প্রায়
চল্লিশ হাজার জনগোষ্ঠীর আমাদের ফ্রান্সের বাংলাদেশী কমিউনিটি।প্রত্যেকেই কোননা কোন
কারণে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে বসতি স্থাপন করেছি। আমরা যারা এই
ভূখন্ডে বসবাস করছি তারা প্রত্যেকেই কোননা কোন ভাবে গুণান্বিত। কারো মধ্যে রয়েছে শিল্প সত্তা, কারো মধ্যে কঠোর পরিশ্রম ও জীবনের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার অদম্য
মনোবল এবং সৃজনশীল মেধা ও মনন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে , আমাদের সহজাত গুন ও চিন্তাকে
বিকশিত করার জন্য স্ব স্ব কর্মব্যস্ততার পাশাপাশী এখানে গড়ে তুলেছি নানাবিধ
সাংস্কৃতিক,সামাজিক,রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। দিন দিন কমিউনিটির সদস্য সংখ্যা
বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন এবং
উন্নত চিন্তা সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী তৈরির ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবনার সময়ও এসেছে।
আমার
এখন পর্যন্ত এখানকার কোন সাংগঠনিক কর্মকান্ডে যুক্ত হবার সুযোগ হয়নি, কিন্তু চল্লিশ
হাজার সদস্যের বাঙ্গালী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে কিছু কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি। এখানে কমিউনিটির বিভিন্ন ফেজবুক পেজের সাথে সংযোগ থাকার কারণে কমিউনিটির
নানাবিধ খবর ফেজবুক ওয়ালে দেখতে পাই। কোন কোন খবর নিজেকে পুলকিত করে আবার কোন খবর
সত্যি হতাশ করে। সম্প্রতি একটি কমিউনিটি পেজে ‘শতর্ক হউন’ ফ্রান্সে জামাতি প্রেসক্লাব শিরোনামের একটি লেখা কমিউনিটি সংক্রান্ত অনেক কথা মনের মধ্যে উস্কে
দিলো। লেখাটিতে নির্দিষ্ট কয়েক জন ব্যক্তির এখানে আগমন,অবস্থান,বর্তমান সামাজিক অবস্থান,জ্ঞান গরিমা
ইত্যাদি হেয় ভাবে বর্ণনা করে লেখক নিজের শ্রেষ্টত্বের প্রমান দেবার চেষ্টা করেছন ।আমরা
যারা এখানে বসবাস করছি তারা সবাই জানি যে, কিছু ব্যক্তিবর্গ শিক্ষা বৃত্তি
,পড়াশুনা ও পেশাগতভাবে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ ছাড়া অন্য বৃহৎ অংশ কিভাবে বসবাসের
স্থায়িত্ব লাভ করেছে। কোন যোগ্যতার বিশেষ মানদন্ডে আমরা এই স্থায়িত্ব লাভ করিনি,
যেটা নিয়ে গর্ব করা যায়।ক্ষুদ্র স্বার্থে একজন বাঙ্গালী হয়ে এই দূরপ্রবাসে বসে
অন্য বাঙ্গালীকে অসম্মান করার মধ্যে কোন গৌরব বা মহত্ব নিহিত থাকতে পারে কি? একজন বাঙ্গালী ভায়ের
কাগজ হয়নি বলে এভাবে উলঙ্গ করার অধিকার কি আপনার আছে ? বরং আপনার কাগজ আছে
বলে, কাগজ ছাড়া ভাইটির পাশে দাড়িয়ে,মানসিক ভাবে মনোবল জুগিয়ে তার কাগজ হওয়ার
ব্যাপারে সাহায্য করাই একজন গর্বিত বাঙ্গালীর দায়িত্ব নয় কি ? শুধু এই বিষয়টিই নয় পূর্বেও
এ ধরণের আরো অনেক বিষয় দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধে নই। অনেক সময়
জেনে,না জেনে আমরা ভুল করে থাকি।ধরুন আমি আপনার ভাই হয়ে একটা ভুল করেছি, তাই বলে
আপনার একটা ফেজবুক এ্যাকান্ট বা নিউজ পোর্টাল আছে বলেই আমাকে শুধরে না দিয়ে এবং সংশোধনের সুযোগ
না দিয়ে এভাবে ন্যাংটা করে কমিউনিটির কাছে উপস্থাপন করবেন। বিবেকের কাছে প্রশ্ন
করুন, এটা কতটুকু ন্যায় সঙ্গত। কেউ যদি ভুল করে তা কমিউনিটির শ্রদ্ধাভাজন
ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই সমীচীন নয় কি ? একবার ভাবুন, কাউকে
নিয়ে নেতিবাচক কিছু লিখে ফেজবুকে পোষ্ট করে ছড়িয়ে দিলেন তা শুধু ফ্রান্সের
কমিনিটির মানুষই দেখছেনা, মুহূর্তের মধ্যেই খবরটি পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশসহ সারা
পৃথিবীতে বসবাসরত বাঙ্গালীদের কাছে যা সত্যতা যাচাই ছাড়াই সবার মধ্যে অভিযুক্ত
ব্যক্তি সহ সমম্ত কমিউনিটি সম্পর্কে এক বিভ্রান্তিকর ধারণার জন্ম নিচ্ছে।
সাম্প্রতিক
সময়ে যে বিষয়টি ফেজবুকে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে,তাহলো প্যারিসে একটি বাংলা
প্রেসক্লাব গঠনকে কেন্দ্র করে। প্যারিসে গণমাধ্যম কর্মীদের একটি সংগঠন হবে এটি
সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু এই ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ঘটনাগুলো
অনেককেই মর্মাহত করেছে। আমার জানা মতে বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমগুলো তাদের
বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়োগকৃত প্রতিনিধিদের কোন
প্রকার ভাতা বা আর্থিক সুবিধা প্রদান করেনা। আর যারা করে তার পরিমান নিতান্তই নগন্য। সেই
সূত্রে ফ্রান্সে বাংলাদেশী গণমাধ্যমের যেসব সংবাদকর্মী ভাইয়েরা কাজ করছেন তারা কোন
প্রকার আর্থিক সুবিধা ছাড়াই ,নিজ খরচে ক্যামেরা কিনে স্বেচ্ছায় সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কমিনিটিকে সেবা দিয়ে চলছেন। এ জন্য আপনাদের সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত
মূল্যায়ন হচ্ছে, আপনারা কমিউনিটির মহৎ,সচেতন ও সেরা মানুষদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ নিজস্ব
কর্মব্যস্ততার পাশাপাশী আপনারা
এখানকার বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে
ভাবেন এবং তাদের সুখ দুঃখ,আনন্দ বেদনা,আচার অনুষ্ঠান মিডিয়ার মাধ্যমে ষোল কোটি বাঙ্গালীর
কাছে তুলে ধরেন। বিনিময়ে কমিউনিটির মানুষ আপনাদেরকে সমীহ করে,সম্মান করে,শ্রদ্ধা
করে। তাই আমি বলবো, আপনারা শুধু একটি প্রেস ক্লাব নয়,একটি মহতি সংঘ গঠনের উদ্যেগ
নিয়েছিলেন।যেহেতু সমাজের মহৎ ও সচেতনদের সংগঠন তাই প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বন্দের ঊর্ধে
থাকাই বাঞ্চনীয় ছিলো। দেখতে পেলাম একটি কমিটি না হয়ে দুইটি কমিটি আত্নপ্রকাশ
করেছে। কারণ নেতৃত্বের ভাগাভাগিতে সমঝোতায় না পৌঁছানো। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক
পক্ষ অপর পক্ষকে ফেজবুকের পাতায় উলঙ্গ করার যে মহড়া দিচ্ছে তা খুবই হতাশা ব্যঞ্জক।
আপনারা কমিউনিটির সেরা অংশ হয়ে যদি একে অপরকে ছোট করে উপস্থাপন করেন,অসম্মান করেন,
তাহলে অন্যরা কি করবে ? সুষ্ঠ, সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হলে একদিন সবাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের
স্বাদ নিতে পারবেন। কেউ একটু আগে পরে হলে কি এমন ক্ষতিইবা হবে। এমন একটি ব্যাপার
নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ একেবারেই অগ্রনযোগ্য।
যে দিন
দেখবো বাংলাদেশী যুবকেরা ক্যামেরা হাতে ফরাসি সংবাদের পিছে ছুটছে,ফরাসি মিডিয়ায়
পেশাদারী ভাবে কাজ করছে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলা ভাষাভাষী সাংবাদিকদের
একটি সংগঠন বা প্রেসক্লাব নির্মিত হয়েছে, সেই দিন মনে হবে ফরাসী বাংলা কমিউনিটির
কিছু অর্জন হয়েছে। আজ কমিউনিটি প্রেসক্লাব গঠনের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস চলছে আশা করি
এখান থেকেই আপনারা সমস্ত দ্বন্দের ঊর্ধে গিয়ে এবং একত্রিত হয়ে সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে
বাংলা কমিউনিটির মানুষদের এগিয়ে নিতে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে যাবেন।
পরিশেষে
বলতে চাই,আমরা বাংলাদেশ থেকে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চক্রান্তের যে বিভাজন
প্রক্রিয়ার মন্ত্র মস্তিস্কে ধারণ করে
এখানে এসেছি তা ঝেড়ে ফেলে, এই ভূখন্ডের জাতিগোষ্ঠীর (ফরাসি) জাতীয়তাবোধ,রাষ্ট্রের
প্রতি মমত্ব ও ঐক্য থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিটাকে ভালোবাসি এবং প্রবাস থেকে দেশপ্রেম ও
ঐক্যের মডেল হয়ে দেশের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আমরা শোষকের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মু্ক্ত হয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পেলেও এখনো অর্থনীতির পরাধীনতার
জালে আবদ্ধ তাই আমাদের একমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তির যে যুদ্ধ চলছে ,সেই যুদ্ধে
প্রত্যেক প্রবাসী যার যার নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখবো, এটাই প্রত্যাশা।
জী ভাই, আপনার চিন্তাধারা অব্যাহত থাকুক এবং পূর্ণতা পাক মানবতায় - কল্যাণে
উত্তরমুছুনধন্যবাদ প্রিয় ওয়াহিদ ভাই.....
মুছুন