প্যারিসে এসেছি প্রায় তিন বছর আগে। আসার পর আড়াই বছর ছিলাম বাঙালি পরিমণ্ডলে। এখন ছিতে নটর ডেম-নিয়ন্ত্রিত একটি হোস্টেলে উঠেছি। বাঙালি পরিমণ্ডলে থাকার সময় কখনো বুঝতে পারিনি, আমি প্রবাসে আছি। বাংলাদেশি খাবার, বাংলা ভাষা, বাঙালির মমতা আমাকে ভুলিয়ে রেখেছিল প্রবাসের কষ্ট।
নতুন জায়গায় আমরা পাঁচজন মাত্র বাঙালি। বাকি সবাই ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের। আমার রুমমেট একজন আফ্রিকান। নাম ছেরগি। সাবেক ফ্রেঞ্চ কলোনির মানুষ হওয়ায় সুযোগ পেলেই মন খুলে ফ্রেঞ্চ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে থাকে। ছেরগির কথা না বুঝলেও বোঝার ভান করে রুমে ওর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়।
হোস্টেলের নিচতলার ক্যানটিন। খাওয়ার সময় আমরা বাঙালিরা এক টেবিলে বসার চেষ্টা করি। তখন আমাদের মধ্যে নিজ ভাষায় আলাপ হয়। খেতে খেতে আড্ডা দিই। আমাদের আড্ডায় যোগ দেয় একজন পাকিস্তানি। কিন্তু সে বাংলা বোঝে না। আড্ডায় নীরব থাকে। গায়ের রঙের কারণেই সে আমাদের টেবিলে বসে। তার সুবিধার্থে মাঝেমধ্যে আমরা ইংরেজি বলি।
ভাত-মাছে অভ্যস্ত আমাদের প্রথম প্রথম ফরাসি খাবারে সমস্যা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আমরা মানিয়ে নিয়েছি। এখানে আমাদের অবসর সময়ের অনেকটাই কাটে বই পড়ে। মাঝেমধ্যে রাতের খাবার খেয়ে যাই প্যারিসের বুক চিরে বয়ে চলা সেন নদীর তীরে।
নদীর ওপর শিল্পের ছোঁয়া লাগানো কারুকার্যময় প্রশস্ত সেতু। এই সেতুর ওপর দাঁড়ালে অন্য রকম এক মুগ্ধতায় দেহ-মন ভরে যায়। সেতুর ওপর নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলোর আলোর দ্যুতি এবং মাঝেমধ্যে জোনাকির মতো মিটিমিটি আলো ছড়িয়ে প্রমোদতরির ভেসে চলার দৃশ্য এক ভিন্ন রকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। রাতের প্যারিসের এই সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। রাতের এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়!
আমি যে এলাকার কথা বর্ণনা করছি, সে এলাকার নাম আনভালিদ। এর পাশেই ভাস্কর্যসংবলিত চার স্তম্ভবিশিষ্ট দণ্ডায়মান সেতুটিকে মনে হয়, কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করছে। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে চোখের দৃষ্টির দিক পরিবর্তন করলে দৃষ্টিতে ধরা দেবে সোনালি আলোয় উদ্ভাসিত প্যারিসের সব স্থাপনার উচ্চতা ভেদ করে শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আইফেল টাওয়ার। সবুজ দূর্বা ঘাসে ঢাকা বিরাট মাঠ পেরিয়ে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সমাধি (আর্মি মিউজিয়াম) ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক পার্লামেন্ট ভবন।
আশপাশে একটু হাঁটলেই চোখে পড়ে
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট দ্য গ্যলের ভাস্কর্য,
ঐতিহাসিক প্যালেস দ্য কনকর্ড, প্যারিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাভিনিউ দ্য সনজোলজি ছাড়াও অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুগ্ধ হতে হয় বৃক্ষশোভিত নীরব ও মৃদু কোলাহলপূর্ণ প্রকৃতির আপন আতিথেয়তায়।
মাঝেমধ্যে আমি ছবি তোলার নেশায় ক্যামেরা হাতে সৌন্দর্য শিকারে ঘুরি-ফিরি বর্ণনাস্থলে। ক্যামেরায় প্যারিসের মনোলোভা সৌন্দর্যের ছবি তোলার সময় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। চোখে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের রাতের মায়াভরা রূপ ও চন্দ্রিমা উদ্যানের পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্য। খুঁজে ফিরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার প্রিয় রাতের ফুলার রোডের সুখস্মৃতিমাখা দিনগুলো। যে সৌন্দর্যগুলো কখনোই ক্যামেরাবন্দী করা হয়নি আমার।
প্রবাসের চাকচিক্য রূপ-প্রকতির মধ্যেও বুকের এক কোণে আমার প্রিয় মাতৃভূমির একখণ্ড ছবি প্রতিনিয়ত বয়ে নিয়েই কাটে আমার প্রাত্যহিক দিনপঞ্জি। প্রতীক্ষার প্রহর গুনি, কবে ফিরে যাব আমার মাতৃভূমির বুকে। আবার নয়ন জুড়াব দেশমাতার রূপলাবণ্যে।
হোস্টেলের নিচতলার ক্যানটিন। খাওয়ার সময় আমরা বাঙালিরা এক টেবিলে বসার চেষ্টা করি। তখন আমাদের মধ্যে নিজ ভাষায় আলাপ হয়। খেতে খেতে আড্ডা দিই। আমাদের আড্ডায় যোগ দেয় একজন পাকিস্তানি। কিন্তু সে বাংলা বোঝে না। আড্ডায় নীরব থাকে। গায়ের রঙের কারণেই সে আমাদের টেবিলে বসে। তার সুবিধার্থে মাঝেমধ্যে আমরা ইংরেজি বলি।
ভাত-মাছে অভ্যস্ত আমাদের প্রথম প্রথম ফরাসি খাবারে সমস্যা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আমরা মানিয়ে নিয়েছি। এখানে আমাদের অবসর সময়ের অনেকটাই কাটে বই পড়ে। মাঝেমধ্যে রাতের খাবার খেয়ে যাই প্যারিসের বুক চিরে বয়ে চলা সেন নদীর তীরে।
নদীর ওপর শিল্পের ছোঁয়া লাগানো কারুকার্যময় প্রশস্ত সেতু। এই সেতুর ওপর দাঁড়ালে অন্য রকম এক মুগ্ধতায় দেহ-মন ভরে যায়। সেতুর ওপর নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলোর আলোর দ্যুতি এবং মাঝেমধ্যে জোনাকির মতো মিটিমিটি আলো ছড়িয়ে প্রমোদতরির ভেসে চলার দৃশ্য এক ভিন্ন রকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। রাতের প্যারিসের এই সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। রাতের এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়!
আমি যে এলাকার কথা বর্ণনা করছি, সে এলাকার নাম আনভালিদ। এর পাশেই ভাস্কর্যসংবলিত চার স্তম্ভবিশিষ্ট দণ্ডায়মান সেতুটিকে মনে হয়, কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করছে। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে চোখের দৃষ্টির দিক পরিবর্তন করলে দৃষ্টিতে ধরা দেবে সোনালি আলোয় উদ্ভাসিত প্যারিসের সব স্থাপনার উচ্চতা ভেদ করে শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আইফেল টাওয়ার। সবুজ দূর্বা ঘাসে ঢাকা বিরাট মাঠ পেরিয়ে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সমাধি (আর্মি মিউজিয়াম) ও ফ্রান্সের ঐতিহাসিক পার্লামেন্ট ভবন।
আশপাশে একটু হাঁটলেই চোখে পড়ে
মাঝেমধ্যে আমি ছবি তোলার নেশায় ক্যামেরা হাতে সৌন্দর্য শিকারে ঘুরি-ফিরি বর্ণনাস্থলে। ক্যামেরায় প্যারিসের মনোলোভা সৌন্দর্যের ছবি তোলার সময় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। চোখে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের রাতের মায়াভরা রূপ ও চন্দ্রিমা উদ্যানের পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্য। খুঁজে ফিরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার প্রিয় রাতের ফুলার রোডের সুখস্মৃতিমাখা দিনগুলো। যে সৌন্দর্যগুলো কখনোই ক্যামেরাবন্দী করা হয়নি আমার।
প্রবাসের চাকচিক্য রূপ-প্রকতির মধ্যেও বুকের এক কোণে আমার প্রিয় মাতৃভূমির একখণ্ড ছবি প্রতিনিয়ত বয়ে নিয়েই কাটে আমার প্রাত্যহিক দিনপঞ্জি। প্রতীক্ষার প্রহর গুনি, কবে ফিরে যাব আমার মাতৃভূমির বুকে। আবার নয়ন জুড়াব দেশমাতার রূপলাবণ্যে।