রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলা অভিধান থেকে পরিবর্তন হতে পারে মহামান্য ও মাননীয় শব্দের অর্থ

বাংলা ভাষায় মহামান্য ও মাননীয় শব্দ দুটির সাথে গভীর শ্রদ্ধা সম্মান অন্তর্নিহিত।রাষ্ট্র বা সমাজের বিশেষ মানুষ বা ব্যক্তি বিশেষদের ক্ষেত্রেই শুধু এই শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়। যারা মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজেকে আত্নত্যাগ করে থাকে, গণমানুষের মুক্তির জন্য প্রাণপন লড়াই করে নেতৃত্বের  বিশেষ আসনে অধিষ্ঠিত হয় ,কেবল তাদের নামের পূর্বেই মহামান্য বা মাননীয়  শব্দদ্বয়  জুড়ে দিয়ে তার প্রাপ্য সম্মান  প্রদর্শন করা হয়। আমরাও ভুল করিনি এই শব্দ দুটির যথার্থ  ব্যবহারের ক্ষেত্রে। যাদের আত্নত্যাগে আজকের এই বাংলাদেশ সেই এ কে ফজলুল হক , মাওলানা  আবদুল  হামিদ খাঁন ভাসানী , হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী , বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এই নামগুলোর সাথে আপনা আপনিই মহামান্য ও মাননীয় শব্দগুলো বসে যায় গভীর শ্রদ্ধাভরে।স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ৪২ বছরের রাজনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন রাজনীতি বলতে মুক্তির সংগ্রাম বোঝায় না। এখন রাজনীতি হলো, সমাজের দুর্নীতিবাজ, চোর,দুস্কৃতিকারী,কালোবাজারীদের মহামান্য ও মাননীয় বানানোর ফ্যাক্টরী, রাজনীতি হলো প্রাইভেট লিঃ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং জল্লাদ তৈরির কারখানা। রাজনীতিকে বানিজ্যে মেরুকরণ করার ফলে, এখন বাংলাদেশে রাজনীতির বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা মূলক বাজার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।  বাজার ধরে রাখার জন্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবলম্বন করছে নানাবিধ মার্কেটিং পলেছি। রাজনীতি শিল্পের ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে এই শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেমন রকমারি বোমা তৈরি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবারহ প্রতিষ্ঠান , আইন শৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত ফাইটার সরবারহ প্রতিষ্ঠান,দেশের অবকাঠামো দক্ষতার সহিত ধ্বংসের জন্য কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , রাজনৈতিক পন্যের গুনগতমান (যেমন , খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান,চিকিৎসা,শিক্ষা সুনিশ্চিত করণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরে ঘরে চাকুরীর সুযোগ ইত্যাদি) জনগনের নিকট তুলে ধরার জন্য ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, হয়তো এরই মধ্যে প্রস্তুতি চলছে টক শো তারকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার, কারণ সামনের রাজনীতির বাজারে ব্যাপক টক শো তারকার চাহিদা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানের রাজনীতি ব্যবসায় উল্লেখিত বিষয়গুলো সংযোজনের ফলে ব্যবসায় অধিক মূলধন বিনিযোগের আধিক্য দেখা দিয়েছে। যার ফলে মূলধন সরবারহের জন্য দেশের  প্রধান রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিত্তহীন মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী সংগ্রহের পরিবর্তে বিত্তবান দুর্নীতিবাজ, চোর,দুস্কৃতিকারী,কালোবাজারী সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমানে গার্মেন্টস ব্যবসা,শেয়ার ব্যবসা,ব্যাংকিং ব্যবসা মন্দা থাকায় অনেক বিনিযোগকারী এখন রাজনীতি ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়েছেন। কিছু দিন পর পরই অনুমোদন পাচ্ছে নতুন নতুন রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর অনুমোদনের সাথে সাথেই রমরমা বাজারে পড়ে থাকছেনা কেউই। প্রধান রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অঙ্কের টাকা,সংসদের আসন বন্টন,মন্ত্রিত্ব ভাগাভাগী চুক্তিতে কিনে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও সদ্য গজানো  রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার।এছাড়া মহামান্য ও মাননীয় হওয়ার এত সহজ ডিসকাউন্ট দেশের প্রধান প্রধান রাজনীতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোপূর্বে কখনো দেয়নি।এই সুযোগ যথাযত ভাবে কাজে লাগাতে  অনেক দুর্নীতিবাজ, চোর,দুস্কৃতিকারী,কালোবাজারী পূর্বের উপাধী মুছে  মাননীয় সাংসদ ,মহামান্য মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিকে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার লিজ বা কন্ট্রাক্ট পেয়ে গেলেই  লগ্নিকৃত অর্থ ফেরতসহ,সম্পদ চারশত থেকে পাঁচশত গুন করার নিশ্চিত সুযোগ অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যেই আশার সঞ্চার করেছে। ইতোমধ্যেই গত সংসদ নির্বাচনে অর্থলগ্নী করে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অনেক মাননীয় ও মহামান্য ব্যক্তিবর্গ। এই অভাবনীয় সাফল্যের ফলে বাংলাদেশে এই রাজনীতি শিল্পের সুদৃঢ় ভাবে বিকাশের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।


ইতিহাসে অনেক শব্দের অর্থ অনেক অর্থবহ ও মহিমান্বিত হলেও পরবর্তিতে কর্মপ্রক্রিয়ার ফলে ঘৃণিত হয়েছে। রাজাকার শব্দের অর্থ যত অর্থবহই হোক না কেন , বাঙলার মানুষ সব সমই এই শব্দ দ্বারা ঘৃনা প্রকাশ করবে। তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতি বানিজ্যিকরণ করার ফলে চলমান প্রক্রিয়ায় যেভাবে মহামান্য ও মাননীয় বানানোর মহাৎসব শুরু হয়েছে তাতে এই শ্রদ্ধামিশ্রিত শব্দ দুটির অর্থ বাঙলার মানুষের কাছে ভিন্নতায় রুপ নিতে পারে , অদূর ভবিষ্যতে অভিধান থেকে পরিবর্তন হতে পারে শব্দ দুটির অর্থ। তাই বাংলা ভাষার এই অমূল্য শব্দ দুটির অর্থ অপরিবর্তিত রাখার ব্যাপারে এখনি আমাদের সজাগ ও সচেতন হওয়া উচিত নয় কি ?

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

সংখ্যালঘু দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র

সারা পৃথিবীর মুসলীম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলো যখন যুদ্ধ, দাঙ্গা,হাঙ্গামায় জর্জরিত এবং বিশ্ব মিডিয়া ও পশ্চিমা অবিভাবকদের কূটনৈতিক চিন্তায় শরীর ঘামে ভেজা। তখন বাংলাদেশ নামের একটি দেশ যেখানে শতকরা ৮৫ জন মুসলিমের বসবাসের দেশ হওয়ার সত্বেও এই ভূখন্ডে প্রবাহিত হতে থাকে শান্তির সুবাতাস, চলতে থাকে সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অঘোষিত প্রতিযোগিতা। মুষ্টিমেয় মৌলবাদী গোষ্টীর যে তৎপরতা তাও সরকারের নিয়ন্ত্রনে।১৯৪৭,৭১ এ দেশ বিভক্তি সময়কালে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পর্কের যে বিভাজন ও অবনতি হয়েছিলো তা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষের সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে একটি বিশেষ অবস্থানে পৌছুতেও সক্ষম হয়েছে। তার পরেও কিছু নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটেছে। এর মধ্যে একটি মুসলিম পরিবারের সঙ্গে অন্য মুসলিম পরিবারের যে সংঘাত হয়েছে তা স্বাভাবিক ভাবেই দেখা হয়েছে। আবার যখন, একটি মুসলিম পরিবারের সাথে অন্য ধর্মাম্বলি পরিবারের যে সংঘাত হয়েছে, তখন তা যথাযত বিচার প্রক্রিয়ায় না এনে কিছু স্বার্থানেষী রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু নির্যাতন নাম দিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লুটার চেষ্টা করেছে। এধরনের ঘটনা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় নগন্য। দেশে সামাজিক যে স্থিতিশীলতা তৈরী হয়েছিলো তা সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ন্য সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই। আমাদের দেশটা দুইটা শ্রেণীতে বিভক্ত । একটা শ্রেনী স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী শ্রেনী, অন্যটি দেশ প্রেমিক সাধারণ জনতা। স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী শ্রেনীর মানুষ মুষ্টিমেয় হলেও এরা অর্থ বিত্ত ও সামাজিক ভাবে প্রভাবশালী। দেশের নিয়ন্ত্রনও তাদের হাতেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা এদের জন্যই বরাদ্দ। এরা অর্থ ও প্রভাবের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পাঁচ বছর পর পর দেশটাকে ইজারা নিয়ে থাকে। তাই, অর্থের বিনিময় ছাড়া এদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাও করেনা। তাই দেশ প্রেমিক সাধারণ জনতা ভাগ্যের এই দুষ্ট পরিহাস মেনে নিয়েই গড়ে তুলেছে নিজস্ব এক সামাজিক বলয়। এক একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজ যেনো এক একটি আদর্শ রাষ্ট্রের মতো। সামাজিক সমস্যাগুলো সামাজিক ভাবেই নিষ্পন্ন করার এক দারুন সংস্কৃতিও তৈরী হয়েছিলো। আমাদের এই শ্রেনীর মানুষের মধ্যে রয়েছে পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি, জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি পরম শ্রদ্ধা, জীবন যুদ্ধে নিজেদের টিকিয়ে রাখার আপ্রান প্রচেষ্টা।এদের চাহিদার সীমারেখাও সীমিত। এর মধ্যে দিয়েই পরিচালিত হচ্ছিল বাংলাদেশ নামের আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিটি। আমাদের সমস্ত মৌলিক অধিকার লুন্ঠনের পর, বেঁচে থাকার সর্বশেষ পূঁজি সামাজিক সৌহার্দ্য ও ধর্মীয় পবিত্র অনুভূতিটুকুর মধ্যে আজ ওদের নোংড়া হাত ডুকিয়ে দিয়ে লুটপাটের অভিযানে সহায়তার জন্য জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে। আজ কেন যেন মনে হচ্ছে সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশপ্রেমিক জনতা সংখ্যালঘু দুষ্কৃতিকারী স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী শ্রেনীর কাছেই পরাজিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাট,সীমাহীন দুর্নীতি,দিনের পর দিন বিত্তহীন ও বিত্তবান বৃদ্ধির যে প্রতিযোগিতা চলছিলো, তা সাধারণ মানুষ যখন বুঝতে শুরু করলো, কথা বলতে শুরু করলো,সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করল, ঠিক সেই সময় ওরা জাতিকে বিভক্তির অস্ত্রটি ব্যবহার করে দিয়েছে। ওরা হয়তো বুঝতে পেরেছিলো, সংখ্যা গরিষ্ঠ জনতার আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। আজ ওদের ষড়যন্ত্রের ধোকায় পড়ে আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধংসের লীলায় মেতে উঠেছি ,নির্দ্বিধায় এক বাংলাদেশী ভাই আর এক বাংলাদেশী ভাইয়ের হত্যার হলি খেলায় মেতে উঠেছি। আজ এক পক্ষ অন্য পক্ষের হত্যাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি । এই হত্যা লীলার যে বীজ ওরা সমাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে তা এখনি সামাজিক ভাবে বিনষ্টের উদ্যেগ না নিলে এবং সচেতন নাহলে আগামীতে হয়তো কোন পক্ষেরই অপমৃত্যুর হাত থেকে রেহাই মিলবেনা।চক্রান্তকারীরা বিদেশে অবস্থান করবে, ভোগ বিলাসেরও কোন কমতি থাকবেনা কিন্তু আমার আপনার এই দেশেই অবস্থান করতে হবে, এই সমাজ থেকেই রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে হবে।সেই সমাজের স্থিতিশীলতায় চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষার এখনি প্রকৃত সময় । বাংলার যে মুক্ত বাতাস থেকে প্রতিদিন আমরা সঞ্চিবনী শক্তি লাভ করি ,সেই বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়ানোর যে পায়তারা চলছে তা এখনি রুখে না দিলে ……..দেশ হয়তো ইরাক,আফগান, সিরিয়া বা আর একটি মিসরে পরিনত হতে বেশী সময় লাগবেনা।…..