বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় দেশ বিদেশে বাংলাদেশীদের ফেজবুকের পাতা গরম হয়ে উঠলো।আলোচনা,সমালোচনা,প্রতিবাদ ও আক্রোশে যখন ফুসে উঠতে লাগলো সমগ্র দেশ,ঠিক তখনি সোহগী জাহান তনু হত্যাকান্ড দশ কোটি ডলার লোপাটের গরম হাওয়াকে শীতল করে দিলো।শুরু হলো তনু হত্যা প্রতিবাদের ঝড়ো বাতাস।ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যার ভেতর দিয়ে তনু হত্যার প্রতিবাদের বিষ ফোঁড়াকে প্রশমন করে আড়ালে চলছে হত্যাকারীদের সাধু সন্ন্যাসী বানানোর প্রক্রিয়া।এক একটি ইটের পর ইট গেঁথে যেমন অট্টালিকা তৈরী করা হয়, তেমনি এই সরকার একের পর এক অপকর্ম দক্ষ হস্তে মোকাবেলা করে এখন অপকর্ম দ্বারা অট্টালিকা বানিয়ে সুউচ্চে অবস্থান করে জনসাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে।তারা জানে দেশে যত বড় ঘটনাই ঘটুকনা কেন, সর্বোচ্চ সাত দিন মানুষ চিল্লা পাল্লা করবে,ব্যানার হাতে দাড়িয়ে থাকবে,পরে যার যার কাজে ফিরে যাবে এবং পরিবেশ স্বাভাবিক ও শান্ত অবস্থায় ফিরে আসবে।যেহেতু জনগণের ভোটে ক্ষমতা প্রাপ্ত নয় তাই জনগণকে জবাবদিহি করতেও তারা বাধ্য নয়।সুসভ্য সরকার ব্যবস্থায় মানব বন্ধন,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদকে গুরত্ব দেওয়া হয় এবং এর ভেতর দিয়ে তাদের জনপ্রিয়তার ব্যাপারে সচেতন হয়ে যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের ভেতরে প্রবেশের পুনরায় চেষ্টা করে থাকেন।কিন্ত যে সরকারের উপর জীনের আছর রয়েছে তাদের কাছ থেকে কি মানব বন্ধন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে কোন অধিকার আদায় করা সম্ভব?এমন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বশে রাখতে দরকার শক্তিশালী ওঝা এবং তার শুকনো মরিচ পুড়ানো ধোঁয়ার দাওয়াই।
শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬
শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬
ব্যক্তির পুরস্কারে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং পরিপেক্ষিত আমার ক্ষত বিক্ষত বাংলাদেশ
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কখনো কোন আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান সূচক ডিগ্রী অর্জন করে তখন আমরা অনেকেই গৌরব করে বলে থাকি, এই পুরস্কার আমাদের সমগ্র জাতির সুনাম তথা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবে ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছে।অনেক সময় দেখি অনেক অতিভক্ত অনুসারীগন পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সম্মান জানানোর জন্য সম্মানসুচক শব্দ খুঁজতে গিয়ে দিশেহারা হয়েযান।
আমাদের জানা দরকার, একটি জাতি বা রাষ্ট্রের বহির্বিশ্বের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা ও সম্মানের মানদন্ডে কোন ব্যক্তি-বিশেষের পুরস্কার আসলে কতটুকু ভূমিকা রাখে ?বস্তুত যে বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে একটি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে ও নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে অবদান রাখে সেই ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের অবস্থান কি ?এবং সেই লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম কি ?
একটি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অবস্থান মূলত নির্ভর করে , প্রথমত ঐ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি তথা সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মানের উপর।এর পরেই রয়েছে সামাজিক স্থিতিশীলতা ,প্রত্যেক চিন্তাধারা ও মতাবলম্বী মানুষের শান্তিপূর্ণ সহবস্থান, প্রত্যেকের প্রতি মানবিক আচরণ এবং মানবিকতার চর্চা ,আন্তর্জাতিক মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ও সুশিক্ষিত জনগণ, জনগোষ্ঠীর সাহিত্য সাংস্কৃতিক মনন ও রুচিসম্মত চিন্তাধারা । সমগ্র জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং জনগনের জাতীয় ঐক্যের মানসিকতা ।
আমরা যদি বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ঐ সব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উল্লেখিত প্রত্যেকটি গুন বিদ্যমান।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করলে সহজ দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে পাই ,অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাগজে কলমে সরকার বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষনা এবং বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে আমাদের ক্ষমতা-কেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল ও সরকার ভোটের বাজারে এগিয়ে থাকার জন্য দেশকে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রসরমান দেশ হিসেবে ঘোষনা করে থাকে।কিন্তু যখন দেখি কর্মসংস্থানের অভাবে দেশের নিরন্ন হাজার হাজার মানুষ জীবন বাজি রেখে বিদেশ যাওয়ার জন্য অবৈধ পথে সমুদ্র যাত্রা করে,কিন্তু তীরে উঠতে না পেরে ক্ষুধার্থ অবস্থায় দিনের পর দিন পানিতে ভাসতে থাকে।এছাড়া কোন ভিনদেশের বন জঙ্গলে যখন শত শত বাঙালীর কবরের সন্ধান মেলে তখন এই হতভাগা মানুষগুলোর বাস্তবতার ভেতর দিয়ে বংলাদেশের প্রকৃত অর্থনীতির চিত্রের স্পষ্ট রূপ ফুটে ওঠে।মুখে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও দেশের তৃনমূল নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে যখন মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।যখন এক খন্ড ভূমির অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ রেল-লাইনের পাশে ঝুপড়ী ঘর বা খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর দিনাতিপাত করে,অথচ খাস জমি দখল করে দেশের ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ সুপারমার্কেট , চিত্তবিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলে অর্থ উপার্জন করে,সেনা কর্মকর্তাদের রাজকীয় জীবন যাপন উপহার দেওয়ার পরও রাজধানীর মূল্যবান সরকারী জমি তাদের মধ্যে বিলি বন্টন করে স্থায়ীভাবে ব্যক্তিগত অট্টালিকা গড়ার ব্যবস্থা করা হলেও ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের বস্তিকে বিনা নোটিসে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। যখন যাকাতের কাপড়ের জন্য বিত্তবানের লোহার গেটের সামনে প্রতি বছর দেশের ছিন্ন বসনের মানুষের পায়ে পিষ্ঠ হয়ে প্রাণ দিতে হয় ।যখন দুর্ণীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মানে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রকল্প বাতিল হয়ে স্বর্থায়নে একটি সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তীব্র অর্থ সংকটের কারনে নির্মাণ কাজ থেমে যায় তখন রাষ্ট্রের এই ভাসমান চিত্রের মধ্যদিয়ে অর্থনীতির প্রকৃত রুপরেখা ও বৈষম্য ফুটে ওঠে।
তথ্য প্রযুক্তির অগ্রসরমানতার যুগে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষাকে গুরত্ব দিয়ে রাষ্ট্রকে অধিকতর জনকল্যাণমূখী করার চিন্তায় মগ্ন তখন বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই সম্রাট আকবরের পাইক পিয়াদার শাসন আমলের দিকে।ইতোমধ্যে দেশের আইন,শাসন,বিচার,প্রশাসন প্রতিটি বিভাগের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যকে খর্ব করা হয়েছে।রাষ্ট্র-যন্ত্রকে পূর্ণমাত্রায় বানিজ্যিক রূপ দেওয়া হয়েছে। মানুষের রাষ্ট্রের কাছে প্রাপ্য মৌলিক অধিকারগুলোতে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।ধনী দরিদ্রের ব্যবধান আকাশ পাতাল সম।তাই এই দেশের এক শ্রেণীর মানুষের জীবন যাত্রায় ফুটে ওঠে পশ্চিমা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভোগবিলাশী জীবনের প্রতিচ্ছবি,অন্যদিকে বৃহৎ এক অংশ অর্থাৎ ১০.৬৪ শতাংশ মানুষের জীবন যাত্রায় ফুটে ওঠে আফ্রিকার পশ্চাৎপদ বুবুক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিবিম্ব।
একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে সেই দেশের কর ব্যবস্থা।কর ব্যবস্থা উন্নত হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ভীত সুদৃঢ় হয়, ফলে বৈদেশিক অনুদান নির্ভরতা কমে আসে,জাতি আত্ননির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যায় এবং সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে উন্নত জীবনের ছোঁয়া।কিন্তু আজও আমাদের দেশের কর ব্যবস্থাকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে।দেশের অধিকাংশ মানুষের কর ব্যবস্থা সম্পর্কীয় নুন্যতম জ্ঞান নেই এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদেরও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।দেশে বৈধ অবৈধ কোটিপতির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেলেও আনুপাতিক হারে রাড়েনি করদাতার সংখ্যা ও কর হারের পরিমান।এই অনিহার কারণ খুঁজতে গেলে যে বিষয়গুলো সামনে আসে,তাহলো কর ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে ব্যক্তিগত ভাবে সবচেয়ে বেশী আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা,কারন তাদের কর ফাঁকি দেওয়া ও কালো টাকার বিশাল অংশ জমা পড়বে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।অন্যদিকে আমাদের মন্ত্রী,এম পি,রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের বাড়ী,গাড়ী ও রাজনৈতিক চাঁদার বড় অংশ আসে ঐ সব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে, ফলে তাদের স্বার্থ রক্ষায় নৈতিকতার অবস্থান থেকে সুপরিকল্পিত ভাবে কর ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে।১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভ্যাট(মূল্য সংযোজন কর) প্রথা চালু হয়।কর আদায়ের এই পদ্ধতি রাষ্ট্রের মহৎ উদ্দেশ্যে প্রচলন করা হলেও পরবর্তিতে দেখা যায় ,এই পদ্ধতি যতটা না রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন করেছে, তার চেয়ে দ্বিগুন ভাবে অসৎ ব্যক্তিদের কোটিপতি হওয়ার পথকে সুগম করেছে।
এই পদ্ধতিতে সরাসরি পণ্য বা সেবার বিক্রয় মূল্যের সাথে ভোক্তার নিকট থেকে মূসক চালানের মাধ্যমে আইনানুগ হারে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর আদায় করে থাকেন।বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ভোক্তার কাছ থেকে আদায়কৃত করের অর্থ আঞ্চলিক কর জোনের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা করা।কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভোক্তার কাছ থেকে প্রতিটি পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের বিপরীতে সংযোজন করসহ মূল্য আদায় করা হলেও মূসক চালান ব্যবহার করা হয় মাত্র দশ শতাংশ বিক্রয়ের ক্ষেত্র।ভোক্তার কর সচেতনতা ও এ সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিক্রেতার নিকট মূসক চালান দাবী করেন না।মূল্য সংযোজন করের নামে ভোক্তার কাছ থেকে আদায়কৃত ৯০ শতাংশ অর্থ সরাসরি চলে যায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকের পকেটে। এই প্রক্রিয়ায় সমাজের টাউট বাটপার শ্রেণীর পকেটে চলে যাওয়া অর্থ রা্ষ্ট্র ও ভোক্তার সঙ্গে এক উন্মুক্ত প্রতারণার কৌশল।এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তাহলে কেন সরকার এসবের বিরুদ্ধে তৎপর হচ্ছে না ?এবং প্রশাসনিকভাবে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র-যন্ত্রের চোখে ধুলো দিয়ে কিভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতারকরা এমন কর্মকান্ড চালিয়ে যান ও পার পেয়ে যান ?এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমার নিজের দেখা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আংশিক বর্ণনার ভিত্তিতে একটা দিক প্রকাশ করছি।
একটি মাঝারি ধরনের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব শোরুমের মাধ্যমে বিক্রয় করেন।তাদের বিক্রয়কৃত প্রতিটি পণ্যের উপর ভোক্তার কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সেবা খাতের পনেরো শতাংশ হারে সংযোজন কর আদায় করেন।এভাবে সারা মাসের বিক্রয়ের ওপর বিশ লক্ষ টাকার সংযোজন কর আদায় করা হয়।কিন্তু মূসক চালান অনুযায়ী সরকারকে দেখানো হয় সংযোজন কর আদায় করা হয়েছে দুই লক্ষ টাকা এবং এই পরিমান অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।বাকী আঠার লক্ষ টাকার আত্নসাৎ করা হয় কিছু কৌশলের অবলম্বনের মাধ্যমে।বিভিন্ন আঞ্চলিক কর অফিসগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যয় করা হয় দুই লক্ষ টাকা, এক লক্ষ টাকা মাসিক বেতনে অফিসে বসিয়ে রাখা হয় অবসরপ্রাপ্ত কোন সচিব বা সেনা কর্মকর্তাকে ,আর এক লক্ষ টাকা রিজার্ভ রাখা হয় তাৎক্ষণিক কোন প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক ঝক্কি ঝামেলা মোকাবেলার জন্য।ঐ সরকারী অবসরপ্রাপ্ত বেতনভোগী ঊর্ধ্বতন কর্মচারীর কাজ হলো ,প্রতিষ্ঠানের অপকর্মগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে ফোন করে লিয়াজো করা, আর বলা ,আমি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বা সচিব জদরুল বলছি,আমি এখন এখন আম জাম ফুড কোম্পানী লিঃ এর জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে আছি।আমাদের প্রতিষ্ঠানের এই সংক্রান্ত বিষয়গুলো যদি একটু দয়া করে দেখেন। ঠিক এই প্রক্রিয়ায় প্রতি মাসে চৌদ্দ লক্ষ টাকা লোপাট করা হয়।বছরে ব্যবসার মুনাফা ব্যতিরেখেই এক কোটি আটষট্টি লক্ষ কালো টাকা জমা পড়ে বাটপার মুনাফাভোগী মালিকের পকেটে।এটা একটা মাঝারি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ,আজ এই ধরনের বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে ছোট বড় হাজার হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা রাষ্ট্রকে ফাঁকি দিয়ে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে।ফলোশ্রুতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে থাকলেও,ব্যক্তি পূঁজিপতির সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে।
দেশে কোন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্ধ হলে সেখানেও চরম নৈরাজ্য।এক কোটি টাকার প্রকল্প বাজেটের অর্থ বরাদ্ধ হলে সরকারের উপর মহল থেকে কমতে শুরু করে ঠিকাদার পর্যন্ত এসে চল্লিশ লক্ষ টাকা অবশিষ্ট থাকে।নির্মাণ প্রকল্পটির স্থায়ীত্বকাল পঞ্চাশ বছর ধরা হলেও চল্লিশ লক্ষ টাকায় ফাঁকিবাজি নির্মাণ প্রকল্পটি বিশ বছর পর ঝুকির সম্মুখিন হতে শুরু করে,ফলে আবারো একই খাতে রাষ্ট্রকে পয়সা ব্যয় করতে বাধ্য হতে হয়।এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য হতে থাকলেও, ব্যক্তির পকেট ভারি হতে থাকে।ক্ষমতার পালাবদল হলে ভালো রাস্তা ভেঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের পকেটে পয়সা ডুকিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন করে সংস্কার কাজ করার রেওয়াজ এখন আর নতুন কোন বিষয় নয়।
এভাবে আজ অনেক রাজনৈতিক নেতা শূন্য থেকে রাজনীতি করতে এসে শিল্পপতি হয়েছেন,আবার অনেক শিল্পপতি ও কালোবাজারি রাজনীতি চর্চা ও রাজনৈতিক জ্ঞান ছাড়াই রড় মাপের রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন।ফলোশ্রুতিতে বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতি এবং ব্যবসায়ের মধ্যে এক নিবীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় যেমন তৎপর তেমনি ব্যবসায়ীরাও রাজনীতিবিদদের স্বার্থ রক্ষায় আরো বেশী তৎপর।তাই রাজনীতি না করে, শুধু রাজনীতিবিদের সেবা করার পুরস্কার স্বরূপ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ার উপহার পাওয়া ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান’ই যেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সাধারণত রাষ্ট্রের ভীত মজবুদ হলে রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তির গুরত্ব নগণ্য হয়ে যায়।রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তার সাংবিধানিক আইন ও নিজস্ব গতিতে, শুধু রাষ্ট্র পরিচালনাকারী ব্যক্তির আগমন ও প্রস্থান ঘটে নিয়মানুসারে। কিন্তু আমাদের দেশ চলে তার উল্টো গতি পথে।এখানে রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তির গুরত্ব ও আধিপত্য বেশী। ব্যক্তি পূজাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় দেশের নীতি নির্ধারণী মহল ব্যস্ত।কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্ম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে এই দেশের মানুষদের যতটা তৎপরতা দেখা যায়,কিন্তু দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতী হলে তার কিঞ্চিৎ তৎপরতা বা উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করা যায় না। ভাবা হয়, গেলে রাষ্ট্রের গেছে তাতে আমার কি? বরং ব্যক্তির গুনগান প্রদর্শন করে যদি দু পয়সা নিজের পকেটে ভরার ব্যবস্থা করা যায়। ভাবা হয়না, রাষ্ট্র ভালো না থাকলে ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদ দিয়ে নিজেও ভালো থাকা যায়না।যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে এক সময়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র সিরিয়ার জনগণের ইউরোপের পথে প্রান্তরে পাসপোর্ট হাতে ভিক্ষাবৃত্তি দেখে মনে করিয়ে দেয়, ব্যক্তিগত সম্পদ থাকা স্বত্বেও রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেওয়ায় ব্যর্থ হওয়াতে আজ ভিক্ষুকের সারিতে নামতে হয়েছে।
এখন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তাদের সমস্যা সংকুল মোকাবেলায় রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী না হয়ে গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মুখাপেক্ষীর সংস্কৃতি। দেশে কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে আমরা বলি না এই কাজটি রাষ্ট্র করেছে,বলি কাজটি হাসিনা করেছে অথবা বলি খালেদা করেছে।সরকারি কর্মচারির বেতন বৃদ্ধি পেলে বলিনা রাষ্ট্র বেতন বৃদ্ধি করেছে,বলি হাসিনা বা খালেদা বেতন বাড়াইছে।তখন মনে হয়, এরা বুঝি রাষ্ট্রের কর্মচারী নন,এরা হাসিনা খালেদার কর্মচারী এবং তাদেরই দাসত্বে নিয়োজিত। আজকের রাজনীতির ধ্বজাধারীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এতটুকু উপলব্ধির উদয় হয়নি যে,একটি দেশের কোন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত না থেকে যদি রাষ্ট্রকে শক্ত অর্থৈনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানো যায় তাহলে ঐ রাষ্ট্র পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং ঐ রাষ্ট্রের ইতিহাস,ঐতিহ্য,সামাজিক,সাংস্কৃতিক, অবস্থা জানার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়।ফলে জাতীয়তার পরিচয়েই প্রতিটি জনগণ বহির্বিশ্বের অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর মানুষের নিকট সম্মানি হয়।যেমন একজন আমেরিকান ,ফরাসি,ইংরেজ,জাপানিজ,মালেশিয়ান,চীনা নাগরিক যদি উন্মাদ কিংবা নিরক্ষরও হয় তবুও তার দেশ ও জাতীয়তার পরিচয়ে আলাদা করে সম্মান পায়।তার দেশের জাতীয়তার পরিচয়ই যেন একটি পশ্চাৎপদ রা্ষ্ট্রের প্রধান মন্ত্রী-সম মর্যাদা।অর্থাৎ একটি অস্থিশীল রাষ্ট্রের মন্ত্রীর থেকে একটি মানবিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক অধিক সম্মানিত এবং নিরাপদ জীবনের অধিকারী।কারণ একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের মন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় দুর্ণীতি,অন্যায়,অনিয়মের ভেতর দিয়ে যে ব্যক্তিগত ভোগ বিলাশ ও নিরাপদ জীবন লাভ করতে হয় ,কিন্তু একটি স্থিতিশীল ও কল্যাণমুখি রাষ্ট্র সেই উন্নত জীবন প্রতিটি নাগরিককে স্বাভাবিক ভাবে প্রদানের নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত করতে পারে। জাতিগত অগ্রগতি ও ঐক্যের মানুসিকতাই যেকোন জাতিকে এই সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে।অন্যদিকে জাতির বৃহৎ অংশকে অশিক্ষা ,নিরন্ন ও ছিন্ন বসনে রেখে দলগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন আকাশচুম্বী হলেও,এমন জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রী কিংবা নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেও উন্নত রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভবনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বা নেতা হওয়ার অবজ্ঞায় আমন্ত্রণ পাননা ,তেমনি দেশের গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের অন্য রাষ্ট্রে ব্যক্তিগত ভ্রমণে রাষ্ট্রীয় কোন সম্মানও জোটেনা ।আপনার নামের আগে বা পরে পঞ্চাশটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী ও প্রধান মন্ত্রীর পদবী নগণ্য, এখানে জাতির সামগ্রিক অগ্রগতি ও ভাবমূর্তী মূখ্য।আজ যদি আমাদের দেশকে দ্বিবিভক্ত না করে সত্যিই সামগ্রিক ভাবে জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে ঘাম ঝড়িয়ে কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম অমর করার জন্য সেতু,বিমান বন্দর বা ভবনের নাম ফলক কিংবা পাঁচ পয়সা থেকে হাজার টাকার নোটের উপর প্রতিচ্ছবি সেঁটে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হবেনা।তাছাড়া ঢাঁক ঢোল পিটিয়ে আয়োজন করে তদবিরের মাধ্যমে বিদেশী রাষ্ট্রের কোন সড়কের নামান্তরের জন্য পরিশ্রমেরও প্রয়োজন পড়বে না। আমাদের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ স্ব-মহিমায় বিশ্বের কাছে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবেন।
পৃথিবীর ত্রিশ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা।এর মধ্যে ষোল কোটি বাংলাদেশী এই ভাষায় কথা বলে।জনসংখ্যার বিচারে এই ভাষা উল্লেখযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিক অবস্থানে আমাদের প্রাণের এই ভাষাটি যতেষ্ঠ অবহেলিত।অথচ পৃথিবীর চার পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশের মানুষের মুখের ভাষা আমাদের ভাষার চেয়েও অনেক বেশী কদরযুক্ত ও সমাদৃত।এখানে ভাষার মাধুর্য ও ছন্দগত সৌন্দর্য্যের বিচারে এই সমৃদ্ধি লাভ করেনি।এর মূলে রয়েছে ঐ জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক,সামাজিক,শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি।এই সামগ্রিক সমৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর সেরা যা কিছু সৃষ্টি হচ্ছে, যেমন,শিল্প,সাহিত্য,দর্শন,বিজ্ঞান ইত্যাদির সব ঐ জাতি গোষ্ঠীর ভাষায় রুপান্তরের মাধ্যমে অতি সহজে হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে।ফলে তথ্য প্রবাহের এই প্রতিযোগিতামুলক যুগে সহজে জ্ঞান চর্চার উৎকর্ষ সাধন করে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষের থেকে অনেক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং পৃথিবীর নেতৃত্ব দানকারী দেশগুলোর কাতারে অবস্থান করে নিচ্ছে।তাই এক্ষেত্রেও সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।
নৃশংসতা ,নির্মমতা,বর্বরতা,অসভ্যতার সাথে সমঝোতা করেই বাংলাদেশে মানুষের চলমান জীবনধারা।পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে ইতোমধ্যে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে।নৃশংসতা এখন আর অবাক করা কোন বিষয় নয়।বরং নতুন কি ধরনের নির্মমতা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই প্রতিক্ষার প্রহরগুনে কাটে প্রতিটি মুহূর্ত।
সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাই আমাদের মূল্যায়নের মাপকাঠিতে দাঁড় করিয়ে দেয়।
সিলেটের আলোচিত শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা,খুলনার মোটর শ্রমিককে মলদ্বারে মোটরসাইকেলের পামপারের হাওয়া ডুকিয়ে হত্যা,দেশের বিত্তবান ও প্রভাশালীদের দ্বারা মাঝে মাঝে টিভি পর্দা ও নিউজ পেপারের পাতায় ভেসে ওঠা শিশুগৃহকর্মী নির্য়াতনের বীভৎসতা,শিশু অপহরণের পর মুক্তিপনের অর্থ না পেয়ে হত্যা করে গুম করার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনাগুলো আমাদের মানবিকতার স্তর নিরূপন করে ।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির দেশে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় জনসম্মুখে তরুণীর বিবস্ত্র করার স্পর্ধা ও সাহস এবং কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজ ছাত্রী তনুর ধর্ষিত গলাগাটা নগ্ন লাশ আমাদের সভ্যতার সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। যা এখন থেকে কোন উৎসব আনন্দে অংশগ্রহন করা ও নারীর স্বাধীন চলাচলে সম্মান, সম্ভ্রম ও জীবন নিয়ে ঘরে ফেরার নির্ভয়তায় নতুনরুপে ভীতি সঞ্চার করেছে। এই দেশে জন্ম নেওয়া একজন মানব সন্তানের প্রতিদিন মৃত্যুকে সঙ্গী করেই ঘর থেকে বের হতে হয়,সে জানে তার মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়,রাজনৈতিক সংঘাতে,সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে হতে পারে,এমনকি স্বয়ং সরকারী সিদ্ধান্তে তাকে হত্যা করে তার লাশ খাল বিলে ফেলে রাখা বা বালুর বস্তায় ভরে নদীর তলদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।স্বাভাবিক মৃত্যু চিন্তা যেন এই ভূখন্ডের মানুষের এক অলিক ভাবনা।উন্নত দেশগুলো যখন একটি পাখির স্বাধীন, স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন সুনিশচিত করতে আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করছে তখন আমার ভূখন্ডে অপঘাতে মৃত ব্যক্তির নাম থানার রেজিষ্টার্ড খাতায় পৃষ্ঠা সাশ্রয় করতে তোলাই হয়না।এখান থেকেই মূল্যায়ন করা যেতে পারে, আমরা কেমন মানবিক রাষ্ট্রের বাসিন্দা?
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশগুলোর দাতা সংস্থার যে সব বিদেশী কর্মী আমাদের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ের জন্য নিজের মাতৃভূমি ফেলে এসে কাজ করছেন ,তহবিল সৃষ্টি করে এন জি ও গুলো কার্যক্রম সচল রেখে হাজার হাজার দেশীও এনজিও কর্মীর বেতন ভাতার ব্যবস্থা করছেন ,যাদের মাধ্যমে শত শত এনজিও পরিচালকদের আয়েশী জীবনের ব্যবস্থা সুনিশ্চত হয়েছে , যারা আমাদের সম্মানিত অতিথি সমতুল্য সেই মানুষগুলোর পথে প্রান্তরে পরে থাকা দেশীয় মনুষ্য বিবর্জিত হায়েনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাত্ব লাশ বিশ্বের কাছে আমাদের উদারতা ও মনুষ্যত্বের মান নির্ণয়ে তীর্যক ভাবে প্রশ্নেবিদ্ধ করে।
আজ বাংলাদেশের মানুষের অন্যায়ের সাথে প্রতিনিয়ত আপোষ করতে করতে যাবতীয় অপকর্মগুলো সমাজে ন্যায়রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেওয়ার মনোবৃত্তি তৈরী হয়েছে।ফলোশ্রুতিতে,চোখের সামনে ঘটে যাওয়া শত শত অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদের জন্য সামগ্রীক জাতিগোষ্ঠির ধমনিতে এখন আর শিহরণ জাগায়না।
এমন সরকার ব্যবস্থার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চারপাশের খুন রাহাজানি ,ধর্ষন ,বিশৃংখলা রোধকল্পে আত্নসমালোচনা ও ব্যর্থতার কারণ খুঁজে যথাযত পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে যখন কবিতা পড়ার মত বিবৃতি পাঠ করে বলেন,দেশের আইন শৃংখলা অবস্থা পূর্ববর্তী সরকারে তুলনা অনেক গুন ভালো এবং দেশে শান্ত ও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে,তখন নিরুপায় হয়ে শোনা ছাড়া কিছু বলার ভাষা থাকেনা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পহেলা বৈশাখে তরুনীর প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানীর ঘটনাকে রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা রক্ষার প্রধান ব্যক্তি যখন কিছু দুষ্ট ছেলের দুষ্টুমি বলে তামাশা করেন তখন সত্যি অবাক হয়ে ভাবতে হয় আমরা কেমন দুর্ভাগা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
বিভিন্ন সরকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও চাকচিক্য রঙিন ল্যামপোষ্টের আলো দেখিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন অগ্রগতির উদাহরণ দিয়ে থাকেন।কিন্তু এই অবকাঠামোর সুবিধা নেওয়ার মানুষের প্রাণের অস্তিত্বই যদি হুমকির সম্মুখে দাড়িয়ে থাকে তাহলে এমন ইট সিমেন্ট ও কনক্রিটের অগ্রগতির কিবা মূল্য আছে। নীতি ও মানবতা বিবর্জিত জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রদর্শিত হয়ে, প্রানহীন অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের গর্ব যেন তামাশা মনে হয়।
আজ মানবিকতার যে বিপর্যয় ঘটেছে তার কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি আলোচনায় বিশেষ গুরত্ব পায় সেটা হচ্ছে শিক্ষা।দেশের পরিসংখ্যানে উচ্চ শিক্ষা হার বেড়েছে ,এই ভূমিতে বেড়ে ওঠা নতুন শিশুটি এখন আর নিরক্ষর থাকছেনা ,স্কুল কলেজ , মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যায়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।কিন্তু শিক্ষার দ্রুত হার বৃদ্ধির এই জনগোষ্ঠীর মানুষ দিন দিন অতি মানবিক না হয়ে কেন অতি অমানবিক হয়ে উঠছে ?একজন শিক্ষিত মানুষ অন্যদের থেকে অধিক মানবিক ও নীতি নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন হবে এটাইতো স্বাভাবিক ধারণা।কিন্তু আমাদের কথিত শিক্ষিত সমাজের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পাচ্ছি তার উল্টো আচরণ।বাংলাদেশের যত অনৈতিক, পাশবিক, অমানবিক কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে তা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত সমাজের নেতৃত্বই ।এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সুশিক্ষিত সভ্য মানুষ তৈরী করছে, নাকি দিন দিন অমানুষ তৈরির ফ্যাক্টরীতে রুপান্তর হচ্ছে।এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধ্রুব কিছু সত্য ঘটনার আলোকে তা বিশ্লেষন করা যেতে পারে।
যে বয়স একটি শিশুর চরিত্র গঠনের, সমাজকে ধীরে ধীরে বোঝার ঠিক সেই বয়সেই আমাদের দেশের একটি শিশু পঞ্চম শ্রেণীর বোর্ড পরিক্ষায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে দেখতে পায় , যে প্রশ্নপত্রে পরিক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য সারা বছর সে পড়াশুনা করেছে সেই প্রশ্নপত্র তার পিতামাতা পরিক্ষার দুই দিন আগে যোগার করে তার হাতে তুলে দিয়েছে।ঠিক এখান থেকেই এভাবে আমাদের কোমলমতি শিশুদের পরিচয় ঘটানো হয় অনৈতিকতার সাথে।
এমন পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশে শিশুটি গোল্ডেন এ প্লাস পেলো,বাবা মা সন্তানের সাফল্যের খবর জানিয়ে ফেজবুক স্ট্যাটাস দিলো,খুশীতে পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে লাড্ডু মন্ডা বিলি করলো,আশার সীমানা আরো বড় করে ভাবলো আমার সোনাধনের ডাক্টার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর কে ঠেকায়।সুকৌশলী চতুর সরকার এই এ প্লাস উৎসবের রেস ধরে জনগণের উদ্দেশ্যে গলা ফুলিয়ে বলবে আমরা ক্ষমতায় থাকলে আপনার সন্তানের এ প্লাস কেউ ঠেকাতে পারবেনা।তাই আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিৎ করতে আমাদের ভোটবিহীন সরকারকে ক্ষমতায় টিকেয়ে রাখার জন্য আপনাদের সমর্থন একান্ত অপরিহার্য এবং নৈতিক দায়িত্ব।
এমন পরিক্ষা ও ফলাফলের মাধ্যমে শিশুর পিতামাতা পেলো সন্তানের গোল্ডেন এ প্লাসের স্বাদ,সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় অর্জন করলো জাতির শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন সূচক আর শিশুটি মুলত শিক্ষা অর্জন করলো অসততার ভেতর দিয়ে অল্প পরিশ্রমে দ্রুত সাফল্য অর্জনের কৌশল।
ঠিক একই প্রক্রিয়ায় ঐ শিক্ষার্থী যখন স্বল্প পরিশ্রমে এস এস সি ও এইচ এস সি পরিক্ষায় এ প্লাস জুটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে তখন দেখতে পাবে স্বল্প পরিশ্রমে জীবনে সফল হওয়ার আরো অদ্ভূত নানা কৌশল ও ব্যবস্থা।
প্রথমেই তার দৃষ্টিগোচর হবে,বিশ্ববিদ্যায়ের মহান শিক্ষকেরা লালদল লীলদলে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত ও শিক্ষার মান উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিবর্তে নিজস্ব আধিপত্য বিস্তার ও আমাদের জমিদার শাসকদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি সি র পদ আরোহণের পথকে সুগম করা , রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে নিজেকে মহামানব হিসেবে আত্নপ্রকাশ করা ,বিভিন্ন সভা সেমিনারে দেশের উজির নাজিরদের পাশে বসে মিডিয়ার সামনে মুখ দেখিয়ে ক্ষমতা জাহির করা ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়ে মহাব্যস্ত।অন্যদিকে যে সব শিক্ষক দেশ ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সততার সহিদ কিছু ভাবেন এবং করতে চান তারা ঐ সব লাল নীল হলুদ দলের প্রভাবে কখনোই তাদের সুন্দর চিন্তার প্রয়োগ করতে পারেনা এবং দলবাজী না করার কারণে নীতি নির্ধারণী প্রশাসনিক দায়িত্ব তাদের নাগালের বাইরেই থেকে যায় ,তাদের পরিচয় বিশ্ববিদ্যায়ের নিরীহ শিক্ষক হিসেবে।
দ্বিতীয়ত যে বিষয়গুলো অবলোকন হবে তা খুবই বাস্তব এবং সত্য , ক্যাম্পাসের মেধাবী ছাত্ররা যখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে হলের একটি সীট জোগার করতে দিশেহারা হচ্ছেন তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন জমিদারী শাসক দলের আশির্বাদপুষ্ট ও পিস্তলের টিগার টেপায় দক্ষ অস্ত্রধারী ছাত্র নেতাটি হলের মেধাবী ছাত্রের জন্য সংরক্ষিত কক্ষটি দখল করে রাজকীয় বিছানা ,ছোফাছেট ,টেলিভিশন সহ আমোদ প্রমোদের সমস্ত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে সারা ক্যাম্পাস শাসন করছে।তার ইশারায় মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নড়ে চড়ে ওঠে।নেতা ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকানগুলোতে তার ব্যবহার্য ও পরিধেয় পন্য সামগ্রির জন্য গেলে তা স্বসম্মানে বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন।মাস শেষে নেতার শাঙ্গপাঙ্গরা ব্যবসায়িক কর্পোরেট অফিসগুলোর কর্ণধারদের সাথে দেখা করা মাত্রই ভক্তির সঙ্গে মোটা অঙ্কের নজরানা পেয়ে থাকেন।ক্যাম্পাসের কোন উন্নয়ন মুলক কাজ বরাদ্দ হলে ঐ বরাদ্দকৃত প্রকল্প বাজেটের একটা অংশ ঠিকাদার কর্তৃর স্বাভাবিক ভাবে নেতার পকেটে চলে আসে ।এমন অবস্থায় একজন শ্রমজীবি পিতার মেধাবী সন্তানটির যখন অর্থাভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমসিম খেত হচ্ছে তখন ক্ষমতাশীন আশির্বাদপুষ্ট টিগার টেপা ছাত্রনেতা ছাত্রবস্থাতেই চার চাকার টয়োটা গাড়ি চেপে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছে।দেশের প্রধানমন্ত্রীর কোন রাষ্ট্রীয় সফরে সরকারী কোষাগারের টাকায় ঐ ছাত্রনেতাই সফরসঙ্গী হয়ে দেশ বিদেশ পরিভ্রমন করছে।কারন আর দু দিন পরেই ক্যাম্পাসের নেতৃত্ব থেকে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের যখন একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় ভালো ফলাফলের জন্য দিন-রাত পড়াশুনা করতে হচ্ছে , অথচ ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসী ছাত্ররা সারা বছর হল দখল ,চাঁদাবাজী,টেন্ডারবাজী করেও ক্ষমতাশীন লাল নীল অথবা হলুদ দলের শিক্ষকদের সহায়তায় পরিক্ষার আগে স্বল্প সাজেশনের প্রশ্নপত্র পড়ে ভালো ফলাফলের সাথে পরিক্ষায় পাশ করে যাচ্ছে। টিগার টেপা ছাত্রের ভালো ফলাফল করানো যেন ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষকদের মহান দায়িত্ব ,কারন রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা জমিদারী শাসনকে স্থায়ী করার অংশ হিসেবে ঐসব ছাত্রদেরকে অস্ত্র হাতে সারা বছর বিরোধী শক্তি হটাতে রাজপথে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে,কখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ক্ষমতাশীন দলের শিক্ষকদের আধিপত্য ঠিক রাখতে সরকার বিরোধী শিক্ষকদের থ্রেড ,ভয় ভীতি প্রদর্শন করতে হয়েছে।তাই স্বভাবতই ঐ সব ছাত্রদের রক্ষা করাও যেন শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব হয়েই দাড়ায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে এমন সম্পর্ক ও কার্যক্রমের ফলে ছাত্র শিক্ষক রাজনীতিতে এখন আর মৌলিক কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী ছাত্ররা ক্যাম্পাসে তাদের ইচ্ছা ও স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাকারী শিক্ষকদের আজ চর-থাপ্পড় মারতেও কোন দ্বিধা-বোধ করছেনা।বাংলাদেশের শিক্ষক ছাত্রের শ্রদ্ধা ও শ্নেহের সম্পর্কের সুদীর্ঘ যে ঐতিহ্য তা আজ বিলুপ্তির পথে।সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাশীন ছাত্র সংগঠনের অসভ্য ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষকদের র্যালি ভন্ডুল করে তাদেরকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা তাই ই প্রমান করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাবর্ষ পরিসমাপ্তির পর ছাত্রছাত্রীরা তাদের অর্জিত ফলাফল ও মেধা অনুযায়ী দেশের সেবা ও নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মেধার স্বাক্ষর রেখে কর্মে নিয়োগ হবে,এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন তা পরিবর্তন হয়েছে।বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন যে ,বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা ছাত্রছাত্রীরা কে কি করবে তা আজ তাদের উপর নির্ভর করেনা ,নির্ভর করে আমাদের মাথার উপর চেপে বসা পালাবদলকারী জমিদার শাসকদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর।এই প্রক্রিয়ায় যে ছাত্রটি মানুষ কোপানো গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তাকে নিয়ে আসা হয় ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে।
দেশের গণতান্ত্রিক পন্থাকে ছুড়ে ফেলে ক্ষমতার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার অন্যতম কূট পন্থা হচ্ছে ,দেশের কর্মরত আমলা ও রাষ্ট্রীয় গুরত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের অতি আনুগত্য ও সমর্থন অর্জন করা।সেই কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের মাঝারী নেতৃত্বের ছাত্রদের বি সি এস(বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরিক্ষাসহ অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ চাকুরী নিয়োগ পরিক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, দলীয় সনদ ও তদবিরের ভিত্তিতে সরকারের গুরত্বপূর্ণ পদে বসানোর ব্যাবস্থা করানো হয়।মন্ত্রী এম পি’দের দশ বারো লক্ষ টাকায় নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ রেখে কিছু পদ সংরক্ষণ করা হয়।আর এক শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য যা ক্ষমতাসীনদের ন্যায় শাসনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।যেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে শিক্ষা জীবন শেষ করছে, কিন্তু দলবাজী না করার অপরাধে দেশের গুরত্বপূর্ণ পদে বসে দেশ সেবার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন ধুসরে পরিণত হচ্ছে।জীবন জীবিকা ও বাস্তবতার প্রয়োজনে এসব মেধাবীদের জুটিয়ে নিতে হচ্ছে কোন মুনাফাভোগী মালিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দাসত্বের চাকুরী অথবা গ্রামের বেসরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষকতা।তাও না জুটলে সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞানকে ছুড়ে ফেলে বিদেশ গিয়ে গায়ে খাটা শ্রমিকের জীবন বেছে নিয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচল রাখার জন্য আত্নসত্বাকে বলি দেয়া।
ছাত্র অবস্থাতেই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন, পিস্তলের টিগার টেপায় দক্ষতার প্রমান এবং দলের এ্যাটাকিং ফোর্স (ছাত্র সংগঠন)’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐ অস্ত্রধারী ক্যাম্পাস শাসন করা ছাত্রনেতাই তার নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন লাভ করবে।দু ট্রাম এম পি হওয়ার পর তিনিই হবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী ।তার হাত থেকেই বিভিন্ন পুরস্কার, পদক গ্রহণ করে দেশের কথিত বুদ্ধিজীবী,সাংস্কৃতিক কর্মী,শিক্ষক জীবন সার্থক করবেন। তিনিই ষোল কোটি বাঙ্গালীকে উদ্দেশ্য করে ন্যায় নীতি,সত্য,আদর্শ,মানবতা,মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাসের বানী শোনাবেন।
উপোরোক্ত বিশ্লেষনকৃত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন করার পর স্বল্প পরিশ্রমে এস এস সি ও এইচ এস সি পরিক্ষায় এ প্লাস পাওয়া ছাত্রটি স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবারো স্বল্প পরিশ্রমে জীবনের চূড়ান্ত সফলতার পথটিই বেছে নেবেন। আর এটাই আমাদের বর্তমান বাস্তবতা।
উপরোক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগকৃত আমলারা আজ তাদের দেশের প্রতি মূল দায়িত্ব কর্তব্য ভূলে গিয়ে দুষ্কৃতি শাসকদের আনুগত্য করার মাধ্যমে দেশকে একটি বৈষম্যমূলক এবং মেধাশূন্য জাতি হিসেবে এগিয়ে নিতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে।যেখানে একজন আমলা’র নিজকে জনগণের টাকার বেতন ভাতায় পোষ্য কামলা ভাবার কথা। অথচ তাদের কাছে কোন সেবার জন্য গেলে দলীয় পরিচয় অথবা নজরানা প্রদান ব্যতিত কোন সেবা পাওয়াই এখন দুঃসাধ্য।রাজনৈতিক নিয়োগ ও ক্ষমতাশীন শাসকদের আশির্বাদ সাথে থাকায় এদের আচরণের মধ্যেও ফুটে ওঠে জমিদারের স্বরুপ।
আবার ক্ষমতার পালা বদলের ফলে অথবা কূট কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হলে, যেসব আমলারা ক্ষমতাশীনদের আশীর্বাদচ্যুত হন, তখন অতি খোদাভীতি রাজনৈতিক শাসন আমলের নিয়োগকৃত সুন্নতি দাড়িওয়ালা আমলা, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শাসকদের আমলে সুন্নতি দাড়িকে ফ্রেঞ্চকাটে রুপান্তর করেন এবং তার কার্যালয়ের সামনে শাসক দলের মহামানবের মূর্তি প্রতিস্থাপন মাধ্যমে পুষ্পমাল্য দ্বারা জনগনের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পনের ব্যবস্থা করে আশির্বাদপ্রাপ্ত হন এবং ক্ষমতার দাপট অব্যহত রাখেন।
আমাদের জানা দরকার, একটি জাতি বা রাষ্ট্রের বহির্বিশ্বের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা ও সম্মানের মানদন্ডে কোন ব্যক্তি-বিশেষের পুরস্কার আসলে কতটুকু ভূমিকা রাখে ?বস্তুত যে বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে একটি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে ও নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে অবদান রাখে সেই ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের অবস্থান কি ?এবং সেই লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম কি ?
একটি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অবস্থান মূলত নির্ভর করে , প্রথমত ঐ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি তথা সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মানের উপর।এর পরেই রয়েছে সামাজিক স্থিতিশীলতা ,প্রত্যেক চিন্তাধারা ও মতাবলম্বী মানুষের শান্তিপূর্ণ সহবস্থান, প্রত্যেকের প্রতি মানবিক আচরণ এবং মানবিকতার চর্চা ,আন্তর্জাতিক মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ও সুশিক্ষিত জনগণ, জনগোষ্ঠীর সাহিত্য সাংস্কৃতিক মনন ও রুচিসম্মত চিন্তাধারা । সমগ্র জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং জনগনের জাতীয় ঐক্যের মানসিকতা ।
আমরা যদি বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ঐ সব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উল্লেখিত প্রত্যেকটি গুন বিদ্যমান।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করলে সহজ দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে পাই ,অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাগজে কলমে সরকার বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষনা এবং বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে আমাদের ক্ষমতা-কেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল ও সরকার ভোটের বাজারে এগিয়ে থাকার জন্য দেশকে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রসরমান দেশ হিসেবে ঘোষনা করে থাকে।কিন্তু যখন দেখি কর্মসংস্থানের অভাবে দেশের নিরন্ন হাজার হাজার মানুষ জীবন বাজি রেখে বিদেশ যাওয়ার জন্য অবৈধ পথে সমুদ্র যাত্রা করে,কিন্তু তীরে উঠতে না পেরে ক্ষুধার্থ অবস্থায় দিনের পর দিন পানিতে ভাসতে থাকে।এছাড়া কোন ভিনদেশের বন জঙ্গলে যখন শত শত বাঙালীর কবরের সন্ধান মেলে তখন এই হতভাগা মানুষগুলোর বাস্তবতার ভেতর দিয়ে বংলাদেশের প্রকৃত অর্থনীতির চিত্রের স্পষ্ট রূপ ফুটে ওঠে।মুখে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও দেশের তৃনমূল নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে যখন মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।যখন এক খন্ড ভূমির অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ রেল-লাইনের পাশে ঝুপড়ী ঘর বা খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর দিনাতিপাত করে,অথচ খাস জমি দখল করে দেশের ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ সুপারমার্কেট , চিত্তবিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলে অর্থ উপার্জন করে,সেনা কর্মকর্তাদের রাজকীয় জীবন যাপন উপহার দেওয়ার পরও রাজধানীর মূল্যবান সরকারী জমি তাদের মধ্যে বিলি বন্টন করে স্থায়ীভাবে ব্যক্তিগত অট্টালিকা গড়ার ব্যবস্থা করা হলেও ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের বস্তিকে বিনা নোটিসে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। যখন যাকাতের কাপড়ের জন্য বিত্তবানের লোহার গেটের সামনে প্রতি বছর দেশের ছিন্ন বসনের মানুষের পায়ে পিষ্ঠ হয়ে প্রাণ দিতে হয় ।যখন দুর্ণীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মানে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রকল্প বাতিল হয়ে স্বর্থায়নে একটি সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তীব্র অর্থ সংকটের কারনে নির্মাণ কাজ থেমে যায় তখন রাষ্ট্রের এই ভাসমান চিত্রের মধ্যদিয়ে অর্থনীতির প্রকৃত রুপরেখা ও বৈষম্য ফুটে ওঠে।
তথ্য প্রযুক্তির অগ্রসরমানতার যুগে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষাকে গুরত্ব দিয়ে রাষ্ট্রকে অধিকতর জনকল্যাণমূখী করার চিন্তায় মগ্ন তখন বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই সম্রাট আকবরের পাইক পিয়াদার শাসন আমলের দিকে।ইতোমধ্যে দেশের আইন,শাসন,বিচার,প্রশাসন প্রতিটি বিভাগের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যকে খর্ব করা হয়েছে।রাষ্ট্র-যন্ত্রকে পূর্ণমাত্রায় বানিজ্যিক রূপ দেওয়া হয়েছে। মানুষের রাষ্ট্রের কাছে প্রাপ্য মৌলিক অধিকারগুলোতে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।ধনী দরিদ্রের ব্যবধান আকাশ পাতাল সম।তাই এই দেশের এক শ্রেণীর মানুষের জীবন যাত্রায় ফুটে ওঠে পশ্চিমা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভোগবিলাশী জীবনের প্রতিচ্ছবি,অন্যদিকে বৃহৎ এক অংশ অর্থাৎ ১০.৬৪ শতাংশ মানুষের জীবন যাত্রায় ফুটে ওঠে আফ্রিকার পশ্চাৎপদ বুবুক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিবিম্ব।
একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে সেই দেশের কর ব্যবস্থা।কর ব্যবস্থা উন্নত হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ভীত সুদৃঢ় হয়, ফলে বৈদেশিক অনুদান নির্ভরতা কমে আসে,জাতি আত্ননির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যায় এবং সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে উন্নত জীবনের ছোঁয়া।কিন্তু আজও আমাদের দেশের কর ব্যবস্থাকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে।দেশের অধিকাংশ মানুষের কর ব্যবস্থা সম্পর্কীয় নুন্যতম জ্ঞান নেই এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদেরও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।দেশে বৈধ অবৈধ কোটিপতির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেলেও আনুপাতিক হারে রাড়েনি করদাতার সংখ্যা ও কর হারের পরিমান।এই অনিহার কারণ খুঁজতে গেলে যে বিষয়গুলো সামনে আসে,তাহলো কর ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে ব্যক্তিগত ভাবে সবচেয়ে বেশী আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা,কারন তাদের কর ফাঁকি দেওয়া ও কালো টাকার বিশাল অংশ জমা পড়বে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।অন্যদিকে আমাদের মন্ত্রী,এম পি,রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের বাড়ী,গাড়ী ও রাজনৈতিক চাঁদার বড় অংশ আসে ঐ সব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে, ফলে তাদের স্বার্থ রক্ষায় নৈতিকতার অবস্থান থেকে সুপরিকল্পিত ভাবে কর ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে।১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভ্যাট(মূল্য সংযোজন কর) প্রথা চালু হয়।কর আদায়ের এই পদ্ধতি রাষ্ট্রের মহৎ উদ্দেশ্যে প্রচলন করা হলেও পরবর্তিতে দেখা যায় ,এই পদ্ধতি যতটা না রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন করেছে, তার চেয়ে দ্বিগুন ভাবে অসৎ ব্যক্তিদের কোটিপতি হওয়ার পথকে সুগম করেছে।
এই পদ্ধতিতে সরাসরি পণ্য বা সেবার বিক্রয় মূল্যের সাথে ভোক্তার নিকট থেকে মূসক চালানের মাধ্যমে আইনানুগ হারে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর আদায় করে থাকেন।বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ভোক্তার কাছ থেকে আদায়কৃত করের অর্থ আঞ্চলিক কর জোনের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা করা।কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভোক্তার কাছ থেকে প্রতিটি পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের বিপরীতে সংযোজন করসহ মূল্য আদায় করা হলেও মূসক চালান ব্যবহার করা হয় মাত্র দশ শতাংশ বিক্রয়ের ক্ষেত্র।ভোক্তার কর সচেতনতা ও এ সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিক্রেতার নিকট মূসক চালান দাবী করেন না।মূল্য সংযোজন করের নামে ভোক্তার কাছ থেকে আদায়কৃত ৯০ শতাংশ অর্থ সরাসরি চলে যায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকের পকেটে। এই প্রক্রিয়ায় সমাজের টাউট বাটপার শ্রেণীর পকেটে চলে যাওয়া অর্থ রা্ষ্ট্র ও ভোক্তার সঙ্গে এক উন্মুক্ত প্রতারণার কৌশল।এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তাহলে কেন সরকার এসবের বিরুদ্ধে তৎপর হচ্ছে না ?এবং প্রশাসনিকভাবে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র-যন্ত্রের চোখে ধুলো দিয়ে কিভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতারকরা এমন কর্মকান্ড চালিয়ে যান ও পার পেয়ে যান ?এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমার নিজের দেখা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আংশিক বর্ণনার ভিত্তিতে একটা দিক প্রকাশ করছি।
একটি মাঝারি ধরনের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব শোরুমের মাধ্যমে বিক্রয় করেন।তাদের বিক্রয়কৃত প্রতিটি পণ্যের উপর ভোক্তার কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সেবা খাতের পনেরো শতাংশ হারে সংযোজন কর আদায় করেন।এভাবে সারা মাসের বিক্রয়ের ওপর বিশ লক্ষ টাকার সংযোজন কর আদায় করা হয়।কিন্তু মূসক চালান অনুযায়ী সরকারকে দেখানো হয় সংযোজন কর আদায় করা হয়েছে দুই লক্ষ টাকা এবং এই পরিমান অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।বাকী আঠার লক্ষ টাকার আত্নসাৎ করা হয় কিছু কৌশলের অবলম্বনের মাধ্যমে।বিভিন্ন আঞ্চলিক কর অফিসগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যয় করা হয় দুই লক্ষ টাকা, এক লক্ষ টাকা মাসিক বেতনে অফিসে বসিয়ে রাখা হয় অবসরপ্রাপ্ত কোন সচিব বা সেনা কর্মকর্তাকে ,আর এক লক্ষ টাকা রিজার্ভ রাখা হয় তাৎক্ষণিক কোন প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক ঝক্কি ঝামেলা মোকাবেলার জন্য।ঐ সরকারী অবসরপ্রাপ্ত বেতনভোগী ঊর্ধ্বতন কর্মচারীর কাজ হলো ,প্রতিষ্ঠানের অপকর্মগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে ফোন করে লিয়াজো করা, আর বলা ,আমি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বা সচিব জদরুল বলছি,আমি এখন এখন আম জাম ফুড কোম্পানী লিঃ এর জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে আছি।আমাদের প্রতিষ্ঠানের এই সংক্রান্ত বিষয়গুলো যদি একটু দয়া করে দেখেন। ঠিক এই প্রক্রিয়ায় প্রতি মাসে চৌদ্দ লক্ষ টাকা লোপাট করা হয়।বছরে ব্যবসার মুনাফা ব্যতিরেখেই এক কোটি আটষট্টি লক্ষ কালো টাকা জমা পড়ে বাটপার মুনাফাভোগী মালিকের পকেটে।এটা একটা মাঝারি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ,আজ এই ধরনের বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে ছোট বড় হাজার হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা রাষ্ট্রকে ফাঁকি দিয়ে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে।ফলোশ্রুতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে থাকলেও,ব্যক্তি পূঁজিপতির সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে।
দেশে কোন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্ধ হলে সেখানেও চরম নৈরাজ্য।এক কোটি টাকার প্রকল্প বাজেটের অর্থ বরাদ্ধ হলে সরকারের উপর মহল থেকে কমতে শুরু করে ঠিকাদার পর্যন্ত এসে চল্লিশ লক্ষ টাকা অবশিষ্ট থাকে।নির্মাণ প্রকল্পটির স্থায়ীত্বকাল পঞ্চাশ বছর ধরা হলেও চল্লিশ লক্ষ টাকায় ফাঁকিবাজি নির্মাণ প্রকল্পটি বিশ বছর পর ঝুকির সম্মুখিন হতে শুরু করে,ফলে আবারো একই খাতে রাষ্ট্রকে পয়সা ব্যয় করতে বাধ্য হতে হয়।এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য হতে থাকলেও, ব্যক্তির পকেট ভারি হতে থাকে।ক্ষমতার পালাবদল হলে ভালো রাস্তা ভেঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের পকেটে পয়সা ডুকিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন করে সংস্কার কাজ করার রেওয়াজ এখন আর নতুন কোন বিষয় নয়।
এভাবে আজ অনেক রাজনৈতিক নেতা শূন্য থেকে রাজনীতি করতে এসে শিল্পপতি হয়েছেন,আবার অনেক শিল্পপতি ও কালোবাজারি রাজনীতি চর্চা ও রাজনৈতিক জ্ঞান ছাড়াই রড় মাপের রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন।ফলোশ্রুতিতে বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতি এবং ব্যবসায়ের মধ্যে এক নিবীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় যেমন তৎপর তেমনি ব্যবসায়ীরাও রাজনীতিবিদদের স্বার্থ রক্ষায় আরো বেশী তৎপর।তাই রাজনীতি না করে, শুধু রাজনীতিবিদের সেবা করার পুরস্কার স্বরূপ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ার উপহার পাওয়া ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান’ই যেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সাধারণত রাষ্ট্রের ভীত মজবুদ হলে রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তির গুরত্ব নগণ্য হয়ে যায়।রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তার সাংবিধানিক আইন ও নিজস্ব গতিতে, শুধু রাষ্ট্র পরিচালনাকারী ব্যক্তির আগমন ও প্রস্থান ঘটে নিয়মানুসারে। কিন্তু আমাদের দেশ চলে তার উল্টো গতি পথে।এখানে রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তির গুরত্ব ও আধিপত্য বেশী। ব্যক্তি পূজাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় দেশের নীতি নির্ধারণী মহল ব্যস্ত।কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্ম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে এই দেশের মানুষদের যতটা তৎপরতা দেখা যায়,কিন্তু দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতী হলে তার কিঞ্চিৎ তৎপরতা বা উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করা যায় না। ভাবা হয়, গেলে রাষ্ট্রের গেছে তাতে আমার কি? বরং ব্যক্তির গুনগান প্রদর্শন করে যদি দু পয়সা নিজের পকেটে ভরার ব্যবস্থা করা যায়। ভাবা হয়না, রাষ্ট্র ভালো না থাকলে ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদ দিয়ে নিজেও ভালো থাকা যায়না।যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে এক সময়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র সিরিয়ার জনগণের ইউরোপের পথে প্রান্তরে পাসপোর্ট হাতে ভিক্ষাবৃত্তি দেখে মনে করিয়ে দেয়, ব্যক্তিগত সম্পদ থাকা স্বত্বেও রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেওয়ায় ব্যর্থ হওয়াতে আজ ভিক্ষুকের সারিতে নামতে হয়েছে।
এখন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তাদের সমস্যা সংকুল মোকাবেলায় রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী না হয়ে গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মুখাপেক্ষীর সংস্কৃতি। দেশে কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে আমরা বলি না এই কাজটি রাষ্ট্র করেছে,বলি কাজটি হাসিনা করেছে অথবা বলি খালেদা করেছে।সরকারি কর্মচারির বেতন বৃদ্ধি পেলে বলিনা রাষ্ট্র বেতন বৃদ্ধি করেছে,বলি হাসিনা বা খালেদা বেতন বাড়াইছে।তখন মনে হয়, এরা বুঝি রাষ্ট্রের কর্মচারী নন,এরা হাসিনা খালেদার কর্মচারী এবং তাদেরই দাসত্বে নিয়োজিত। আজকের রাজনীতির ধ্বজাধারীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এতটুকু উপলব্ধির উদয় হয়নি যে,একটি দেশের কোন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত না থেকে যদি রাষ্ট্রকে শক্ত অর্থৈনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানো যায় তাহলে ঐ রাষ্ট্র পৃথিবীর অন্যান্য দেশের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং ঐ রাষ্ট্রের ইতিহাস,ঐতিহ্য,সামাজিক,সাংস্কৃতিক, অবস্থা জানার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়।ফলে জাতীয়তার পরিচয়েই প্রতিটি জনগণ বহির্বিশ্বের অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর মানুষের নিকট সম্মানি হয়।যেমন একজন আমেরিকান ,ফরাসি,ইংরেজ,জাপানিজ,মালেশিয়ান,চীনা নাগরিক যদি উন্মাদ কিংবা নিরক্ষরও হয় তবুও তার দেশ ও জাতীয়তার পরিচয়ে আলাদা করে সম্মান পায়।তার দেশের জাতীয়তার পরিচয়ই যেন একটি পশ্চাৎপদ রা্ষ্ট্রের প্রধান মন্ত্রী-সম মর্যাদা।অর্থাৎ একটি অস্থিশীল রাষ্ট্রের মন্ত্রীর থেকে একটি মানবিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক অধিক সম্মানিত এবং নিরাপদ জীবনের অধিকারী।কারণ একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের মন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় দুর্ণীতি,অন্যায়,অনিয়মের ভেতর দিয়ে যে ব্যক্তিগত ভোগ বিলাশ ও নিরাপদ জীবন লাভ করতে হয় ,কিন্তু একটি স্থিতিশীল ও কল্যাণমুখি রাষ্ট্র সেই উন্নত জীবন প্রতিটি নাগরিককে স্বাভাবিক ভাবে প্রদানের নিশ্চয়তা সুনিশ্চিত করতে পারে। জাতিগত অগ্রগতি ও ঐক্যের মানুসিকতাই যেকোন জাতিকে এই সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে।অন্যদিকে জাতির বৃহৎ অংশকে অশিক্ষা ,নিরন্ন ও ছিন্ন বসনে রেখে দলগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন আকাশচুম্বী হলেও,এমন জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রী কিংবা নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেও উন্নত রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভবনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বা নেতা হওয়ার অবজ্ঞায় আমন্ত্রণ পাননা ,তেমনি দেশের গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের অন্য রাষ্ট্রে ব্যক্তিগত ভ্রমণে রাষ্ট্রীয় কোন সম্মানও জোটেনা ।আপনার নামের আগে বা পরে পঞ্চাশটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী ও প্রধান মন্ত্রীর পদবী নগণ্য, এখানে জাতির সামগ্রিক অগ্রগতি ও ভাবমূর্তী মূখ্য।আজ যদি আমাদের দেশকে দ্বিবিভক্ত না করে সত্যিই সামগ্রিক ভাবে জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে ঘাম ঝড়িয়ে কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম অমর করার জন্য সেতু,বিমান বন্দর বা ভবনের নাম ফলক কিংবা পাঁচ পয়সা থেকে হাজার টাকার নোটের উপর প্রতিচ্ছবি সেঁটে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হবেনা।তাছাড়া ঢাঁক ঢোল পিটিয়ে আয়োজন করে তদবিরের মাধ্যমে বিদেশী রাষ্ট্রের কোন সড়কের নামান্তরের জন্য পরিশ্রমেরও প্রয়োজন পড়বে না। আমাদের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ স্ব-মহিমায় বিশ্বের কাছে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবেন।
পৃথিবীর ত্রিশ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা।এর মধ্যে ষোল কোটি বাংলাদেশী এই ভাষায় কথা বলে।জনসংখ্যার বিচারে এই ভাষা উল্লেখযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিক অবস্থানে আমাদের প্রাণের এই ভাষাটি যতেষ্ঠ অবহেলিত।অথচ পৃথিবীর চার পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশের মানুষের মুখের ভাষা আমাদের ভাষার চেয়েও অনেক বেশী কদরযুক্ত ও সমাদৃত।এখানে ভাষার মাধুর্য ও ছন্দগত সৌন্দর্য্যের বিচারে এই সমৃদ্ধি লাভ করেনি।এর মূলে রয়েছে ঐ জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক,সামাজিক,শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি।এই সামগ্রিক সমৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর সেরা যা কিছু সৃষ্টি হচ্ছে, যেমন,শিল্প,সাহিত্য,দর্শন,বিজ্ঞান ইত্যাদির সব ঐ জাতি গোষ্ঠীর ভাষায় রুপান্তরের মাধ্যমে অতি সহজে হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে।ফলে তথ্য প্রবাহের এই প্রতিযোগিতামুলক যুগে সহজে জ্ঞান চর্চার উৎকর্ষ সাধন করে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষের থেকে অনেক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং পৃথিবীর নেতৃত্ব দানকারী দেশগুলোর কাতারে অবস্থান করে নিচ্ছে।তাই এক্ষেত্রেও সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।
নৃশংসতা ,নির্মমতা,বর্বরতা,অসভ্যতার সাথে সমঝোতা করেই বাংলাদেশে মানুষের চলমান জীবনধারা।পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে ইতোমধ্যে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে।নৃশংসতা এখন আর অবাক করা কোন বিষয় নয়।বরং নতুন কি ধরনের নির্মমতা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই প্রতিক্ষার প্রহরগুনে কাটে প্রতিটি মুহূর্ত।
সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাই আমাদের মূল্যায়নের মাপকাঠিতে দাঁড় করিয়ে দেয়।
সিলেটের আলোচিত শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা,খুলনার মোটর শ্রমিককে মলদ্বারে মোটরসাইকেলের পামপারের হাওয়া ডুকিয়ে হত্যা,দেশের বিত্তবান ও প্রভাশালীদের দ্বারা মাঝে মাঝে টিভি পর্দা ও নিউজ পেপারের পাতায় ভেসে ওঠা শিশুগৃহকর্মী নির্য়াতনের বীভৎসতা,শিশু অপহরণের পর মুক্তিপনের অর্থ না পেয়ে হত্যা করে গুম করার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনাগুলো আমাদের মানবিকতার স্তর নিরূপন করে ।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির দেশে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় জনসম্মুখে তরুণীর বিবস্ত্র করার স্পর্ধা ও সাহস এবং কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজ ছাত্রী তনুর ধর্ষিত গলাগাটা নগ্ন লাশ আমাদের সভ্যতার সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। যা এখন থেকে কোন উৎসব আনন্দে অংশগ্রহন করা ও নারীর স্বাধীন চলাচলে সম্মান, সম্ভ্রম ও জীবন নিয়ে ঘরে ফেরার নির্ভয়তায় নতুনরুপে ভীতি সঞ্চার করেছে। এই দেশে জন্ম নেওয়া একজন মানব সন্তানের প্রতিদিন মৃত্যুকে সঙ্গী করেই ঘর থেকে বের হতে হয়,সে জানে তার মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়,রাজনৈতিক সংঘাতে,সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে হতে পারে,এমনকি স্বয়ং সরকারী সিদ্ধান্তে তাকে হত্যা করে তার লাশ খাল বিলে ফেলে রাখা বা বালুর বস্তায় ভরে নদীর তলদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।স্বাভাবিক মৃত্যু চিন্তা যেন এই ভূখন্ডের মানুষের এক অলিক ভাবনা।উন্নত দেশগুলো যখন একটি পাখির স্বাধীন, স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন সুনিশচিত করতে আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করছে তখন আমার ভূখন্ডে অপঘাতে মৃত ব্যক্তির নাম থানার রেজিষ্টার্ড খাতায় পৃষ্ঠা সাশ্রয় করতে তোলাই হয়না।এখান থেকেই মূল্যায়ন করা যেতে পারে, আমরা কেমন মানবিক রাষ্ট্রের বাসিন্দা?
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশগুলোর দাতা সংস্থার যে সব বিদেশী কর্মী আমাদের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ের জন্য নিজের মাতৃভূমি ফেলে এসে কাজ করছেন ,তহবিল সৃষ্টি করে এন জি ও গুলো কার্যক্রম সচল রেখে হাজার হাজার দেশীও এনজিও কর্মীর বেতন ভাতার ব্যবস্থা করছেন ,যাদের মাধ্যমে শত শত এনজিও পরিচালকদের আয়েশী জীবনের ব্যবস্থা সুনিশ্চত হয়েছে , যারা আমাদের সম্মানিত অতিথি সমতুল্য সেই মানুষগুলোর পথে প্রান্তরে পরে থাকা দেশীয় মনুষ্য বিবর্জিত হায়েনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাত্ব লাশ বিশ্বের কাছে আমাদের উদারতা ও মনুষ্যত্বের মান নির্ণয়ে তীর্যক ভাবে প্রশ্নেবিদ্ধ করে।
আজ বাংলাদেশের মানুষের অন্যায়ের সাথে প্রতিনিয়ত আপোষ করতে করতে যাবতীয় অপকর্মগুলো সমাজে ন্যায়রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেওয়ার মনোবৃত্তি তৈরী হয়েছে।ফলোশ্রুতিতে,চোখের সামনে ঘটে যাওয়া শত শত অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদের জন্য সামগ্রীক জাতিগোষ্ঠির ধমনিতে এখন আর শিহরণ জাগায়না।
এমন সরকার ব্যবস্থার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চারপাশের খুন রাহাজানি ,ধর্ষন ,বিশৃংখলা রোধকল্পে আত্নসমালোচনা ও ব্যর্থতার কারণ খুঁজে যথাযত পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে যখন কবিতা পড়ার মত বিবৃতি পাঠ করে বলেন,দেশের আইন শৃংখলা অবস্থা পূর্ববর্তী সরকারে তুলনা অনেক গুন ভালো এবং দেশে শান্ত ও স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে,তখন নিরুপায় হয়ে শোনা ছাড়া কিছু বলার ভাষা থাকেনা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পহেলা বৈশাখে তরুনীর প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানীর ঘটনাকে রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা রক্ষার প্রধান ব্যক্তি যখন কিছু দুষ্ট ছেলের দুষ্টুমি বলে তামাশা করেন তখন সত্যি অবাক হয়ে ভাবতে হয় আমরা কেমন দুর্ভাগা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
বিভিন্ন সরকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও চাকচিক্য রঙিন ল্যামপোষ্টের আলো দেখিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন অগ্রগতির উদাহরণ দিয়ে থাকেন।কিন্তু এই অবকাঠামোর সুবিধা নেওয়ার মানুষের প্রাণের অস্তিত্বই যদি হুমকির সম্মুখে দাড়িয়ে থাকে তাহলে এমন ইট সিমেন্ট ও কনক্রিটের অগ্রগতির কিবা মূল্য আছে। নীতি ও মানবতা বিবর্জিত জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রদর্শিত হয়ে, প্রানহীন অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের গর্ব যেন তামাশা মনে হয়।
আজ মানবিকতার যে বিপর্যয় ঘটেছে তার কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি আলোচনায় বিশেষ গুরত্ব পায় সেটা হচ্ছে শিক্ষা।দেশের পরিসংখ্যানে উচ্চ শিক্ষা হার বেড়েছে ,এই ভূমিতে বেড়ে ওঠা নতুন শিশুটি এখন আর নিরক্ষর থাকছেনা ,স্কুল কলেজ , মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যায়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।কিন্তু শিক্ষার দ্রুত হার বৃদ্ধির এই জনগোষ্ঠীর মানুষ দিন দিন অতি মানবিক না হয়ে কেন অতি অমানবিক হয়ে উঠছে ?একজন শিক্ষিত মানুষ অন্যদের থেকে অধিক মানবিক ও নীতি নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন হবে এটাইতো স্বাভাবিক ধারণা।কিন্তু আমাদের কথিত শিক্ষিত সমাজের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পাচ্ছি তার উল্টো আচরণ।বাংলাদেশের যত অনৈতিক, পাশবিক, অমানবিক কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে তা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত সমাজের নেতৃত্বই ।এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সুশিক্ষিত সভ্য মানুষ তৈরী করছে, নাকি দিন দিন অমানুষ তৈরির ফ্যাক্টরীতে রুপান্তর হচ্ছে।এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধ্রুব কিছু সত্য ঘটনার আলোকে তা বিশ্লেষন করা যেতে পারে।
যে বয়স একটি শিশুর চরিত্র গঠনের, সমাজকে ধীরে ধীরে বোঝার ঠিক সেই বয়সেই আমাদের দেশের একটি শিশু পঞ্চম শ্রেণীর বোর্ড পরিক্ষায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে দেখতে পায় , যে প্রশ্নপত্রে পরিক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য সারা বছর সে পড়াশুনা করেছে সেই প্রশ্নপত্র তার পিতামাতা পরিক্ষার দুই দিন আগে যোগার করে তার হাতে তুলে দিয়েছে।ঠিক এখান থেকেই এভাবে আমাদের কোমলমতি শিশুদের পরিচয় ঘটানো হয় অনৈতিকতার সাথে।
এমন পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশে শিশুটি গোল্ডেন এ প্লাস পেলো,বাবা মা সন্তানের সাফল্যের খবর জানিয়ে ফেজবুক স্ট্যাটাস দিলো,খুশীতে পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে লাড্ডু মন্ডা বিলি করলো,আশার সীমানা আরো বড় করে ভাবলো আমার সোনাধনের ডাক্টার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর কে ঠেকায়।সুকৌশলী চতুর সরকার এই এ প্লাস উৎসবের রেস ধরে জনগণের উদ্দেশ্যে গলা ফুলিয়ে বলবে আমরা ক্ষমতায় থাকলে আপনার সন্তানের এ প্লাস কেউ ঠেকাতে পারবেনা।তাই আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিৎ করতে আমাদের ভোটবিহীন সরকারকে ক্ষমতায় টিকেয়ে রাখার জন্য আপনাদের সমর্থন একান্ত অপরিহার্য এবং নৈতিক দায়িত্ব।
এমন পরিক্ষা ও ফলাফলের মাধ্যমে শিশুর পিতামাতা পেলো সন্তানের গোল্ডেন এ প্লাসের স্বাদ,সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় অর্জন করলো জাতির শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন সূচক আর শিশুটি মুলত শিক্ষা অর্জন করলো অসততার ভেতর দিয়ে অল্প পরিশ্রমে দ্রুত সাফল্য অর্জনের কৌশল।
ঠিক একই প্রক্রিয়ায় ঐ শিক্ষার্থী যখন স্বল্প পরিশ্রমে এস এস সি ও এইচ এস সি পরিক্ষায় এ প্লাস জুটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে তখন দেখতে পাবে স্বল্প পরিশ্রমে জীবনে সফল হওয়ার আরো অদ্ভূত নানা কৌশল ও ব্যবস্থা।
প্রথমেই তার দৃষ্টিগোচর হবে,বিশ্ববিদ্যায়ের মহান শিক্ষকেরা লালদল লীলদলে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত ও শিক্ষার মান উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিবর্তে নিজস্ব আধিপত্য বিস্তার ও আমাদের জমিদার শাসকদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি সি র পদ আরোহণের পথকে সুগম করা , রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে নিজেকে মহামানব হিসেবে আত্নপ্রকাশ করা ,বিভিন্ন সভা সেমিনারে দেশের উজির নাজিরদের পাশে বসে মিডিয়ার সামনে মুখ দেখিয়ে ক্ষমতা জাহির করা ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়ে মহাব্যস্ত।অন্যদিকে যে সব শিক্ষক দেশ ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সততার সহিদ কিছু ভাবেন এবং করতে চান তারা ঐ সব লাল নীল হলুদ দলের প্রভাবে কখনোই তাদের সুন্দর চিন্তার প্রয়োগ করতে পারেনা এবং দলবাজী না করার কারণে নীতি নির্ধারণী প্রশাসনিক দায়িত্ব তাদের নাগালের বাইরেই থেকে যায় ,তাদের পরিচয় বিশ্ববিদ্যায়ের নিরীহ শিক্ষক হিসেবে।
দ্বিতীয়ত যে বিষয়গুলো অবলোকন হবে তা খুবই বাস্তব এবং সত্য , ক্যাম্পাসের মেধাবী ছাত্ররা যখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে হলের একটি সীট জোগার করতে দিশেহারা হচ্ছেন তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন জমিদারী শাসক দলের আশির্বাদপুষ্ট ও পিস্তলের টিগার টেপায় দক্ষ অস্ত্রধারী ছাত্র নেতাটি হলের মেধাবী ছাত্রের জন্য সংরক্ষিত কক্ষটি দখল করে রাজকীয় বিছানা ,ছোফাছেট ,টেলিভিশন সহ আমোদ প্রমোদের সমস্ত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে সারা ক্যাম্পাস শাসন করছে।তার ইশারায় মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নড়ে চড়ে ওঠে।নেতা ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকানগুলোতে তার ব্যবহার্য ও পরিধেয় পন্য সামগ্রির জন্য গেলে তা স্বসম্মানে বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন।মাস শেষে নেতার শাঙ্গপাঙ্গরা ব্যবসায়িক কর্পোরেট অফিসগুলোর কর্ণধারদের সাথে দেখা করা মাত্রই ভক্তির সঙ্গে মোটা অঙ্কের নজরানা পেয়ে থাকেন।ক্যাম্পাসের কোন উন্নয়ন মুলক কাজ বরাদ্দ হলে ঐ বরাদ্দকৃত প্রকল্প বাজেটের একটা অংশ ঠিকাদার কর্তৃর স্বাভাবিক ভাবে নেতার পকেটে চলে আসে ।এমন অবস্থায় একজন শ্রমজীবি পিতার মেধাবী সন্তানটির যখন অর্থাভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমসিম খেত হচ্ছে তখন ক্ষমতাশীন আশির্বাদপুষ্ট টিগার টেপা ছাত্রনেতা ছাত্রবস্থাতেই চার চাকার টয়োটা গাড়ি চেপে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছে।দেশের প্রধানমন্ত্রীর কোন রাষ্ট্রীয় সফরে সরকারী কোষাগারের টাকায় ঐ ছাত্রনেতাই সফরসঙ্গী হয়ে দেশ বিদেশ পরিভ্রমন করছে।কারন আর দু দিন পরেই ক্যাম্পাসের নেতৃত্ব থেকে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের যখন একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় ভালো ফলাফলের জন্য দিন-রাত পড়াশুনা করতে হচ্ছে , অথচ ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসী ছাত্ররা সারা বছর হল দখল ,চাঁদাবাজী,টেন্ডারবাজী করেও ক্ষমতাশীন লাল নীল অথবা হলুদ দলের শিক্ষকদের সহায়তায় পরিক্ষার আগে স্বল্প সাজেশনের প্রশ্নপত্র পড়ে ভালো ফলাফলের সাথে পরিক্ষায় পাশ করে যাচ্ছে। টিগার টেপা ছাত্রের ভালো ফলাফল করানো যেন ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষকদের মহান দায়িত্ব ,কারন রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা জমিদারী শাসনকে স্থায়ী করার অংশ হিসেবে ঐসব ছাত্রদেরকে অস্ত্র হাতে সারা বছর বিরোধী শক্তি হটাতে রাজপথে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে,কখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ক্ষমতাশীন দলের শিক্ষকদের আধিপত্য ঠিক রাখতে সরকার বিরোধী শিক্ষকদের থ্রেড ,ভয় ভীতি প্রদর্শন করতে হয়েছে।তাই স্বভাবতই ঐ সব ছাত্রদের রক্ষা করাও যেন শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব হয়েই দাড়ায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে এমন সম্পর্ক ও কার্যক্রমের ফলে ছাত্র শিক্ষক রাজনীতিতে এখন আর মৌলিক কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী ছাত্ররা ক্যাম্পাসে তাদের ইচ্ছা ও স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাকারী শিক্ষকদের আজ চর-থাপ্পড় মারতেও কোন দ্বিধা-বোধ করছেনা।বাংলাদেশের শিক্ষক ছাত্রের শ্রদ্ধা ও শ্নেহের সম্পর্কের সুদীর্ঘ যে ঐতিহ্য তা আজ বিলুপ্তির পথে।সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাশীন ছাত্র সংগঠনের অসভ্য ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষকদের র্যালি ভন্ডুল করে তাদেরকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা তাই ই প্রমান করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাবর্ষ পরিসমাপ্তির পর ছাত্রছাত্রীরা তাদের অর্জিত ফলাফল ও মেধা অনুযায়ী দেশের সেবা ও নিজের কর্মসংস্থানের জন্য মেধার স্বাক্ষর রেখে কর্মে নিয়োগ হবে,এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন তা পরিবর্তন হয়েছে।বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন যে ,বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা ছাত্রছাত্রীরা কে কি করবে তা আজ তাদের উপর নির্ভর করেনা ,নির্ভর করে আমাদের মাথার উপর চেপে বসা পালাবদলকারী জমিদার শাসকদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর।এই প্রক্রিয়ায় যে ছাত্রটি মানুষ কোপানো গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তাকে নিয়ে আসা হয় ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে।
দেশের গণতান্ত্রিক পন্থাকে ছুড়ে ফেলে ক্ষমতার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার অন্যতম কূট পন্থা হচ্ছে ,দেশের কর্মরত আমলা ও রাষ্ট্রীয় গুরত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিভাগগুলোর কর্মকর্তাদের অতি আনুগত্য ও সমর্থন অর্জন করা।সেই কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের মাঝারী নেতৃত্বের ছাত্রদের বি সি এস(বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরিক্ষাসহ অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ চাকুরী নিয়োগ পরিক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, দলীয় সনদ ও তদবিরের ভিত্তিতে সরকারের গুরত্বপূর্ণ পদে বসানোর ব্যাবস্থা করানো হয়।মন্ত্রী এম পি’দের দশ বারো লক্ষ টাকায় নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ রেখে কিছু পদ সংরক্ষণ করা হয়।আর এক শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য যা ক্ষমতাসীনদের ন্যায় শাসনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।যেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে শিক্ষা জীবন শেষ করছে, কিন্তু দলবাজী না করার অপরাধে দেশের গুরত্বপূর্ণ পদে বসে দেশ সেবার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন ধুসরে পরিণত হচ্ছে।জীবন জীবিকা ও বাস্তবতার প্রয়োজনে এসব মেধাবীদের জুটিয়ে নিতে হচ্ছে কোন মুনাফাভোগী মালিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দাসত্বের চাকুরী অথবা গ্রামের বেসরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষকতা।তাও না জুটলে সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞানকে ছুড়ে ফেলে বিদেশ গিয়ে গায়ে খাটা শ্রমিকের জীবন বেছে নিয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচল রাখার জন্য আত্নসত্বাকে বলি দেয়া।
ছাত্র অবস্থাতেই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন, পিস্তলের টিগার টেপায় দক্ষতার প্রমান এবং দলের এ্যাটাকিং ফোর্স (ছাত্র সংগঠন)’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐ অস্ত্রধারী ক্যাম্পাস শাসন করা ছাত্রনেতাই তার নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন লাভ করবে।দু ট্রাম এম পি হওয়ার পর তিনিই হবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী ।তার হাত থেকেই বিভিন্ন পুরস্কার, পদক গ্রহণ করে দেশের কথিত বুদ্ধিজীবী,সাংস্কৃতিক কর্মী,শিক্ষক জীবন সার্থক করবেন। তিনিই ষোল কোটি বাঙ্গালীকে উদ্দেশ্য করে ন্যায় নীতি,সত্য,আদর্শ,মানবতা,মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাসের বানী শোনাবেন।
উপোরোক্ত বিশ্লেষনকৃত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন করার পর স্বল্প পরিশ্রমে এস এস সি ও এইচ এস সি পরিক্ষায় এ প্লাস পাওয়া ছাত্রটি স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবারো স্বল্প পরিশ্রমে জীবনের চূড়ান্ত সফলতার পথটিই বেছে নেবেন। আর এটাই আমাদের বর্তমান বাস্তবতা।
উপরোক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগকৃত আমলারা আজ তাদের দেশের প্রতি মূল দায়িত্ব কর্তব্য ভূলে গিয়ে দুষ্কৃতি শাসকদের আনুগত্য করার মাধ্যমে দেশকে একটি বৈষম্যমূলক এবং মেধাশূন্য জাতি হিসেবে এগিয়ে নিতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে।যেখানে একজন আমলা’র নিজকে জনগণের টাকার বেতন ভাতায় পোষ্য কামলা ভাবার কথা। অথচ তাদের কাছে কোন সেবার জন্য গেলে দলীয় পরিচয় অথবা নজরানা প্রদান ব্যতিত কোন সেবা পাওয়াই এখন দুঃসাধ্য।রাজনৈতিক নিয়োগ ও ক্ষমতাশীন শাসকদের আশির্বাদ সাথে থাকায় এদের আচরণের মধ্যেও ফুটে ওঠে জমিদারের স্বরুপ।
আবার ক্ষমতার পালা বদলের ফলে অথবা কূট কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হলে, যেসব আমলারা ক্ষমতাশীনদের আশীর্বাদচ্যুত হন, তখন অতি খোদাভীতি রাজনৈতিক শাসন আমলের নিয়োগকৃত সুন্নতি দাড়িওয়ালা আমলা, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শাসকদের আমলে সুন্নতি দাড়িকে ফ্রেঞ্চকাটে রুপান্তর করেন এবং তার কার্যালয়ের সামনে শাসক দলের মহামানবের মূর্তি প্রতিস্থাপন মাধ্যমে পুষ্পমাল্য দ্বারা জনগনের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পনের ব্যবস্থা করে আশির্বাদপ্রাপ্ত হন এবং ক্ষমতার দাপট অব্যহত রাখেন।
একটি দেশের কবি, সাহিত্যিক,দার্শনিক,শিল্পী,বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষক,সাংবাদিকরা হচ্ছেন জাতির আদর্শের মুকুট স্বরূপ।এদের আদর্শিক চিন্তার প্রতিফলন জাতিকে সুদূর প্রসারী লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করে।এই শ্রেণী পেশার মানুষেরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যানের চিন্তায় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে থাকেন।তাদের নিঃস্বার্থপরতার স্বীকৃতির মাধ্যমে আরো সৃষ্টিশীল কর্ম প্রত্যাশা করা হয়।প্রত্যেক দেশের মত আমাদের দেশেও রয়েছে একুশে পদক,স্বাধীনতা পদকের মত সম্মান প্রদান,মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির ব্যবস্থা।এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, এই স্বীকৃতি কি প্রকৃত গুনি ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়? এবং কি কর্মের প্রতিদান স্বরুপ দেওয়া হয়?বিগত বছরগুলোর পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের খোলা চোখে মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে যে ,তাদের পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে যতটা না কর্ম ও গুনের মূল্যায়ন করা হয়েছে ,তার চেয়ে তাদের দলীয় গুণকীর্তনকে বেশী গুরত্ব দেওয়া হয়েছে।বি এন পি সরকারের আমলে জিয়াউর রহমানের গুণগান ব্যতিত পুরস্কার প্রাপ্ত গুনি ব্যক্তি চোখে মেলা যেমন দুষ্কর, তেমনি আওয়ামী সরকারের আমলে মুজিব বন্দনা ব্যতিত এই পুরস্কারগুলো যেন কল্পনাতীত ব্যাপার।তাই আমার প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুনের রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক সব পুরস্কার অর্জনের পরও যখন স্বাধীনতা পদক অপ্রাপ্তির আক্ষেপের কষ্ট তাকে তাড়া করে ফেরে, তখন সরকার পরিবর্তন হলে তার জীবদ্দশায় এই অপ্রাপ্তির আক্ষেপ আর কখনোই ঘুচবে না, সেই আশংকা বুঝতে পেরে নিজেই তার প্রিয় সরকারের নিকট থেকে পুরস্কারের সনদ ও ক্রেষ্টটা চেয়ে নিতে ভূল করেনি। এমনাবস্থায় মনে হলো, তিনি তার লেখালেখি জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে লেখেননি,লিখেছেন রাষ্ট্রীয় সনদ,প্রধান মন্ত্রীর সাথে ছবি তুলে ড্রইং রুমের দেওয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা ও মেটালিক ক্রেষ্ট পাওয়ার আশায়। দেশের আজকের দুঃশাসন ও অরাজক মুহূর্তগুলোতে এই শ্রেণীর মানুষগুলোর প্রতিবাদী ভূমিকার পরিবর্তে নিরবতাই প্রমান করে দেয় পুরস্কার প্রাপ্ত বিবেকবানের সনদধারী ব্যক্তিরা কতটা আত্নকেন্দ্রীক ও বিবেক ইজারাদার। আমাদের দেশের এই শ্রেনী পেশার অধিকাংশ ব্যক্তিই আজ জাতির বৃহত্তর স্বার্থের চিন্তার চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমে সমাজের সস্তা জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য দলীয় তোষামোদীতে বেশী মগ্ন। আর যারা বন্ধক-বিহীন বিবেক নিয়ে গণ-মানুষের স্বার্থে সত্যনিষ্ঠ কথা বলেন তাদের পুরস্কার স্বরুপ প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় হয়রানী,মামলা,হামলা। শ্রদ্ধেয় ভাষা সৈনিক মতিনের মতো দেশ প্রেমিক মানুষের শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতায় যখন রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে কার্পণ্যতা পরিলক্ষিত হয় তখন মনে হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা মানুষগুলো কতটা মানসিক হীনমন্যতা ও দীনতায় ভূগছে।শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে সুস্থ ধারা জাতিকে সুসভ্য হতে পথ দেখাবে সেই ক্ষেত্রেও আজ পচন ধরেছে।গণতন্ত্র নামধারী দলবাজির দেশে কোন দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়া দোষের নয় ,কিন্তু তার মানে এই নয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য অথবা প্রাপ্ত পুরস্কার টিকেয়ে রাখার জন্য ক্ষমতার মসনদ আরোহনকারী শাসকদের অন্যায় অনিয়মকে মৌনতার মধ্য দিয়ে সমর্থন করতে হবে ,নতুবা মিডিয়ায় গলাবাজী করে তাদের ইমেজ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে হবে !
দেশের চাটুকার শ্রেণীর কথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের রাষ্ট্রীয় সম্মানের নানা ব্যবস্থা থাকলেও, আজও গড়ে তোলা হয়নি সামগ্রিক পেশাগত সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানের সমতার সংস্কৃতি।যে কৃষক মেধা ও হাড়ভাঙ্গা শ্রমের সমন্বয়ে আমাদের মুখে প্রতিদিনের অন্ন তুলে দেয় তাকে আমরা অবজ্ঞা করে ডাকি চাষা বলে।যে মানুষগুলো গভীর সমুদ্র ও উত্তাল নদীর বুক থেকে জীবন হাতে নিয়ে মৎস আহরণ করে আমাদের খাদ্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তাদেরকে ডাকি জাওলা বলে।যারা প্রতিদিন সবার আগে ঘুম থেকে উঠে শহর ও নগরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব নিয়েছে তাদেরকে ডাকা হয় মেথর বলে। আর গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষদের বলা হয় চাকর বাকর।এই মহৎ শেণী,পেশার কাউকে যখন রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে থাকা কোন ব্যক্তি দৈব্যক্রমে বুকে টেনে নেয় তখন পত্র-পত্রিকায় শিরোনাম হয়ে ছবিসহ খবর ছাপা হয়, বলা হয়, এ যেন মহানুভবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।এখান থেকেই বোঝা যায় আমাদের বৈষম্যের সীমা রেখার দূরত্ব কত দূর এবং কেমন শ্রেণী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের বসবাস।অথচ রাষ্ট্রীয় চেয়ারে বসে হত্যার চক্রান্তকারী খুনির নামের আগে মহামান্য,রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করা ব্যক্তিবর্গের নামের আগে মাননীয়,প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ঘুষখোর সরকারী চাকুরের নামের আগে সম্মানিত।অপকর্ম ছাড়া যেসব ব্যক্তি বিশেষের কোন মহান কৃতকর্ম নেই তাদের নামের আগে কৃতি সন্তান, বিশেষ কোন মহৎ কর্ম ছাড়াই নামের আগে স্বঘোষিত ‘বিশিষ্ট’।এ এক হাস্যকর ও বেদনার সংস্কৃতি আমাদের। এই শব্দগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এক জাতীয় প্রতারণার ভেতর দিয়ে সমগ্র জাতিকে আজ ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।সততার মানদন্ডে সমাজের নেতৃত্ব নির্ধারণ নয়,অপকর্ম ও অর্থের মাপকাঠিতে সামাজিক নেতৃত্ব আজ প্রতিষ্ঠিত। আমরা যে পেশার মানুষকে মেথর বলি, সেই মেথর ও দেশের মন্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা ও দৃষ্টিভঙ্গি যতদিন সমান না হবে ততদিন আমরা নিজেদেরকে উদার জাতি বলি কিভাবে ?
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মোড়কে ঢাকা এক রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের অবস্থান।এমন আজব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সারা জীবন রাজনীতি করলেও কখনো সভাপতির আসনে বসে দলকে যেমন নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখা যাবে না ,তেমনি শত যোগ্যতা থাকলে প্রধান মন্ত্রীর চেয়ারে বসে শক্ত হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার চিন্তা কোন রাজনৈতিক করতে পারেনা।এই পদগুলো উত্তোরাধিকার সূত্রে নির্ধারিত।এই ক্ষেত্রে অর্জিত যোগ্যতা গৌন, বংশ ও জন্ম পরিচয় মূখ্য।একজন রাজনৈতিকের সর্বোচ্চ গন্তব্য উজির নাজির পর্যন্ত।এর মধ্যেও পাঁচ বছর অন্তর অন্তর দেশের মানুষকে ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সত্ত্বাধিকারী পরিবারগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি পরিবার নির্বাচিত করার রীতি বা রেওয়াজ পরিচালিত হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। তাই এই ধরনের শাসন ব্যবস্থায় যেহেতু গণতন্ত্রের গণ অর্থাৎ জনগনের একটু অংশগ্রহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাও বহাল রাখা হয়েছে, তাই এই দুইয়ের সমন্বিত শাসন ব্যবস্থাকে বলা যেতে পারে গণ-রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা।এই গণ-রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে বর্তমান দেখা দিয়েছে একনায়তন্ত্রের প্রাদুর্ভাব।যে পরিবারকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় সেই পরিবারই তাদের শুভাকাঙ্খী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্য করে,নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে, জনগণের ভোট ব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে, রাষ্ট্র ক্ষমতাকে স্থায়ী করার ব্যবস্থা করে ফেলেন।এখানে জনগনের আন্দোলন সংগ্রাম ও বহির্বিশ্বের আলোচনা সমালোচনাকে উপেক্ষা করে নির্লজ্জ বেহায়ার মত স্বস্থানে স্থির থাকেন।এই গণ-রাজতান্ত্রিক শাসকদের চরিত্রে রাজকীয় আচরণের পরিবর্তে ফুটে ওঠে গ্রাম্য মোড়লের আচরণ।
একটি দেশের আমজনতা সাধারণত দেশের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিবর্গকে মডেল হিসেবে তাদের কার্যক্রম ও আদর্শকে অনুসরণ করে থাকে,এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে সামাজিক ও জাতীয় চরিত্র এবং মানুসিকতা।কিন্তু বর্তমানে আমাদের নীতি নির্ধারণীর চেয়ারে যারা বসে আছেন তাদের চরিত্র ও আদর্শের ছায়া যদি আমাদের সামগ্রিক জাতীয় চরিত্রকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে তা হবে আমাদের জন্য এক ভয়ংকর বার্তা
একটি জাতির মূল-শিকড় হচ্ছে ঐ জাতির নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য।একটি শিশুকে জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তাকে দিতে হয় শিকড়ের সন্ধান অর্থাৎ সঠিক ইতিহাস জ্ঞানের মাধ্যমে দেশাত্ববোধকে জাগ্রত করা। অথচ আমাদের দেশের একটি শিশুকে পাঠ্যক্রমের শুরুতেই শিক্ষা দেওয়া হয় দলীয় সরকারগুলোর মনগড়া আত্ন-বন্দনা মূলক ইতিহাস।যার ভেতর দিয়ে দেশ প্রেম জাগ্রত করার পরিবর্তে চলে কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ আনুগত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা।স্বাধীনতার ৪৫ পর পার হয়ে গেলেও , স্বাধীনতার ঘোষক কে ?তা আজও রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকেরা স্থির করতে পারেন নাই।উভয় পক্ষই নিজেদের মত করে নতুন প্রজন্মের কাছে যুক্তি উপস্থাপন করেন।স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ?তা নিয়েও আজ সংশয়ের সৃষ্টি করা হয়।হয়তো এ বিষয়টিও ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে আবার পরিবর্তন হতে শুরু করবে।হয়তোবা বি এন পি ক্ষমতায় আসলে রাষ্ট্রীয় ভাবে নতুন প্রজন্মকে শেখানো হবে প্রয়াত রা্ষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশর প্রথম রাষ্ট্রপতি।ক্ষমতার পরিবর্তের ফলে লুটপাটকারী চরিত্র পরিবর্তনের সাথে সাথে ইতিহাস পরিবর্তনকারী এমন জাতি পৃথিবীতে সত্যি বিরল।ক্ষমতাসীনদের আশির্বাদ পাওয়ার আশায় এই অপকর্মে সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কিছু দুঃচরিত্রের নামের আগে বুদ্ধিজীবী লেখা ব্যক্তিবর্গ।এই হীন স্বার্থের প্রতিযোগীতায় প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।এই স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলে রাজাকার অর্জন করতে পারে মুক্তি যোদ্ধার স্বীকৃতি,অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মুক্তিযোদ্ধার নামে আগে লাগিয়ে দেওয়া হয় রাজাকারের কলংকের কালী।এটাই আমাদের চরম বাস্তবতা।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা, আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৯০ সালে স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর স্বপ্ন দেখা হয়েছিলো একটি সুসংহত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের।মনে করা হয়েছিলো,এখন থেকে মানুষের মত প্রকাশের অধিকার,মুক্ত রাজনীতি চর্চা ও মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত এর ব্যাপারে দেশ এক নবদিগন্তের দিকে যাত্রা শুরু করবে।কিন্তু দুঃখ, দেশ এগিয়েছে তার উল্টো পথে,আটকা পরেছে পরিবারতন্ত্রের ষড়যন্ত্রের আবর্তে।এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বাধা হয়ে দাড়িয়েছে,তাদেরকেই সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে।দিতে হয়েছে চরম মূল্য,আর এই ধারা এখন বাংলাদেশের রাজনীতির অপরিহার্য অঙ্গ।এখানে সহনশীলতা,শ্রদ্ধা ও জাতিয় ঐক্যের রাজনীতি ১০০% অনুপস্থিত।
শত শত লাশের উপর সওয়ার করে, সংবিধানের দোহাই দিয়ে আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এক ভয়ংকর দানবীয় চরিত্রে আওয়ামীলীগ সরকার।জনগনের জন্য সংবিধান নাকি সংবিধানের জন্য জনগন।এই বিষয়টি বুঝেও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ভোট বিহীন এক নির্বাচনী খেলা দেখিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা খামচে ধরে আছে এই দল ও তাদের সহযোগী রাজনৈতিক সহোযোগীরা।তারা জানতো নিরপেক্ষ ও সব দলের অংগ্রহন মূলক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব নয়।কারণ জনগণ তাদের পূর্বের বি এন পি সরকারের জুলুম ও লুটপাট থেকে পরিত্রানের আশায় নিরঙ্কুশ ভাবে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলো।কিন্তু পূর্বের সরকারের দূর্ণীতি ,জুলুম ও লুটপাটের ধারা থেকে না বেরিয়ে বরং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মত পাল্লা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।পদ্মা সেতু দুর্ণীতি ,শেয়ার বাজার কেলংকারি,ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ(ত্রিশ হাজার কোটি টাকা),মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সীমাহীন দলীয়করণ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে শত শত মানুষ হত্যার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্মমতা ও অপকর্মের এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।তাই জনগণ এদের থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।উপজেলা পরিষদ ও কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির মাধ্যমে তা সুনিশ্চিত হয়েই এই চলমান জোরদখল প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাকে চেপে ধরেছেন।পরবর্তীতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেলো ,দলীয় প্রতিক বরাদ্ধের মাধ্যমে নির্বাচনী নাটক মঞ্চায়নের করে কোঠা ভিত্তিতে মেয়র ও চেয়ারম্যান পদ বন্টন করে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রদর্শনের নয়া-কৌশল চলমান হাস্যকর গণতন্ত্র চর্চায় এক নতুনত্ব মাত্রা যোগ করেছে। এভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকার হয়তো তার দুর্ণীতিবাজ মন্ত্রী ,এম পি ,নেতাকর্মীদের রক্ষা করা,সরকারের নেতিবাচক ইমেজকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা এবং ক্ষমতাকে আরো পাকাপক্ত করার প্রস্তুতিমূলক সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন।কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ধ্রুব এবং কঠিন সত্য হচ্ছে সময় সব সময় কারো একার পক্ষে থাকেনা,কখন চরম ঘাতকতাও করে।আজ হয়তো বৈধ অবৈধ সময়কাল মিলে ভিশন ২১ এর লক্ষ্যে নিয়ে এগিয়ে চলছে এই সরকার।কিন্তু মনে রাখতে হবে দীর্ঘ দিনের ক্ষমতা বঞ্চিত আপনাদের মতই ক্ষুধার্ত হাঙ্গর কুমিরের দল বি এন পি উন্মুখ হয়ে আছে ভিশন ৩১ এর কৌশল এঁটে একই পথে আপনাদের গ্রাস করতে।যদিও আজকের রাজনীতির যে রূপরেখা দাড়িয়েছে তা পূর্ববর্তী সরকারের ক্ষমতা স্থায়ী করার কূটকৌশল ও অভিজ্ঞতারই ফসল।কারন ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে বি এন পি সরকার ভিন্ন পথে পুনরায় ক্ষমতা দখলের যে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলো তা আওয়ামীলীগকে অধিক সতর্ক ও ক্ষমতা সচেতন করে তুলেছে।ফলে বি এন পি আজ নিজের কাটা খালে পড়ে নিজেই হাবুডুবু খাচ্ছে।আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সৃষ্ট রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির গোলক যেমন তাদেরকেও ঘূর্ণীপাক খাওয়াচ্ছে,অন্যদিকে সমস্ত জাতিকে ফেলে দিয়েছে চরম সংকট ও হতাশার সাগরে।আজকে দেশের রাজনৈতিক কোন মিছিল মিটিং বা কর্মসূচিতে সচেতন দেশপ্রেমিক জনতার অংশগ্রহন ও সম্পৃক্ততা নেই।দেশের প্রতিটি জনগণ ইতোমধ্যে বুঝে গিয়েছে যে, চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের সাথে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কোন ইস্যু নেই।রয়েছে মিথ্যে আশ্বাসের ফুলঝুরি।সাধারণ মানুষ রাজনীতির দুষ্টচক্রের ফাঁদে আটকা পড়েছে তাই ভোট দিতে রাজী কিন্তু কাউকে ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়ে দেওয়ার জন্য রাজপথে গিয়ে জীবন দিতে রাজী নয়।যার দরুন আজ রাজপথে সরকার হটানোর আন্দোলনের নামে যে ধ্বংসলীলা ও প্রাণহানি দেখি তা কেবলই অর্থের বিনিময় মূল্যে তৈরীকৃত সাজানো নাটক মাত্র।তাই ক্ষমতা দখলের খেলায় ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দল ও শক্তিশালী প্রশাসনের সাথে প্রেট্রল বোমা আর ফেজবুক যুদ্ধ করে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া যেন এক দুষ্কর ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
এমন রাজনীতি চর্চার ফলে রাজনৈতিক দলের সত্ত্বাধিকারী পরিবার ও তাদের দোসররা যেমন দিশেহারা,অন্যদিকে কোটি কোটি অধিকার বঞ্চিত জনগণের মনের মধ্যে অগ্নিগিরির মত জমাটবদ্ধ আজ ক্ষোভের আগুন।মনের এই জমাটবদ্ধ আগুন যেদিন বিস্ফোরিত হয়ে দাবানলের মত গ্রাস করতে শুরু করবে, সেদিন নিশ্চিৎ বাংলাদেশের অস্তিত্ব থেকে মুছে যাবে এই ভন্ড রাজনীতি ব্যবসায়ীদের নাম, ইতিহাসের বাস্তবতায় ঘৃনাভরে স্মরণ করবে অনাগত প্রজন্ম।
একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কি ঘটছে তা আজ বহির্বিশ্ব ছবি মত দেখতে পারেন এবং মূল্যায়ন করতে পারেন।বিদেশ থেকে কাগজের সনদ ও মেটালিক ক্রেষ্ট বিমানে বহন করে এনে উল্লেখিত সমস্যার সমাধান ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তী বৃদ্ধি করা যায়না এবং ক্রেষ্ট্রের আলোর ঝিলিক দিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত জনগোষ্ঠীকে আলোকিত করা যায়না।দরকার হিংসা বিদ্বেষ ঝেড়েফেলে, বানিজ্যিক দেশপ্রেমের মানুসিকতা পরিহার করে, উদার হৃদয়ে দেশের সব মানুষকে আপন ভেবে, অগ্রগতির জন্য এক মন্ত্রে দীক্ষিত করা।
কোন ব্যক্তি বিশেষের পুরস্কার অবশ্যই একটি জাতিকে গৌরবান্বিত করতে পারে, যদি ঐ জাতি গোষ্ঠীর প্রতিটি মানুষ অর্জিত পুরস্কারের মর্মার্থ বুঝতে পারে।অর্থাৎ সুশিক্ষিত ও সমাজ সচেতন হয়।তা-নাহলে ঐ পুরস্কার অর্জিত ব্যক্তির একান্তই চিত্তানন্দের বিষয় ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)