শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

মানব সমাজ এবং পশু সমাজ

পৃথিবীতে প্রাণীকুলে দুই ধরণের সমাজ বিদ্যমান, একটি মানব সমাজ অন্যটি পশু সমাজ ।উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়ায় মানুষ তার চিন্তা ও বুদ্ধি দ্বারা অন্য প্রাণী থেকে আলাদা।ফলে মানুষ তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য আইন আদালত ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু জঙ্গলের অনেক মানব আকৃতির থেকে বৃহৎ পশুর বসবাস থাকলেও শুধু চিন্তাশক্তি উন্নত না থাকায় শৃঙ্খলিত একটি পশু সমাজ গঠন তাদের দ্বারা সম্ভব নয়।ফলে পশু সমাজের বৈশিষ্ট্য হল সবচেয়ে হিংস্র ও শক্তিশালী পশু দ্বারা অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী পশুর নিয়ন্ত্রিত হওয়া এবং যাদের হিংস্রতা নেই বা অন্যের আক্রমণ থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করার শক্তি সাহস নেই তারা সারা জীবন হিংস্র পশুর ক্ষুধা নিবারণের আহার হবে এবং ভয় ও ভীতির মধ্য দিয়ে আমৃত্যু জঙ্গলে বসবাস করতে হবে।


আমরা মানুষেরা সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য রাষ্ট্র সৃষ্টি করলেও এখনো পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে পশু সমাজের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।এইসব রাষ্ট্রে পশু সমাজের মতই সমাজের আর্থিক ও রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হিংস্র মানুষদের দ্বারা দুর্বল মানুষদের নিয়ন্ত্রিত হতে হয় এবং সমাজে তাদের বেঁচে থাকা না থাকা তাদের দয়ার উপর নির্ভরশীল।আইন আদালত থাকলেও মূলত ওগুলো প্রভাবশালীদের সুরক্ষা দেবার জন্যই তৈরি করে রাখা হয়েছে।বনের হিংস্র পশুর যেমন দুর্বল প্রাণীর রক্ত মাংসের স্বাদ নেবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় বিন্দু পরিমাণ চিন্তা করতে হয়না এই হিংস্রতার জবাবদিহিতার জন্য, বরং অন্য অন্য প্রাণীর রক্ত মাংস খাওয়া তার জন্মগত অধিকার।জঙ্গলের পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রগুলোতে বসবাসরত মানুষরূপী হিংস্র পশুগুলোও নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে দিবালোকে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অন্য মানুষকে কুপিয়ে জখম করে রক্তের খেলায় মেতে উঠতে পারে।বনের পশুর যেমন সঙ্গমের ইচ্ছে জাগলে স্বজাতি যে কোনো পশুর উপর অনুমোদন ছাড়াই সঙ্গমের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রে একজন মেয়ে ইচ্ছে করলেই তার নিজের মত করে বাঁচার অধিকারের কথা চিন্তা করতে পারেনা কারণ সমাজে ঘুরে বেড়ানো পশু মনোবৃত্তির লালায়িত মানব জানোয়ার নির্ভয়ে আক্রমণ করে যে কোনো সময় থামিয়ে দিতে পারে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন,আশা,আকাঙ্ক্ষা।এমন মানব জানোয়ারেরা জানে তার এই হিংস্রতার জন্য বনের পশুর মতই তার কোন জবাবদিহিতা থাকবেনা কারণ অর্থের বিনিময়ে এই সমাজ থেকে সমস্ত অপরাধের পরিণাম থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।বরং এমন রাষ্ট্রের মানব জানোয়ারেরা জঙ্গলের হিংস্র পশুর মতই ভাবে অন্যের রক্ত মাংস,সম্ভ্রম নিয়ে খেলা করা তার জন্মগত অধিকার।


পশুর সমাজে হিংস্র পশুদের দয়া না থাকেলেও,পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রগুলোতে দয়ার উপস্থিতি রয়েছে,এমন রাষ্ট্রের জনগণ জানে প্রচলিত আইন আদালত তাদের বিচারের জন্য নয়, তাই তারা আক্রান্ত হলে সরাসরি রাষ্ট্র প্রধানের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন, রাষ্ট্র  প্রধান যদি কোন দুর্বলের উপর দৈবক্রমে দয়া বর্ষণ করেন তবে কখন কখন কেউ কেউ বিচার পেয়েও থাকে।এতোটুকু শুধু জঙ্গলের পশু সমাজ থেকে এমন রাষ্ট্রেরগুলোর পার্থক্য।


সভ্যতা চূড়ায় আরোহণ করা বিশ্বে এখনো এমন পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রগুলো কিভাবে টিকে আছে, সেটাই উত্তরহীন আশ্চর্য প্রশ্ন?

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯

ঈদ মোবারক

নিজ ভূমি ছেড়ে আসার পর থেকে ঈদ যে বিশেষ আনন্দের অনুভূতি তা খুব বেশী অনুভূত হয়না। এখানে মুসলিম ধর্মীও উৎসবের ছুটি না থাকায় অধিকাংশ ঈদের দিন কেটেছে কর্মব্যস্ততায়।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি, সকাল বেলা মেয়ে ও তার মা স্কুল ও কাজে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে আর আমার তাড়াহুড়া যদি ঈদের নামাজটা পড়ে কাজে যেতে পারি।সকালের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে ঈদের নামাজ আদায়ের সুযোগ হলো। নামাজ শেষ করে ফেরার পথের চরিত্রগুলো ভাবনায় ফেলে দিলো।যাদের একসময় ঘর ছিল,সাজানো গোছানো পরিবার ছিল, নিজস্ব আয়ের উৎস ছিল,ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক বীমা ছিল, শান শওকত ছিল,সামাজিক সম্মান ছিল, বিভিন্ন উৎসব আনন্দ ছিল, ছিল নির্দিষ্ট সীমা রেখার পরিচয়, কিন্তু আজ তাদের এসবের কিছুই নেই। আজকের এই উৎসব আনন্দের দিনে ফেলে আসা ভূমির পাসপোর্ট হাতে ফুটফুটে শিশু সন্তানদের নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছে অন্যের একটু অনুগ্রহ ও সাহায্যের আশায় ।যাদের কথা বলছি ওরা সিরিয়ান যুদ্ধ বিধ্বস্ত উদ্বাস্তু। এই সব সাধারণ মানুষদের জীবনের এমন পরিণতির জন্য ওদের কোন হাত ছিলোনা, হয়তো কখনো ভাবেনি কোনোদিন ঘর ছেড়ে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ানোর কথা ।তেমনি আমাদের বাংলাদেশে আশ্রয়রত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থাও সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের মতই, ওদেরও আজকের উৎসব আনন্দের রঙ,রস,গন্ধ ছুবে না।আমরা যারা ভবিষ্যৎ সুখী জীবন নিশ্চিতের কথা ভেবে ঘুষ, দুর্নীতির , অন্যায়, অত্যাচার,জুলুম ,নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুটপাট এবং অনিয়মের ভেতর দিয়ে ব্যক্তিগত অর্থ বিত্তের পাহাড় বানানোর নেশায় মত্ত আছি তারা কি কখনো ভাবি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সঠিক পথে না থাকলে ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদ দিয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখা কখনই সম্ভব নয়। পৃথিবীর দানবীয় রাজনৈতিক চক্রান্ত ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন কখন কাকে ঘর থেকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়, কখন কাদের উৎসব আনন্দকে কান্নায় পরিণত করে তা বোঝা খুবই দুরূহ।রাষ্ট্রকে বিক্রি করে ব্যক্তির প্রভাব বৃদ্ধি নয়,সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিয়মত্রান্ত্রিক শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের মধ্যেই সম্মান ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা।তাই ব্যক্তি চিন্তা থেকে বেরিয়ে সামগ্রিক জাতিগত ভাবনার মনোবৃত্তি তৈরি করি,দেশটাকে আপন ভেবে ভালোবাসি, সুখ দুঃখ আনন্দ ভাগাভাগি করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করি ……।ঈদের মাঠের কোলাকুলি মতই সারাটা বছর যেন ধর্ম বর্ণ ও শ্রেণি ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে বুকে বুক মিলিয়ে কেটে যাক আমাদের সারাটা বছর ।

সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা …।।