সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কট্টরপন্থী মনোভাব এবং দেশের চলমান প্রেক্ষাপট।


দেশের চলমান অবস্থা দেখে মাঝে মাঝে মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়সবাই যার যার স্বার্থের জন্য ধর্ম ও স্পর্শকাতর চেতনাকে ব্যাবহার করছে আর এই ফাঁকে দুর্নীতিপরায়ণদেরকে আড়াল হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছেকেউ ভাবছেনা বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিনকাল কেমন কাটছে ,সামাজিক নিরাপত্তা আজ হুমকির দোরগোড়ায় পৌঁছেছে, বিদেশী বিনিয়োগে আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে, কষ্টার্জিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো বিনষ্ট করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছেএর পেছন থেকে দেশদ্রোহীরা সবাইকে বোকা বানিয়ে হাস্যরস্য করছে

 আমরা কি একবার এভাবে ভাবতে পারিনা, এই দেশ আমাদের , ষোল কোটি মানুষ আমরা এক পরিবারের সদস্য, আমাদের সমস্যাগুলো আমরাই মেটাবো দেশের প্রচলিত আইন ,প্রশাসন ও সংসদের মাধ্যমেআমাদের প্রতিবাদ থাকবে, দাবী থাকবে, আন্দোলন সংগ্রাম সবই থাকবে কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা  হবে শিষ্টাচারপূর্ণ , কুরুচিপূর্ণ নয়যদি শ্লোগানের ভাষা এই হয়, একটা করে …………….ধর, ধরে ধরে জবাই করএই ধরনের শ্লোগান সম্বলিত আন্দোলন আর যাই হোক কখনো মুক্তির আন্দোলন হতে পারেনা বরং রাষ্ট্র ধ্বংসের আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেতে পারেআন্দোলনের নামে একটা গোষ্ঠী ফেসবুক, টুইটার,ব্লগ ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যাচার চালাচ্ছে তা দেশের জন্য ভয়াবহ আশংকাজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছেকেউ মিথ্যা তথ্য লিখে লেখার উপরে জনপ্রিয় গনমাধ্যমের লঘু সেঁটে দিয়ে প্রচার করছে,কখনো ফটোসপ ভিডিও এডিটিং করে প্রপাকান্ডা ছড়ানো হচ্ছে ,মেয়েদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে সদস্য বাড়িয়ে মিথ্যা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছেযারাই এগুলো করছে তাদেরকে আমি কখনো সংগ্রামী বলবোনা , প্রতারক বলবো কারন ভীরু কাপুষরাই সব সময় মিথ্যা ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজনেই ধর্মীয় দর্শন ,সমাজতন্ত্র ,গনতন্ত্র মনিষীদের বানী ব্যাবহার করে থাকে, আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এগুলোর বিরোধীতা করে থাকেকেউ যদি মনে করে আমিই সঠিক ও সত্য অবস্থানে আছি তাহলে আপনার সত্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেন,মিথ্যা ও ভণ্ডামির আশ্রয় কেন ? আপনার যদি মনে হয় কেউ বিপদগামী হচ্ছে তাহলে তাকে আপনার সত্য দর্শন দিয়ে বুঝিয়ে আপনার পথে আনুন,না বুঝলে কাপুরুষের মত অবুঝের গলায় ছুড়ি চালানোর চেষ্টা কেন ?

আজ ন্যায়,যুক্তি সঙ্গত ও নিজস্ব চিন্তা উপলুব্ধ মতামত প্রকাশ করলে, সেটা যদি কারো বিন্দু পরিমান বিপক্ষে চলে যায় তাহলে কেউ রাজাকার,সাগু অথবা নাস্তিক বা মুর্তাদ হয়ে যাচ্ছেযারা নিজেদেরকে প্রগতিশীল দাবী করেন তাদের আচরনে আজ প্রতিক্রিয়াশীলদের স্বভাব ফুটে উঠছে আর প্রতিক্রিয়াশীলরা আরো কট্টর রূপ ধারন করছেএই সব কট্টরপনা ও উস্কানিমুলক বাক্য দেশের মধ্যে হানাহানি খুনাখুনি বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন ভালো ফলাফল বয়ে আনবেনাযে যে পক্ষেই থাকুননা কেন আপনাদের কট্টরতার হানাহানি থেকে যদি কারো প্রাণ নাশ হয় তাহলে হয়তো লাশের কফিন ছুঁয়ে আন্দোলনকে আরো বেগবান করার শপত নেবেন,দুই দিন জোরালো শ্লোগান দেবেন,শহীদের খেতাব দেবেন। কিন্তু পারবেন, সন্তানহারা পরিবার যে ক্ষতির সম্মুখীন হলো সেই ক্ষতি পূরণ করতে ?,আপনার রাষ্ট্র কি দায়িত্ব নেবে ঐ শহীদ পরিবারের

দেশের মানুষের যখন গণমানুষের অধিকার,দুর্নীতি,বেকাত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি,সুশাসন ,সামাজিক নিরাপত্তা,সুষ্ঠ ও সঠিক বিচার ব্যবস্থা এবং ৭১ এর যুদ্ধাপরাধের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার কার্যকর ইত্যাদি বিষয়ে ফুসে ওঠার কথা তখন দেশদ্রোহী একটা মহল  নিজেদের অপকর্ম ও পাপকে ঢাকার জন্য অত্যন্ত নিখুত ও সুকৌশলে নাস্তিক ও আস্তিক নামক বায়বীয়  দুই শব্দ ডুকিয়ে দিয়ে  জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেআপনারা যারা কট্টরতা অবলম্বন করে দেশকে নিয়ে ধ্বংস লীলায় মেতে উঠেছেন,আপনাদের অনেকেই হয়তো চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে টুপাইচ কামাই করে সংসার চালাচ্ছেন আবার অনেকেরই নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থবিত্ত রযেছে তাদের হয়তো কোন সমস্যা হবেনা, কিন্তু যে গার্মেন্টস শ্রমিকে মুনাফাখোর মালিকের বীমা কোম্পানির টাকা আদায়ের জন্য আগুনে পুরে আত্নহুতি দিতে হয় , সেই সব শ্রমিকের মালিকেরা আপনাদের কট্টর আন্দোলন সংগ্রামের দোহার দিয়ে বলবে শিপ্টম্যান্ট বাতিল হয়েছে,বায়ার অর্ডার বাতিল করেছে ইত্যাদি অজুহাতে শ্রমিকের বেতন বন্ধ করে দেবে, শ্রমিক বাধ্য হয়ে সংসার চালাতে ডঃ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকের জামানত বিহীন ক্ষুদ্র ঋণ অথবা রক্তচোষা আশা সমিতির ঋণের জালে জরিয়ে হাবুডুবু খাবে, তখন কি আপনাদের খুঁজে পাওয়া যাবে এই অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে ? আমাদের চেতনা ভোতা হয়ে যায়, যখন দেখি তাজরিন গার্মেন্টসের শত শত শ্রমিককে পুরিয়ে হত্যা করা হয় যা ৭১ এর গণহত্যা তুল্যচেতনা আবার জাগ্রত হয় যখন দেখি  দলীয় স্বার্থ বা নেতানেত্রীর স্বার্থে ঘা লাগেদিন এনে দিন খাওয়া মানুষের চেতনাবোধ ও ধর্ম প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এদের কোন দল থাকেনা, এদেরকে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয় দরিদ্রতা নামক এক ভয়ংকর দানবের সাথেআপনাদের কট্টর আন্দোলন যদি এই শ্রেনীর মানুষের পেটে টান মারে তাহলে যত নীতি বাক্যই ছুড়ুননা কেন সবই ভণ্ডামিতে পরিণত হবে।  

বাংলাদেশ আজ পূঁজিপতি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষাকারী রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিণত হয়েছেমধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা আজ কল্পনাতীত ব্যাপারদেশটাকে স্বজনপ্রীতি করে গুটিকয়েক গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় অধিকার ভাগ করে নিয়েছেপ্রতিটি মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে নিজের পরিবারকে রক্ষা করার আপ্রান চেষ্টা করছেদেশের জাতীয় আয়ের বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকে বিদেশে কর্মরত বাঙলীদের দেশে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই অর্থ যেমন এক একটি পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেযারা নেপথ্যের চক্রান্তকারীদের  উস্কানীতে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে মনের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন তারা যদি একবার দেখতেন প্রবাসিরা পরিবার পরিজনের মায়ামহ ত্যাগ করে কত কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে দেশের জন্য অবদান রেখে চলছে ,তাহলে হয়তো একটুর জন্য হলেও আপনাদের উগ্র চেতনাবোধে বসন্তের হাওয়া লাগতো

দেশের চলমান বিশৃঙ্খলার কারণে আজ সরকার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনীর হাতে বিনা দোষে সন্দেহাতীত ভাবে অনের সাধারণ মানুষকে গ্রেপতারের স্বীকার হয়ে পুলিশী নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছেএর ফলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের দৈনন্দিন আয় বন্ধ হয়েগিয়েছে ,কিভাবে কাটছে এই হতভাগা পরিবারগুলোর দিনকালএকবারও এদের বিপদের কথা ভেবে এদের পাশে দাড়াচ্ছেন আপনারা ?

যেসব মস্তিস্ক বিকৃত ও বিদেশী মদতপুষ্ট লেখক মতপ্রকাশের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেশের দীর্ঘ দিনের সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরানো এবং সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে এবং যারা ধর্মীয় অনুভূতিকে পূঁজি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এদের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে সামাজিক ঐক্যবদ্ধ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে। 

কোন উগ্রতার মধ্যেই দেশপ্রেম থাকতে পারেনা, থাকে মানসিক তৃপ্তি এবং আর্থিক ও ব্যক্তিস্বার্থদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ প্রেমিক তারাই, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে একটি মজবুদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ভীত গড়ার স্বপ্নে নিরলশ কাজ করে চলছে এবং যারা দেশ ধংসকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিদিন কলম হাতে,শ্লোগানে প্রতিরোধ প্রতিবাদ অব্যহত রেখে চলছে

পরিশেষে বলতে চাই, ধর্মীয় বা যে কোন চেতনা রক্ষার আন্দোলনই আমরা করিনা কেন, প্রতিটি আন্দোলনে কট্টরতা এবং উস্কানিমূলক শব্দ পরিহার করি, স্বাধীন সার্বভৌম দেশে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা কোন সভ্য জাতির কাম্য নয়, হিংসা নয় ভালোবাসার  দিয়ে জয় করি সমস্ত মিথ্যা এবং অন্যায়কেউন্নত বিশ্ব যখন ক্ষুধা এবং দরিদ্রতাকে  জয়ের আন্দোলনে মগ্ন তখন আমরা কেন হিংসা বিদ্বেষে মত্ত হয়ে লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রতিদিন কালিমা লেপে দিচ্ছি ?     






শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

প্রগতিশীল সাংবাদিক এবং ব্লগাররাই বিপ্লবের অন্যতম শক্তি।

দেশ যখন অপরাজনীতির করালগ্রাসে আক্রান্ত , সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় যখন চূরান্ত শিখরে, নিঃপেষিত,সাধারণ মানুষ মুক্তির খোজে দিশেহারা, ধোকাবাজি রাজনীতির উপর আস্থাহীনতা, ঠিক তখনি জাতীকে মুক্তির পথ দেখাতে এক ঝাঁক নীতিবান ও গনমানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার প্রগতিশীল সাংবাদিক ও ব্লগার কলম হাতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অব্যহত রেখে চলছে।

বাংলাদেশের বিবেকবান নাগরিকদের মধ্যে এখন একটা উপলব্ধি দারুন ভাবে নাড়া দিচ্ছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তৃতীয় একটা শুভ শক্তির আবির্ভাব। বাংলাদেশের তৃতীয় শক্তি হিসেবে যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান রাজনৈতিক দল দুটির অপকর্মের জন্য চাপ সৃষ্টি করতো,সমালোচনা করতো,রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যার ব্যাপারে ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে প্রতিবাদমূখর হয়ে রাজপথ ব্যস্ত রাখতো এদের অধিকাংশই আজ পক্ষপাতদুষ্ট রোগে আক্রান্ত। এরা এখন রাজনৈতিক কৌশল নামক এক ছলাকলা বুঝ দিয়ে আওয়ামীলীগ ও বি .এন.পির ক্ষমতার তাবেদারি রাজনীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং সুবিধার ছিটেফোঁটা নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি ও সুনাগরিক আজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দেশের রাজনীতি আজ এমনভাবে হাঙ্গর কুমির দ্বারা গ্রাসিত যে সুস্থ মানুষিকতা নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা অনেক কঠিন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনীতিতে এখন দুটি জিনিস অপরিহার্য্য হয়ে পড়েছে : প্রথমত রাজনীতি থেকে অপরাজনীতির ভাইরাস আক্রান্ত রাজনীতিবিদদের ছেঁটে ফেলতে হবে। আর এই দায়িত্ব সাধারন মানুষের হাতে এবং এজন্য দরকার সাধারন মানষকে রাজনৈতিক ও অধিকার সচেতন করে তোলা। 

দ্বিতিয়ত রাজনীতির গুনগত মান উন্নয়ন করতে হবে। আর এজন্য দরকার রাজনীতিবিদদের গঠনমুলক আলোচনা সমালোচনার , উন্নত বিশ্বের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ,পর্যালোচনা এবং প্রয়োগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা। আর এই ব্যাপারগুলো আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একেবারেই পরিলক্ষিত হচ্ছেনা , যা বোঝা যায় তাদের রাজনৈতিক পরিপন্থি বক্তব্য এবং মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা অদ্ভুদ ও বেকুব মার্কা মন্তব্য দেখে। আর নতুন করে যারা রাজনীতি যুক্ত হচ্ছে তাদেরকে গঠনমুলক রাজনৈতিক চর্চা ও গুনগত মানসম্পর্ণ নেতৃত্ব তৈরীর বিশেষ কোন পদক্ষেপ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা মূল দলগুলোর মধ্যে নেই। নতুনদের ময়না পাখির মতো শেখানো হয় নিজের দলের নেতাদের গুনকীত্তন করা এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উপর হিংসাত্বক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া। এর মধ্যেই তাদের রাজনীতি সীমাবদ্ধ। আর এভাবে চলতে থাকলে বাঙ্গালী এক সময় মাথা মোটা লাঠিয়াল জাতীতে পরিণত হওয়ার যতেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।

মেধা ও প্রযুক্তি ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা ছিলো তা বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একেবারেই পরিলক্ষিত হয়না। দেশের এমন পরিস্থিতিতে একটি সুস্থ রাজনীতির ধারা এবং উন্নত মানুষীকতা সম্পর্ণ জাতি ও সমাজ গঠনের তাগিদ অনুভব করে নবরুপে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে দেশের প্রগতিশীল সাংবাদিক ও ব্লগারবৃন্দ। শুধু তাই নয় , নীতিবর্জিত রাজনীতিবিদ ,খুসখোর আমলা ,রক্তচোষা মুনাফা ভোগী ব্যবসায়িদের যে কোন ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধেও এখন অন্যদের চেয়ে বেশী তৎপর ও সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে সাংবাদিক ও ব্লগারবৃন্দ।

এর একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীর আজকের অবস্থান , যার অধিকাংশ কৃতিত্বই সাংবাদিক ও ব্লগারদের। বর্তমান ক্ষমতাশীন আওয়ামী সরকার এই স্পর্শকাতর বিষয়টি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গ্রহন করে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করলেও প্রগতিশীল সাংবাদিক ও ব্লগাররা বিভিন্ন বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও পরিবেশন এবং গবেষনা ও বিশ্লেষনধর্মী লেখনীর মাধ্যমে সংবাদপত্র,ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও ব্লগের ময়দান প্রতিনিয়ত সরগরম রেখে জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এবং সরকারকে দাবী বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃ্ষ্টি করে চলেছে। যা রনাঙ্গনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তরোবারি চালানোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

আজ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে শাহবাগ স্কয়ার থেকে যে শ্লোগান পৌছে যাচ্ছে সাড়া দেশে ,এই শ্লোগান শুধু যুদ্ধাপরাধীর ও ঘাতক দালালদের ফাঁসী দাবী হিসেবেই দেখছিনা,এই শ্লোগান দেশ প্রেমিকের খোলশ লাগানো জাতীর নব্য রাজাকার ও আলবদর ঘাটিতে প্রথম আঘাত হিসেবেও দেখছি। এই অভিযানকে যারা তিলে তিলে সংগঠিত করে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে তারা কোন প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা বিনিময়ে কাজ করেনি কিংবা কোন সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়ে কাজ করেনি। এরা দেশের নতুন প্রজন্ম,এরা দেশের মাটি এবং মানুষকে ভালোবাসে,এরা দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে হৃদয়ে লালন করে সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে দাড়াতে প্রস্তুত, আর তাইতো তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের গৃহিনী থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিশুটি পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজপথে নেমে এসে একাত্বতা ঘোষনা করেছে এবং কোন রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান এই আন্দোলন থেকে ফয়দা লুটতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থানে থেকে সরকার দলীয় মন্ত্রীদের লক্ষ্য করে বোতল ছুরে বুঝিয়ে দিয়েছে জনসাধারনের হাটটিমাটিম টিম ছড়া শেখানোর দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাছাড়া এদেরকে আরো বুঝিয়ে দিয়েছে কোন সহিংসতা ছাড়া কিভাবে দাবী আদায় করতে হয় এবং কিভাবে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে হয়,ভালোবাসা পেতে হয়, গনমানুষের চাওয়াকে কিভাবে মূল্যায়ন করতে হয়।

সাগর রুনী হত্যার বিচারের দাবীতে সাংবাদিক সমাজ দল মত নির্বিশেষে একাত্বতার সহিদ যে আন্দোলন করছে তাও জাতীর এক মঙ্গল বার্তা বহন করছে। 

শুধু যুদ্ধাপরাধ ইস্যুই নয় দেশের চলমান পদ্মা সেতু দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেংকারি,হলমার্ক কেলেংকারি,সাগর রুনী হত্যাকান্ড, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড ইত্যাদি সংবেদনশীল বিষয়গুলোতেও থেমে থাকেনি সাংবাদিক ও ব্লগারা, ঘটনার নেপথ্যে পৌছে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষনের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে ভন্ড রাজনীতির মুখস খুলে দিয়েছে। আর এই অভিযান অব্যহত রাখতে গিয়ে বিগত চার বছরে ১৩ জন সাংবাদিকে প্রান দিতে হয়েছে এবং ৫০০ শতাধিক সাংবাদিকসহ অসংখ্য ব্লগারকে শারীরিক নির্যাতন ও নানামুখী হয়রানীর স্বীকার হতে হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় অনিয়মের প্রতিবাদের পাশাপাশী সামাজিক অবক্ষয় রোধে সাংবাদিক ও ব্লগারদের নানামূখী পদক্ষেপ দেশ প্রেমিক হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছে। ধর্ষন,ইফটিজিং,এসিড সন্ত্রাস,মাদক এর মত ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা রোধে লেখালেখির পাশাপাশী মানব বন্ধন,ব্যানার,ফেষ্টুন সহ নানামূখী ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের ম্যাধ্যমে সচেতনতার সৃষ্টি করে সামাজিক বিপ্লবের পথ ত্বরান্নিত করছে। সেই সাথে দেশের শীতার্থ ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশী নুন্যতম সামর্থ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে।

গনমানুষের অধিকার আদায় ও পরিসুদ্ধ দেশ গড়ার যে স্বপ্ন হৃদয়ে ধারন করে সাংবাদিক ও ব্লগাররা জাতীকে আজ উজ্জিবিত করছে তা একদিন অবশ্যই সফলতায় পর্যভূষিত হবে। ফরাসী বিপ্লবের কথাই ধরুন, এই বিপ্লবের বীজ রোপিত হয়েছিলো লেখনীর মাধ্যমেই, তৎকালীন বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক ও সমাজ চিন্তাবিদ রুশো,ভোলতেয়ার,সাত্রে তাদের লেখায় তৎকালীন সামাজিক বৈশম্য, গীর্জার শাসকদের দৌরাত্ব ও প্রতাব,গনমানুষের নায্য অধিকার, করের টাকায় রাজাদের বিলাসী জীবন যাপন,অনিয়ম,দুর্ণীতি ইত্যাদি বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উঠে আসে। যা খেটে খাওয়া, অধিকার বঞ্চিত ফরাসীদের মধ্যে অধিকার সচেতন ও সমাজ সচেতনতার সৃ্ষ্টি করে এবং এই সচেতনতাই ধীরে ধীরে ফরাসীদের মধ্যে অগ্নীস্ফুলিঙ্গের রুপ ধারন করে যা পরবর্তিতে দাবানলের মত সমস্ত ফ্রান্সকে দাহন করে। যার ফলাফল স্বরুপ অসংখ্য প্রানের আত্নহুতি বিনিময়ে ফ্রান্সের আজকের এই প্রজাতন্ত্র এবং অসাধারণ এক মানবাধিকার রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বেঁচে থাকার নূন্যতম অধিকার সুনিশ্চিৎ হয়েছে। 

যেসব সাংবাদিক ও ব্লগার দেশকে ভালোবেসে সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন মেধা ও শ্রম ঢেলে দিচ্ছেন তাদেরকে বিপ্লবী সালাম ও পূর্ণ সমর্থন। আর যারা এখনো সুবিধাভোগী রাজনীতির পক্ষপাতিত্ব করে সুবিধাভোগীদের অবস্থান সুদৃড় করার নেশায় মত্ত আছেন তাদের প্রতি আহবান আসুন আজকের এই গনজোয়ারের মিছিলে সামিল হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনকে বেগবান করি এবং গনমানুষের অধিকার সুনিশ্চৎ দেশ গড়ি।

সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

প্যারিস ভ্রমণসূচীতে এক দিনের জন্য রাখুন Maison du parc, La courneuve

আর কিছু দিন পরেই ফ্রান্সের প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া লাগবে। পুষ্প পল্লবে ভরে উঠবে প্রকৃতির চারিধার । ঝড়া প্রকৃতি পাবে নতুন এক প্রানশক্তি। প্রকৃতি চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্যের ডালী সাজিয়ে সৌন্দর্য্য পিপাসুদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রতিক্ষা করবে।প্রকৃতির এহেন উৎসবকে আরো নান্দনিক ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন মেরী সংস্থাগুলো (সিটি কর্পোরেশন) নানাবিধ পদক্ষেপ হাতে নেবে। ফলে আপনি যেদিকেই তাকাবেন আপনার সৌন্দর্য্য অবগাহনের ক্ষুধা আরো বেড়ে যাবে। এই সময় যারা প্যারিস ভ্রমনে আসবেন তারা হয়তো অবশ্যই আইফেল টাওযার,লুভ্রর জাদুঘর,ভার্সাই রাজার বাড়ী ইত্যাদি নিদর্শন পরিদর্শন করবেন। শিল্পীর ইট,পাথর আর লোহার তৈরী শিল্পকলার মাঝে ঘুরতে ঘুরতে যখন একটু হাঁপিয়ে উঠবেন তখন ভ্রমন পিপাসু হৃদয়ে নতুন করে প্রানের সঞ্চারের জন্য একটি দিনের জন্য Maison du parc এ ঘুরে আসতে পারেন।

পার্কের সুবিস্তৃত অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই আপনি পেয়ে যাবেন দুর্বা ঘাসে ঢাকা প্রশস্ত মাঠ। ইচ্ছে করলে এখানে ভ্রমন সঙ্গীদের সাথে একটু দৌড়া দৌড়ি,খেলাধুলা করতে পারেন। দেহের ক্লান্তি দুর করা জন্য মাঠের পাশেই লেকের নিলাভ জলের পাশে বসে একটু জিরিয়ে নিতে পারবেন। লেকের বিভিন্ন প্রজাতির বনহাঁস,পানকৌরীর মুক্ত বিচরণ আপনাকে মুগ্ধতা এনে দেবে। কখনো ঝাঁক বেধে অবাক বিস্ময়ে আপনার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাবে রাজহাঁসের দল। বনের উচু নিচু টিলার মধ্যে দিয়ে হাটতে হাটতে দারুন এক এ্যাডভেঞ্চারে রোমাঞ্চিত হবে আপনার ছিন্নবাঁধা মন। যখন ক্লান্তি ছেয়ে ধরবে আপনাকে তখন আশে পাশে তাকালেই দেখবেন কোথাও আপনার জন্য ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে বানিয়ে রাখা হয়েছে সুসজ্জিত চেয়ার টেবিল। ইচ্ছে হলে এক নির্ঝুম নিরবতায় মধ্যে কাটাতে পারবেন কিছু সময়। কখনো খরগোসের দল আপনাকে দেখে বনের ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে লুকানোর দৃশ্য আপনাকে দারুন শিহরণ জাগাবে, আর বনের মাঝে মাঝে সুসজ্জিত ফুলের বাগানগুলোতে ফুটে থাকা বাহারি রং ও প্রজাতির ফুলগুলোর দিকে বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আপনার কোন উপায়ই থাকবেনা।

এই পার্কটি ৪১৫ হেক্টর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন ভ্রমনার্থী এই পার্কটি পরিদর্শনে আসে এবং পরিদর্শনের জন্য কোন প্রকার প্রবেশ মূল্য প্রদান করতে হয়না।

পার্কটির মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট, জলখাবার এবং মিষ্টান্ন জাতিয় খাবারের ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, পিংপং টেবিল,পথ নির্দেশক প্রদর্শনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্যারিসের বিভিন্ন স্থান থেকে আপনি এখানে আসতে পারেন :
RER: RER বি Orly – প্যারিস – চার্লস দে Gaulle কেন্দ্র Aubervilliers – লা Courneuve তারপর বাস লাইন 249, স্টপেজ সিতে ফ্লরিয়েল।
বাস: লাইন 249: PORTE দে লা Villette (মেট্রো) / Dugny – শহরের মিল অফ কবরস্থান।
লাইন 250: ফোর্ট d’Aubervilliers (মেট্রো) / Gonesse – লা ফন্ট. Cypière – Zi স্টপ ক্রিড়া পার্ক।

পার্কটি খোলা থাকে: January-February: 7h30-18h00. March: 7:30 a.m. to 7:00 p.m., April: 7:30 a.m. to 8:30 p.m., May to August: 7:00 a.m. to 9:00 p.m. September: 7:30 a.m. to 8:00 p.m., October: 7:30 a.m. to 7:00 p.m., November-December: 7:30 a.m. to 6:00 p.m.
আপনাকে Maison du parc,La courneuve এর সৌন্দর্য্য উপভোগের আমন্ত্রন রইলো। 
ফটোগ্রাফি: মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ উজ্জ্বল"