শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
প্রাণহীন কোন প্রতীক নয়, আপনার নির্বাচিত নেতা হোক মনুষ্য প্রাণের অধিকারী
শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮
বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির কালো অধ্যায় এবং আগামীর বাংলাদেশ
উপরে যে মানুষগুলোর ভালোবাসার বিবরণ দিলাম এই ভালোবাসা হল বাঁচার জন্য, এই ভালোবাসা হল ভয়ের, এই ভালোবাসা হৃদয়ের গভীর থেকে উদ্ভব শ্রদ্ধার কোন ভালোবাসার প্রদর্শন নয়।ঠিক এমনি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাগরে নৌকা ভাসিয়ে আজ আমাদের সরকার জনগণের উন্নয়ন সাধন চালিয়ে যাচ্ছে ।
যে দল ও দলের নেতার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দলের প্রতি দল মত নির্বিশেষে কৃতজ্ঞতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাতো অন্তরের গভীর থেকে উদ্ভব হওয়ার কথা, ভীতির থেকে নয় । যে নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত, তাদেরকে সত্য তুলে ধরে, যুক্তি উপস্থাপন করে , ভালোবাসা দিয়ে প্রকৃত সত্যের দিকে ধাবিত করাটা ছিল মূল দায়িত্ব।প্রকৃত সত্য এই যে, ভীতির শ্রদ্ধা, প্রশংসা এবং চাটুকারদের বিজ্ঞাপনী ভালোবাসার চাঁদর মুড়ি দিয়ে চারপাশ না দেখে দম্ভের সহিত সময় পার করছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দলটি ।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যারা এই দলটির নেতৃত্বে এসেছে তাদের কাছে স্বাধীনতার চেতনা হল, রাস্তার ফকির যেমন শরীরের দীর্ঘ দিনের পুষে রাখা ঘা প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষের করুণা অর্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা, তেমনি আজ এই দলটির প্রতিটি স্তরের নেতা কর্মীদের স্বাধীনতার চেতনা হল ঐ রাস্তার ঘা ওয়ালা ফকিরের মতো। এই চেতনার ধোঁয়া তুলে রুটি রুজির মেয়াদকে আরও দীর্ঘ করার জন্য আপামর মানুষের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিয়ত হরণ করে চলছে ।বাংলাদেশে অর্থ সম্পদ লুটের রাজনীতির ধারা সুদীর্ঘ কিন্তু এই লুটের ধারাবাহিকতার সঙ্গে আজকের এই সরকার বিরোধী মতাদর্শের মানুষের গলা ছেপে ধরে লুট করেছ কণ্ঠস্বর। অর্থাৎ চোখ দিয়ে দেখা যাবে কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের করা যাবেনা ।
কোন শাসক গোষ্ঠী যখন কোন জাতির উপর দানবের স্বরূপে চেপে বসে তখন তাদের স্বপক্ষে দুই ধরনের সমর্থক শ্রেণী উদ্ভভ হয়:
১। শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক সব চেয়ে দমন পীড়নে আক্রান্ত পক্ষ বাঁচার তাগিদে রঙ পরিবর্তন করে শাসক গোষ্ঠীর সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে।
২।সুবিধাবাদী শ্রেণী ব্যক্তিগত লোভ লালশাকে চরিতার্থ করার জন্য ডামাডোল পিটিয়ে অগ্রভাগে গলাবাজী করতে থাকে ।
ফলশ্রুতিতে শাসক গোষ্ঠীর নীতি নৈতিকতা ও বিবেক সম্পন্ন কর্মীরা দলের মধ্যে উপরের দুই শ্রেণীর আধিক্য ও দলের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ।
অর্থাৎ এক শ্রেণী ভয়ে আর এক শ্রেণী লোভে সরব হয়ে শাসকগোষ্ঠী গুণকীর্তন করে ।
জীবনের প্রথম প্রেম যেমন হৃদয়ের এক কোনে সারা জীবন জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে তেমনে যে চিন্তা বা আদর্শের সঙ্গে মানুষের জীবনে প্রথম পরিচয় ঘটে সেই আদর্শ বা দর্শনের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনা । তাই আমার দেখা যে ব্যক্তিদের ছাত্র জীবনে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে দেখেছি, তাদের মধ্যে যারা আজ আওয়ামীলীগের মিছিলে অগ্রভাগে শ্লোগান দেয়,দুই একজন যারা পৃথিবী থেকে গত হয়েছেন,শেষ বিদায়ে সতীর্থদের স্মৃতিচারণে প্রথম জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্মৃতিচারণ যতটা মধুর হয়ে উঠতে দেখেছি ,কিন্তু সদ্য অতীত হওয়া স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলের পক্ষে যেসব কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ ছিল তা ততটা আলোচনা হতে দেখিনি।
পৃথিবীর ইতিহাসে কোন অন্যায়, জুলুম স্থায়ী নয়। কোন এক সময় গণমানুষের প্রতিরোধে কিংবা প্রাকৃতিক ভাবে এর অবসান ঘটে। জুলুমের উপর যখন কোন শাসক গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল দাড়িয়ে থাকে এবং যখন তাদের জুলুমের শাসনের পতন ঘটে তখন এদের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে।কারণ পতনের পর প্রথমত জীবনের ভয়ে যে মানুষগুলো শোষক দলের মধ্যে মিশে গিয়েছিলো, এই সুযোগে তারা তাদের ফেলে আসা মায়ার টানে পুরনো গন্তব্যের দিকে ধাবিত হয়ে আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। যে মানুষগুলো স্বার্থের টানে শোষণের ঘাটে তরী ভিড়িয়েছিল তারা আবার নতুন মধুর সন্ধানে এই স্বার্থের ঘাট ছেড়ে নৌকায় পাল তুলে দেয় । যে মানুষগুলো ভালোবেসে হোক আর কোন আদর্শিক বিশ্বাসের জায়গা থেকে হোক শোষক দলের গুণগান করতো, দীর্ঘ দিনের অবহেলা ও অবমূল্যায়নের অভিমানে পরবর্তীতে দলের মধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় । এভাবেই দীর্ঘ দিনের শোষণের সুদীর্ঘ প্রাচীরের ক্ষয়িষ্ণু সাধন হয়ে ইতিহাসের পাতায় অবস্থান নেয়। বর্তমান আমাদের ঐতিহ্যের এই দলটি সেই পথেই হেঁটে চলছে । কিন্তু কেন এই মরণঘাতী পথের দিকে তাদের যাত্রা ?
প্রথমত দলটি এখন একটি পারিবারিক রাজনৈতিক দল। ফলে এখান থেকে কোন রাজনৈতিক নেতা তৈরি হওয়ার কোন সুযোগ নেই । যাদেরকে নেতা বলা হয় তারা মূলত এই রাজ পরিবারের আজ্ঞাবহ রাজকর্মচারী । এদের জীবন জীবিকা, ভোগ বিলাস, ক্ষমতা নির্ভর করে এই রাজপরিবারের প্রশংসা এবং জনগণের মধ্যে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রচার অভিযানের মধ্যে দিয়ে।
দ্বিতীয়ত দেশে যে গণতন্ত্রের সাইনবোর্ডে নবাবতন্ত্র পাকাপোক্ত হয়েছে তা আমরা সুবিধাভোগী চতুর জ্ঞানী ব্যক্তিরা ব্যতীত একজন সৎ নিরক্ষর ব্যক্তিরও জানা। দক্ষ সুদীর্ঘ নবাবী শাসনের ফলে চারিদিকে শুধু জী হুজুর আর জী হুজুর ধ্বনিতে প্রকম্পিত দেশ ।নবাব হুজুর খুশী হয়েছেনতো মন্ত্রী,এম পি, পদসহ টাকা পয়সা ধনদৌলতের সবই পূরণ হয়েছে অনুসারীদের । দীর্ঘ নয় বছর নবাব হুজুর উদার হস্তে অনুসারীদের দিয়েছেন, তাদের অর্জিত ধন দৌলত ও মান ইজ্জত এবার পাকাপোক্ত ভাবে ধরে রাখার পালা। যদি এই নবাবী শাসন সুদীর্ঘ সময়ের বঞ্চিত নবাব পরিবারের হাতে চলে যায় তাহলে অর্জিত ধন সম্পদ ও জানমাল বঞ্চিত নবাব পরিবারের ক্ষুধার্ত কর্মচারীদের চরম আক্রোশের স্বীকার হয়ে বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত।
তৃতীয়ত ভোটবিহীন ও জনসমর্থনহীন ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধী মতাদর্শের মানুষের উপর যে পরিমাণ গুম খুন ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়েছে ভবিষ্যতে একই পরিস্থিতি তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে ঘটলে সেই বাস্তবতা অনুধাবন করে ভীত হয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার পথ রুদ্ধ করে কূট কৌশলের পথ বেছে নিতে এক ধরনের বাধ্য বাধকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
শুধু ক্ষমতা রক্ষার কৌশলে দলটি দলীয় নীতি আদর্শ থেকে চ্যুত হয়ে বর্তমানে এক সাংঘর্ষিক অবস্থায় অবস্থান করছে।দুর্যোগময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাম, ডান, ইসলামী, মৌলবাদী, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী মতাদর্শের দল ও ব্যক্তিদের সমন্বয় করে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ঐতিহ্যগত সুনাম এখন প্রশ্নবিদ্ধ।কখনো প্রয়োজনে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে লুফে নিয়েছে আবার এই মঞ্চের কোন আন্দোলন হুমকি মনে করে দমন করেছে।হেফাজত ইসলামকে রাতের অন্ধকারে পিটিয়েছে আবার প্রয়োজনের খাতিরে এই সংঘটনের সাথে দোস্তি করেছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও মৌলবাদী সংগঠন বলে জামায়াতে ইসলামের উপর বুলডোজার চালিয়েছে আবার এই একই দলের কর্মীদের দিয়ে নিজ দল ভারী করার জন্য সংস্থানের পথও খুলে রেখেছে।সভা মঞ্চে মৌলবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রগতির কথা বললেও ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি’র নেতা প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মদির পদচরণে প্রণাম অব্যাহত রেখেছে শুধুই ক্ষমতার স্বাদকে দীর্ঘ করতে।যে বাম তাদের পাশে থেকে স্বৈরশাসনের সহযোগিতা করছে তাদের চুমু দিচ্ছে আবার একই মতাদর্শের যে বাম চিন্তাধারার দল বা সংগঠন রাষ্ট্র বিরোধী চুক্তি বা জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে প্রতিবাদ করছে তাদের পুলিশী ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করছে।ফলশ্রুতিতে নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের যে ভিত্তির উপর দাড়িয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে জনসমর্থনের মাধ্যমে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে সেই আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করতে সম্পূর্ণই ব্যর্থতায় পর্যবসিত অবস্থায় রয়েছে।
দেশে স্বেচ্ছাচারী কোন শক্তির উদয় ঘটলে এবং তা হটাতে হলে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেই আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করতে প্রথমে এগিয়ে আসতে হয়। আন্দোলনকে বেগবান ও সফলতার দিকে ধাবিত করতে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান কাজ হল যাদের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ আন্দোলন সেই সব সাধারণ মানুষদেরকে আন্দোলনে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সংযোজন ঘটানো।
সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দায়িত্ব হল স্বেচ্ছাচারী শক্তি কর্তৃক রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপগুলো যুক্তি ও প্রমাণ সহকারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা।এছাড়া সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জনগণের সৃষ্ট আশা আকাঙ্ক্ষা এবং উদ্ভূত চলমান সমস্যা ও শঙ্কট চিহ্নিত করে তা সমাধানকল্পে সাধারণ মানুষের সুরে সুর মিলিয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করা।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘ সময়কাল রাজপথে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতিরোধের মুখে দলটির কোমর ভেঙ্গে এখন উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।দেশের ক্রান্তিকালে দেশের বৃহত্তর দলটির কেন এই অবস্থা?
চলমান আওয়ামেলীগ শাসন আমলে জনগণ যেভাবে শোষণ, নিপীড়ন ও অধিকার হরণ হয়েছে তা নিম্নরূপ :
১ পেশী শক্তির মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার ও মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার হরণ ।
২ বিরোধী ও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের গুম, খুন, জেল, জরিমানা, প্রশাসনিক হয়রানী এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ।
২ ব্যাংকিং খাতের হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট।
৩ রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার শেয়ার বাজার লুটপাট।
৪ ধারাবাহিক ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন।
৫ প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলীয়করণ।
৬ সরকারী চাকুরীর নিয়োগে বাণিজ্যিকরণ।
৭ উন্নয়নের নামে প্রকল্প বরাদ্দ করে রাষ্ট্রীয় অর্থ দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে বণ্টন ও দুর্নীতির আয়ের মাধ্যমে বিশ্বের ব্যক্তিগত ধনি হওয়ার সূচকে দেশকে শীর্ষ অবস্থনে পৌঁছে দেওয়া ।
৮ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতামতকে উপেক্ষা করে সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল চুক্তি।
৯ হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা।
১০ সরকারী প্রশাসনের সমর্থন লাভের জন্য সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর গড় আয় বিবেচনা না করে সরকারী চাকুরীজীবীদের অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে আয় বৈষম্য সৃষ্টি।
১১ ডিজিটাল নিরাপক্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ।
১২ ক্ষমতা রক্ষার্থে দেশের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ।
বি এন পি তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে করে রাজপথে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পন্থায় সুদীর্ঘ সময় ব্যাপী আন্দোলন করে আসছে।বর্তমান সংযোজন খালেদা জিয়া এবং দলের সকল নেতা কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি।ক্ষমতাসীন দল এই সব আন্দোলনের কোন তোয়াক্কা না করে তাদের কঠোর অবস্থানে এখন পর্যন্ত অটুট রয়েছেন।
বি এন পি’র এই ব্যর্থ আন্দোলনের সংগ্রামের প্রধান কারণ তাদের আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষের রাজপথে অংশগ্রহণ না থাকা। উপরের উল্লেখিত রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলো নিয়ে দেশের মানুষ সুদীর্ঘ সময়কাল ধুকছে এবং মুক্তির পথ খুঁজছে।সাধারণ মানুষের ভেতরে প্রতিবাদ কিন্তু প্রকাশের দ্বার রুদ্ধ।সেই রুদ্ধ দ্বার ভেঙে মানুষ উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায় করতে চায় কোন বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে।বিএনপি উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে টিভি টক শোতে বক্তৃতার মঞ্চে শুধুই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে নিজের ভোটের ইমেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে।কিন্তু বিএনপি কখনো রাজপথে রাষ্ট্রের চুরি হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়ে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানাননি এবং কখন প্রতিশ্রুতি দেননি যে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণের অর্থ চুরি করবোনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। একের পর এক ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। সরকারী চাকুরীর নিয়োগে বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেনি আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে অর্থের বিনিময়ে চাকুরীতে নিয়োগ বন্ধ করবো।ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ার বাজারের লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেননি। সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল চুক্তি সম্পর্কিত তাদের প্রকৃত অবস্থান জনগণের নিকট প্রকাশ করেনি।কিন্তু একটি দেশের প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক দায়িত্বই হল জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানকল্পে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলকে চাপ সৃষ্টি করা। ক্ষমতাসীন দল যদি বিরোধী দলের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে স্বৈরাচারী আচরণ অব্যাহত রাখে তাহলে জনগণ নিজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার্থে জনগণের যৌক্তিক দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামরত রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করতে সমর্থন প্রদান করবেন এবং প্রয়োজনে রাজপথ দখল করবেন।কিন্তু বি এন পি’র মত দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা একটি রাজনৈতিক দল জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কেন একটি বারের জন্য রাজপথে নেমে আন্দোলনের ডাক দিলেন না।নাকি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব…!
উত্তরঃ উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের ডাক দেবার জন্য যে নৈতিক সাহস দরকার, বি এন পি’র সেই সাহস নেই।কারণ তাদের শাসন আমলে দেশের মানুষ একই সমস্যা নিয়ে সময় অতিবাহিত করেছে এবং পূর্বের রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ বিভিন্ন মামলায় তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেত্রীবৃন্দ আইন আদালত ও জেল জরিমানায় বর্তমানে জর্জরিত।
সরকার হটানোর হরতাল অবরোধ কার্যক্রমে যারা দলটির অর্থের যোগান দিচ্ছেন, তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন দল ক্ষমতায় গেলে এই বিনিয়োগকৃত অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্নসাতের মাধ্যমে উসুল করবেন।
অনেক নেতা তদবির করে, টেণ্ডারবাজী করে অর্থবিত্ত বানানোর মনোবৃত্তি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।
বি এন পি যদি আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি মাধ্যমে ঘোষণা দেয় আমরা পুনরায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হাতে পেলে উল্লেখিত ধারাবাহিক অনৈতিক রাজনীতির ধারা পরিহার করে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণার মাধ্যমে একটি মানবিক নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবো।এমন প্রতিশ্রুতি দিলে দেখা যাবে যেসব কালো টাকার মালিকদের টাকার উপর ভিত্তি করে প্রতিহিংসার রাজনীতির ময়দানে আন্দোলনের নামে ধ্বংসলীলা চলে তাদের বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে।লক্ষ লক্ষ শকুন মনোবৃত্তির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, যারা অপেক্ষায় আছে বর্তমানদের তাড়িয়ে দিয়ে একই পথে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের।এই শ্রেণীর নেতা কর্মীরাই মূলত দলটির প্রাণ।
ধারাবাহিক এবং ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক ধারার কারণে দলটি হয়তো এমন মহৎ প্রতিশ্রুতি জনগণকে দেবেন না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ধারায় জনগণও শুধু একটা ভোট দেবার জন্য নিজ শ্রমে ঘামে পরিচালিত জীবন এবং চিন্তা কোন লুটে খাওয়া শক্তির পেছনে ব্যয় করবেন না।মানুষ তার জীবন ও সময় ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত জাতির সামগ্রীক স্বার্থ রক্ষার জন্য। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং সশরীরে অংশগ্রহণ।সাধারণ মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে যেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের ডাক দেবার কথা কিন্তু এই দুটি আন্দোলনে দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র।সাধারণ মানুষ অধিকার রক্ষার জন্য রাজপথ দখল নিয়েছে আর ক্ষমতা দখলের আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনের পিছু নিয়ে ক্ষমতা দখলের কৌশল আঁটার চেষ্টা করেছে ।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্বাচনে জয় লাভ হল আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল ফুটবল দলের মধ্যকার খেলায় সমর্থন দিয়ে জয়ের আনন্দ লাভের মতো। খেলায় জয় লাভকারী দলের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন অর্থ পুরষ্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও দলবেঁধে হৈহুল্লোর করে উৎসাহ দেয়া সমর্থকদের শুধুই জয়ের আনন্দের মানসিক তৃপ্তি নিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে হয়।তেমনি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী ক্ষমতার পরিবর্তন জনগণের কাছে একটি শ্বাসরুদ্ধকর খেলার ম্যাচের আনন্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এই নির্বাচনী খেলায় যে দল রাষ্ট্রীয় গদি জয় লাভ করেন তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যাবে কিন্তু ভোটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমর্থন দেয়া রাজনৈতিক দলের জয়ের আনন্দের ঢেকুর তুলেই সন্তুষ্ট থাকবে হবে।এই ভোট ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে ভাগ্যের চাকা কখনো ঘুরবে না।বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক ভাবে অসচেতন।তারা জানেনা রাষ্ট্রের কাছে তার প্রাপ্য মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ব। তবে দীর্ঘ দিনের শোসন,বঞ্চনা ও প্রতারণার ভেতর দিয়ে আজ এতটুকু উপলব্ধি অন্তত উদয় হয়েছে।মানুষের এই উপলব্ধির প্রমাণ মিলেছে গত কয়েক বছরে অরাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথ দখল করা অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মাধ্যমে।সঙ্গত কারণেই বিএনপি’র শুধু মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্দোলন সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
একটি অসভ্য শক্তিকে উৎখাত করতে দরকার জনসমর্থন এবং জনরোষ।বর্তমান ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী শক্তিকে হটাতে সারা দেশে যদি সমস্ত বিরোধী দল মানব বন্ধন ও মৌন মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে অবরোধ পালন করে। এমন প্রতিবাদে একটি জনসমর্থনহীন অবৈধ শক্তির চেতনায় কোন আঘাত করবেনা। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেই নিশ্চিত হয়েছে যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়তো আর কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের আহবানের কোন আন্দোলন গনরোষের রূপ নেবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন জনরোষ সৃষ্টি করা বিএনপি’র পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।সেই পর্যবেক্ষণের জায়গা থেকেই পরবর্তী নির্বাচনে পূর্বের ন্যায় এম পি, মন্ত্রী নিয়োগের মাধ্যমে আর একটি অপশাসন কায়েমের চেষ্টায় সদা তৎপর থাকবে।
দেশের দুই অশুভ শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার অপরাজনীতির মাঠে চলমান খেলার সম্ভাব্য ফলাফলের যে চিত্র ভেসে উঠছে তাহলো বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামেলীগ যদি কূট-কৌশলে রাষ্ট্র ক্ষমতা আবার খামচে ধরে সেক্ষেত্রে আগামীর বছরগুলোতে জনগণের নিকট তাদের আবির্ভাব হবে আরও অপ্রতিরোধ্য দানবীয় চরিত্রে।আওয়ামেলীগের রাজনৈতিক আক্রোশ এবং দীর্ঘকাল ক্ষমতাহীন ও অলাভজনক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে কর্মী ও নেতা শূন্যতার ফলে বি এন পি নিষ্ক্রিয়তার দিকে ধাবিত হবে। অন্যদিকে আওয়ামেলীগের ধারাবাহিক শোষণ,শাসন এবং উৎপীড়নের ফলে জনগণের নিকট তাদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের অংকে পৌঁছুবে। ফলশ্রুতিতে কোন অরাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের সূত্র ধরে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় অবস্থান নেবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামেলীগের কূটকৌশল ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ও তার সহযোগী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সে ক্ষেত্রেও ক্ষমতাসীন দলের জন্য অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। ফলাফল একে অপরের হাতে একে অপরের পতনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটবে। একটি ধ্বংস লীলার ভেতর দিয়েই আগামীর নতুন নেতৃত্বের নতুন একটি মানবিক ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশে মানুষের সামনে অপেক্ষমান।
নিকোস কালো রাতের অন্ধকার শেষে পূর্ব দিগন্তে ঊষার আলো ছড়াবেই ……।
ছবি ইন্টারনেট থেকে নেয়া .........
বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
দাসত্বের বেড়ি পড়ান সভ্য সমাজের মানুষ হওয়ার চেয়ে গণমানুষের সুরে সুর মিলিয়ে গান গাওয়া সাধারণ জীবন সার্থক
বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১৮
জীবিত অথবা মৃত প্রাণীর শরীর মাত্রই প্রাণীর আহার
উপরোক্ত আলোচনাটুকু করার কারণ আজ মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোরবানির ঈদ।এই দিনে সারা পৃথিবীতে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচুর চতুষ্পদ প্রাণী জবেহ করা হয় এবং এই জবেহ করা মাংসের আবার ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী সুন্দর একটি বণ্টন ব্যবস্থা রয়েছে।
নিয়ম হচ্ছে কোরবানির মাংস বানানোর পর সব মাংস সমান তিনভাগে ভাগ করতে হবে। মাংস সমান তিন ভাগ করার পর এক ভাগ সমাজের নিম্ন বৃত্ত মানুষের জন্য , এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে এবং এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখা হয়।
কোরবানির গরুর আরেকটি অংশ হচ্ছে চামড়ার টাকা। যা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।
কিন্তু প্রতি বছর কোরবানি ঈদ আসলেই কোরবানির এই মুসলিম রীতিকে কেন্দ্র করে কিছু ম্যাকডোনাল্ড,কে এফ সি , শুকুরের মাংস খাওয়া এবং পায়ে পশুর চামড়ার জুতা পরা উদারপন্থী মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোরবানির পশুর জবেহ হওয়ার কষ্টে কাতর হয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপে সরব হয়ে ওঠেন।অনেক উদারপন্থী বিদ্বান রয়েছে যারা কোরবানির মাংস দিয়ে ভূড়ীভোজ করার পর কোরবানির পশুর গলায় ছুরি চালানোর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে ফেচবুকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এই রীতির তুখোড় সমালোচনার ঝড় তোলেন।
এমন উদারপন্থীদের প্রতি পরামর্শ, এ ধরনের সমালোচনার পূর্বে প্রতিজ্ঞা করুণ, আজ থেকে কোন প্রাণের থেকে নিজের প্রাণের উপকরণ সংগ্রহ করবো না (উদ্ভিদ এবং প্রাণী) । দরকার হলে নিজের শরীর কৃমি, উকুন,মশা, ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য উপকরণ বানাবো কিন্তু নিজে পানি এবং বাতাস খেয়ে পৃথিবীর এই খাওয়া খাওয়ি নিয়মের প্রতিবাদ করে পোকা মাকড়কে এই রক্ত মাংসের দেহকে দান করে দেবো ……।
শ্লোগান হোক… নিজে খাই এবং অন্যেকেও মনের আনন্দে খাওয়াই ...।
শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮
খুন যদি হয় সমাধান,তবে কেন “রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ"এই স্লোগান সম্বলিত প্রতিষ্ঠান ?
এই প্রসঙ্গে আমার দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতার একটু বর্ণনা করি, আমার জেলা রাজবাড়ীতে এক সময় ভারতীয় ফেনসিড্রিলের রমরমা ব্যবসা হতো । যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের মাঝে মাঝে জীবন যাত্রার হালচাল দেখে বেশ ধনী মনে হতো। কিন্তু এমন সুখের সময় হঠাৎই পুলিশ এদের মাদক ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতো, তখন মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রী নিয়মিত থানা কোট কাচারিতে দৌড়াদৌড়ি করতো। এভাবে মাস দুয়েক ফেনসিড্রিল ব্যবসার জমানো সব টাকা পুলিশ, উকিল, আদালতের পেছনে খরচ করে স্বামীকে জেল থেকে জামিনে মুক্ত করে বের করে নিয়ে আসতো। বেরিয়ে আসার পর ওপার থেকে আবার সীমান্ত প্রহরীদের টাকা পয়সা দিয়ে ট্রেনে করে জি আর পি পুলিশের সহায়তায় ফেনসিড্রিলের চালান নিয়ে আসতো। আবার রমরমা ব্যবসা, নগদ টাকার উড়াউড়ি। সেই টাকার গন্ধে আবার পুলিশের হানা। আবার স্ত্রী’র কোট কাচারিতে দৌড়াদৌড়ি, থানা পুলিশ, উকিলের পেছনে ব্যবসার জমানো সমস্ত টাকা ঢেলে প্রিয় স্বামীকে মুক্ত কড়ে নিয়ে আসা। ওই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ বারবার মাদকসহ গ্রেপ্তার করলেও কখনো সংশোধনের সুযোগের জন্য মাদক আইনে সাজা ভোগ করে দীর্ঘদিন কারাবাস হতে দেখিনি।অর্থাৎ পুলিশের হাতে ধরা পড়া, জামিনে ছাড়া পাওয়া, আবার ব্যবসা করা এটাই ছিল তাদের জীবনের নিয়মিত অংশ ।যারা এই ব্যবসা করতো তারা মূলত কিছুদিন ইলিশ মাছ, মাংস দিয়ে ভাত খেত আর ভালো কাপড় পড়তো,কিন্তু পাকা বাড়ী বানাতে পারতোনা কারণ, নগদ জমলেই পুলিশ হানা । ওর জীবন ঝুঁকির টাকায় হয়তো পুলিশ অফিসারের ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ হতো, রাজনৈতিক নেতার ভাই কিংবা বোন জামাইয়ের টাকার বাণ্ডিলের উপর বাণ্ডিল জমতো, কোটের উকিলের রুটি রুজি ভালো হতো। আর এই কারণেই ওই সব মাদক ব্যবসায়ীদের কখনো সংশোধনের জন্য সাজার ব্যবস্থা করা হতোনা। ওর সাজা হলে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, উকিলদের উপরি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মাদক ব্যবসা মূলত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মাদক বিক্রেতা,আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, এই তিনের সমন্বয়েই সম্পন্ন হয়ে থাকে।দেশে যখন কোন বিশেষ অভিযান শুরু হয় তখন দেখা যায় যে লোকটা মাদক ব্যবসার টাকায় ইলিশ মাছ আর মাংস খায় ওই মারা পড়ে, যাদের মাদকের টাকায় ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ হয় তাদের গুলিতে এবং টাকার বাণ্ডিলের পর বাণ্ডিল রাখা মহৎ জনদরদী নেতাদের পরিকল্পনায়।দেশের ক্ষমতাসীনরা যদি জনদরদী হয়ে থাকে তবে হঠাৎ করে বিশেষ অভিযানের প্রয়োজন আছে কি? তাদের সুশাসনের ফলে মাদকসহ আইন শৃঙ্খলা অবস্থা সারা বছর স্বাভাবিক থাকবে।সরকারের উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয়ে থাকে তাহলে একটি জীবন্ত মানুষকে হত্যা না করে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক এবং মাদকের মূল হোতাদের আবিষ্কারের জন্য তাকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্ভয় দিয়ে মিডিয়া এবং সমাজ সচেতন মানুষের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। রাষ্ট্র জনগণের কাছে পিতা মাতার মতো,সন্তানদের ভুল শুধরে সঠিক পথ দেখানোই তার দায়িত্ব। কিন্তু আমদের রাষ্ট্র অভিভাবক আমাদের ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখেনা, রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে পারেনা,অথচ যখন নিজহাতে হত্যা করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে বর্বর উৎসবে মেতে ওঠে, তখন বুঝতে হবে আমাদের রাষ্ট্র মাতা সৎ পিতার অধীনের সংসার করছে। হত্যা যদি সমাধানের পথ হয় তবে জেল গেটের ফটকে লেখা “রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ” এ জাতিও নীতিবাক্যকে হাস্যকর মনে হয় এবং এমন প্রতিষ্ঠান নিষ্প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক ভাবে বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত করতে চাই তাহলে প্রথম পদক্ষেপ হবে সরকারে ক্ষমতার মধ্যে থেকে কারা মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদেরকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।এই পদক্ষেপ কার্যকর করতে পারলে মাদক সমস্যার ৬০% সমাধান। দ্বিতীয়ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সৎ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তৈরি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে বাহিনীর কোন সদস্যের মাদক ব্যবসার সহযোগিতায় যোগসাজশ রয়েছে এবং প্রমাণিত অসৎ সদস্যদের বাহিনী থেকে চাকুরীচ্যূতির মাধ্যমে বের করে দিতে হবে। এতে ৩০% সমাধান মিলবে।বাকী দশ ভাগ সমস্যার সমাধান মিলবে , মাঠ পর্যায়ে যারা মাদক সেবীদের নিকট সরাসরি মাদক পৌঁছে দিয়ে অর্থ উপার্জন করে তাদেরকে ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সংশোধনের সুযোগ দেয়া।
মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১৮
সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর সমস্ত পেশার ভিত্তি কৃষক ও শ্রমিকের পেশা
রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
তুষারের শুভ্রতায় নবরূপে উদ্ভাসিত প্যারিস নগরী
সদ্য শরীরের কাঁটাছেড়া অংশে সকাল থেকে ব্যথার তীব্রতা বেড়েই চলছে। ব্যথানাশক ঔষধ সেবনে উপশমের চেষ্টা। ব্যথা নিয়েই মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় একাকী দিন যাপনের প্রস্তুতি। প্রকৃতি আগাম আভাস না দিয়ে হঠাৎ করেই শুরু করেছে বাতাসে তুষারের ওড়াউড়ি। যে দৃশ্যর অবতারণ সাধারণত প্যারিসে খুব একটা মেলেনা। মনে হল দিনটা বাড়তি প্রাপ্তি দিয়ে শুরু হল। ড্রয়িং রুমের প্রতিটি পর্দা তুলে দিয়ে সোফায় শুয়ে শুয়ে প্রকৃতির আপন মনে এমন খেলা করার দৃশ্য হৃদয়ে এক ভিন্ন রকম শিহরণ জাগিয়ে মুহূর্তগুলো রাঙিয়ে দিচ্ছে। বেলকোনিতে মাঝে মাঝে দুটো কালো কবুতর এসে সঙ্গ দিয়ে আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। সাথে প্রিয় রবি সুর। স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হলাম প্রকৃতির এমন আতিথেয়তায়!
এমন ভালোলাগা শুধু নিজে উপভোগ না করে প্রযুক্তির আশ্চর্য উদ্ভাবন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে কিছু সময় ভাগাভাভাগি করলাম বন্ধুদের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যে সামনের ছোট্ট পার্কটির সমতল ভূমির উপর প্রকৃতি তুষারের সাদা মাদুর বিছিয়ে দিলো। বৃক্ষরাজির শাখাগুলোর কাণ্ড পরিণত হল থোকা থোকা সাদা পুষ্পের ন্যায়।
মনে হল, প্যারিসের এমন রূপের দিকে তাকালে প্রেমে পড়বেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায়। শত শত বছর ধরে হাজার হাজার শিল্পী প্যারিসের রুপের উৎকর্ষ সাধনের যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তা আজ পণ্ডশ্রমে পর্যবসিত। প্যারিসের আজকের রূপের কাছে শিল্পকলার সমস্ত সৃষ্টিই যেন পরাজিত! যে হৃদয় পাথরসম অনুভূতিহীন প্যারিসের আজকের প্রকৃতি সেই হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার করতে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য সৌন্দর্য় পিপাসু্ মানুষ নিজেকে স্মৃতি করে রাখার জন্য। বৃষ্টির দিনে বাংলার দুরন্ত কিশোর-কিশোরী যেমন বৃষ্টিতে ভিজে তার দুরন্তপনা ও দুুষ্টুমিতে প্রকৃতির হেয়ালিপনাকে সার্থক করে তোলে, তেমনি প্যারিসের বুকে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর-কিশোরীর দলও প্রকৃতির এই উৎসবের দিনে উজার করে উচ্ছ্বাস ঢেলে দিচ্ছে। বাংলার বর্ষা, বসন্ত, শরৎ যেমন প্রেমিক প্রেমিকার মনে দোলা দেয়, অনুভূতিতে ভিন্নতা আনে, হৃদয়ের রংয়ের বৈচিত্রতা আনে, পশ্চিমা প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে আমাদের মতো এতো বৈচিত্র্য না থাকলেও আজকের প্যারিসের প্রকৃতি অবশ্যই ওদেরকে রোমাঞ্চিত করছে।
তুষার শুভ্রতায় নবরূপে উদ্ভাসিত প্যারিস নগরী
আলোকচিত্র: মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ,