আমাদের দেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে। দেশের রাজনীতি যেহেতু ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ উদ্ধারের কৌশলের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন খুব সহজ। বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গা শঙ্কট সারা পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে তেমনি মানবতার এই বিপর্যয়ের চিত্র বাংলাদেশের হৃদয়প্রাণ মানুষের মনকে কাঁদিয়েছে।আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীর হাজারো সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা জনপদ আরও দশ লক্ষ মানুষের আশ্রয় দিয়ে তাদের প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। উদ্দেশ্যও মানুষ বেঁচে থাক ।দেশে ও আন্তর্জাতিক ভাবে সমালোচিত বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও এই বিপদগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পাশে থাকায় দেশের মানুষের সমর্থন ও প্রশংসা পেয়েছেন। পরবর্তীতে এই আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের স্বভূমিতে ফেরত যাবে কিনা কিংবা পাঠানো যাবে কিনা তা আলাপ আলোচনার নামে বাকী বিষয় ।অর্থাৎ সত্য ও বাস্তবতা হল আমাদের ঘাড়ের উপর দশ লক্ষ নিরন্ন ও নিপীড়িত মানুষের দায়িত্ব। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পর থেকেই একটা বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামেলীগের মধ্যে দারুণ ভাবে আলোচনা হচ্ছিলো যে ,রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয় দেয়ার কারণে তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নোবেল পুরষ্কারের শান্তি বিভাগের সনদপত্র ও ট্রফি অর্জন করবেন। ডঃ ইউনুস এর নোবেল পুরষ্কার নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের যে ক্ষোভ রয়েছে তার মোক্ষম জবাব দেবেন। দুঃখের বিষয় এ বছর নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে কাজ করছে এমন একটি সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপন্স বা আইক্যান-এর নাম ঘোষণা করেছে।
এখন একটা প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়, তাহলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার পর থেকে কেন শেখ হাসিনার নোবেল পুরষ্কারের প্রসঙ্গ সামনে এসে দাঁড়ালো? রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার সঙ্গে নোবেল পুরষ্কারের কি যোগসূত্র ?
কোন অঞ্চলে যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কোন স্বার্থের জন্য অরাজকতা সৃষ্টি করে তখন অরাজকতার মূল কারণকে আড়াল করার জন্য ঐ অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ধর্মীয় সংঘাত প্রচার করে তাদের অশুভ উদ্দেশ্যকে আড়াল করার চেষ্টা করে। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যে সংঘগুলো খোলা হয়েছে তার অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর আদেশ ও নির্দেশে। ফলে অরাজকতা তৈরির পর সবার আগে ওই অঞ্চলে শান্তি সংঘের ত্রাণের বহর ওই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর নির্দেশেই পৌঁছে যায়। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংঘাতময় অঞ্চলেকে জনশূন্য করে বাস্তুচূত মানুষের একটি পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও তাদের পূর্ব থেকেই থাকে। ফলশ্রুতিতে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া চলমান নির্মমতা,শিশুর বীভৎস লাশ, নারীর উপর চালানো পাশবিকতা দেখেও পৃথিবীর চালক বা মুরব্বীদের কোন তড়িৎ কর্মপন্থা চোখে পড়েনা। ধ্বংসলীলা শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু হয় বিবৃতি ও ফলহীন আলাপ আলোচনার পর্ব।
প্রশ্ন হল আমরা কি এমনি বিশেষ শক্তির স্বার্থ উদ্ধারের কৌশলের বলি হলাম কিনা ?
সন্দেহ থেকেই যায়,
এই দশ লক্ষ ভিনদেশী নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কি বাংলাদেশের অশুভ শক্তি কর্তৃক নোবেল পুরষ্কারের সনদ ও ট্রফির প্রলোভনের বোঝা, নাকি মানবিকতার সত্যিকারের দ্বার উন্মোচনের উপহার ?