্লাতো করছে এটাই যেন তাদের শান্তি। এভাবে আমাদের আমাদের সৌখিন বুদ্ধিজীবীদের খুশি করে, তাদেরকে বোকা বানিয়ে আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী নেতা ও তাদের সহযোগীরা বিগত চার বছরে দেশকে লুটপাটের যা করার করে নিয়েছে আর খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ উপহার পেয়েছে ক্ষুধা ,দারিদ্রতা,বেকারত্ব,মুদ্রাস্ফিতি,আর তাজা তাজা প্রাণের বলী। ৭১ এর ঘাতকদের বিচারকার্য এই সরকার আসলেই কি করবে ?নাকি আবার ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাটের জন্য ইস্যু হিসেবে ঝুলিয়ে রাখবে, এটা সময়ই বলে দেবে।
দেশের এমন অবস্থায় সাধারন মানুষ আজ দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে ,মুক্তির পথ খুজে পাচ্ছেনা। মানুষের দুরাবস্থাকে পুঁজি করে রাজনীতির মাঠ দারুন ভাবে গরম করে রেখেছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বি.এন.পি আর তাদের মাথার উপর ছাতা ধরে আছে ৭১ এর মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে সরাসরি ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহকারী দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত বি .এন.পি কে ব্যবহার করছে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য আর বি .এন.পি জামায়াতকে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করার জন্য। বি.এন.পি জামায়াত ক্ষমতায় গেলে হয়তো আবারো দেখা যেতে পারে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চাইনি বরং মুক্তিযোদ্ধাদের পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সহায়তা করেছে তাদের গাড়িতে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা পতপত করে উড়বে, তারা এই দেশটাকে শাসন করবে । এই অপমান,এই গ্লানি জেনেও সাধারন মানুষ হয়তো আগামী সংসদ নির্বাচনে বি .এন.পিকে ভোট দেওয়ার চিন্তা করছে। দিশেহারা হয়ে ভাবছে বর্তমান পেক্ষাপট থেকে বাঁচার এটাই সঠিক পথ,মুক্তির পথ। মুক্তির আশায় সাধারণ মানুষ যাদেরকে ক্ষমতায় পাঠানোর কথা ভাবছে তাদের অনেকেই এখন থেকেই দোকানে বাকী খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতায় গিয়ে পরিশোধের আশায়। তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো এখন থেকেই টেন্ডার-বাজীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ক্ষমতায় পৌঁছানোর পর দেখা যাবে বিগত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক হয়রানির প্রতিশোধ গ্রহনের মহোৎসব,যেসব রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সেই সব সাইনবোর্ড নামিয়ে নতুন সাইনবোর্ড উঠানোর ফিতাকাটা অনুষ্ঠান, লুটপাট,হত্যা,দলীয়করণ ইত্যাদি অপকর্ম। তখন আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দাবিদার আওয়ামীলীগের দেশপ্রেম উতলে উঠবে,অতীতের সমস্ত অপকর্ম ভুলে গিয়ে বি.এন.পির অপকর্ম ঠেকাতে রাস্তায় নামবে ,৭১ এর ঘাতক দালালদের বিচার কার্যকর করার জন্য আবারো আমাদের সৌখিন বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত করে মানবন্ধন করবে,দেশ বিদেশে জনমত তৈরি করবে,হরতাল করবে,রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধংস করবে। এভাবেই হয়তো আরো পাঁচটি বছর পার হয়ে যাবে,মাঝখানে বি.এন.পি ও তার শরীকদের নেতা ও সুবিধাভোগীরা লুটপাট ও অপকর্মের যতটুকু দরকার তা করে নেবে। শ্রমজীবি সাধারন মানুষ আবারো ফাঁকির মধ্যে পড়বে আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র ধীরে ধীরে মুদি দোকান হওয়ার উপক্রম হবে।আর এত সব অপকর্ম দেশের এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ নিরব দর্শকের দেখবে আর বলবে দেশ যাই হোক জামায়াত বি .এন.পি ইসলামের কথা বলছে,ইসলাম রক্ষার কাজ করছে।
দেশ বিজয়ের ৪১ বছরে পা রাখলেও এখনো স্ব-অর্থায়নে একটি পদ্মা সেতু নির্মানের যোগ্যতা অর্জন করেনি। সরকার পদ্মা সেতু নির্মানের জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে হাত পেতেছে। সাধারণ মানুষ দেশের ভালোবাসার জায়গা থেকে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছে কিন্তু দেশের এই দুর্দিনে আমাদের ক্ষমতাসীন দলগুলো কি সাধারণ মানুষের ডাকে সাড়া দিচ্ছে ? দেশ এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের সরকার কালবার্ড নির্মাণের জন্যও জনগনের কাছে হাত পাততে পারে, বর্তমানের অবস্থা থেকে রাষ্ট্র পরিণত হতে পারে মোড়ল রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। এখন প্রতিনিয়তই দেখা যায়, রাষ্ট্রের যে ধরনের দুর্যোগে আমাদের সরকারগুলো দেশের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পাতে। আমার কাছে ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক লাগে, শ্রমজীবী শ্রেনী,সাধারণ মানুষ কি ভিক্ষুক যে বিত্তবানদের অনুগ্রহ গ্রহন করবে?,তাদের কি আত্নসন্মান নেই ? বাংলার শ্রমজীবী মানুষ খেটে খাওয়া শিখেছে,চুরি করা শেখেনি,তাদের আত্নসন্মানবোধ আছে। শ্রমজীবী শ্রেনী দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছে, শ্রমজীবী শ্রেনী চায় তাদের বিপদে রাষ্ট্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে,কোনো বিত্তবানের ভিক্ষা নয়। আমাদের সরকারগুলো বিত্তবানদের কাছে হাত পাতে তাদের অধিকারের জায়গা থেকে কারন প্রতিটি সরকারই যেমন দুর্নীতি করে ব্যক্তিগত অর্থ বিত্ত বানায় এবং তাদের আত্নীয় স্বজন ও দোসরদেরকেও সুযোগ করে দেয় আরার এই হারাম টাকাকে হালাল করার জন্য প্রতিটি সরকারই বাজেট ঘোষনার সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টিও করে রাখে। এভাবে তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গরিব বানিয়ে,শ্রমজীবী শ্রেনীর রক্ত চুষে আজ অনেক বিত্তবান তৈরি করেছে। আবার বিত্তবানদের কাছ থেকে সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সাহায্যে গ্রহন করে দুর্নীতিগ্রস্থ বিত্তবানদের দেশপ্রেমিক,হৃদয়বান,দানশীল উপাধীতে সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সরকারগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকায় আমাদের দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশ প্রেমিক বলতে কুন্ঠাবোধ করেননা।
একবার গ্রামের একটি বাজারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বাজারের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো এক কৃষকের দিকে , কৃষক কাঁচা কলা বিক্রি করছে দু টাকা হালি। কৃষকের সঙ্গে তার বাচ্চা ছেলের নাক দিয়ে অনবরত সর্দি ঝড়ছে । ছেলেটি বাবার কাছে আবদার করছে ,আব্বা চপ খাবো কিন্তু কৃষক ছেলেকে সাত পাঁচ বুঝিয়ে শান্ত করে রাখছে।কৃষকের চিন্তা কলা বিক্রি করে আগে ২ কেজি চালের পয়সা জোগার করতে হবে তার পর ছেলের বায়না মেটানোর কথা ভাবতে হবে।কৃষক ঐ দিন ছেলের একটা চপের আবদার পূরন করেছে কিনা ,২কেজি চাল কিনতে পেরেছে কিনা আমি জানিনা।গল্পটা এজন্য করলাম কারন এটাই বাংলাদেশের প্রকৃত সামাজিক প্রেক্ষাপট আর কৃষকের ঐ কাঁচা কলা আমাদের অর্থনীতি। এই কৃষকের মত দেশের লাখ লাখ মানুষ আজ বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত।ঢাকার আলো ঝলমল জীবনের মাঝে আমাদের অনেক কিছুই বোধগম্য হয়ে উঠেনা।
দেশের বুদ্ধিজীবি ও বিবেকবানদের কাছে আমার প্রশ্ন দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ আর কতকাল এই সব দুর্বৃত্ত সরকারগুলোর গোলামী করবে ?যে দেশের মানুষের এখনো তিন বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার যোগ্যতা অর্জন করেনি সেই দেশের এক শ্রেনীর মানুষের গুলশান বনানীর বিলাশ বহুল জীবন আসে কোথা থেকে ?যে দেশের প্রধান মন্ত্রীকে প্রতিদিন সংবাদ পত্রের পাতায় খুনের খবর পড়ে দিনের কার্যদিবস শুরু করতে হয় সেই দেশের প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মুখ হাস্যজ্জল থাকে কিভাবে ?এখনো কি সময় আসেনি, এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির পথ খোজার ? পরিশেষে বলতে চাই,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
শুধু শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নয়,
শুধু বিশেষ দিনে আলোচনার ঝড় তোলা নয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
কোন শিশু বাংলাদেশের বুকে ঋনের বোঝা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হবেনা।
কোনো বাঙ্গালী অন্য বাঙ্গালীর বুকে আর গুলি চালাবে না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
সুশিক্ষা ও প্রযুক্তির হাত ধরে বাঙ্গালী জাতির অগ্রযাত্রায় পথে হেঁটে চলা,
জাতীয় স্বার্থে দল মত ভুলে গিয়ে এক সুরে কথা বলা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
বাংলার এক একটি ভোর বাঙ্গালীর হাসি মুখ দিয়ে শুরু হওয়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন