করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের মধ্যে মৃত্যুর ভয় জেগে বসেছে।অথচ,কয়েক বছর পর পর কোননা কোন নতুন ভাইরাসের আক্রমণে অসংখ্য মানুষ মৃত্যু বরণ করে।কোন এক সময় প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়।ভাইরাসের ভয়ংকর আক্রমণ কোন এক সময় মানুষ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।কিন্তু প্রথম দিকে ভাইরাসের অতর্কিত হামলায় অপ্রস্তুত থাকায় অসংখ্য মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়।ভাইরাসের কথা বাদ দিলাম,যখন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ট্রেন, বাস, বিমানে উঠেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গন্তব্যে না পৌঁছুবেন ততক্ষণ মৃত্যু আপনার পাশাপাশি বসেই অবস্থান করে। কারণ দুর্ঘটনার কবলে যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু আঘাত হানতে পারে।সারা জীবন পড়াশুনা করেছেন, সুন্দর জীবিকা অর্জন করেছেন, পরিপাটি বাড়িঘরে বসবাস করেন অথচ যে কোনো সময় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের ভয়ংকর থাবায় আপনার সাজানো গোছানো জীবন মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। যা আমাদের চলমান বিশ্বের প্রাত্যহিক ঘটনা।কত শিশু জন্ম গ্রহণ করার পর পৃথিবীতে কয়েক বছর অবস্থান করে পূর্ণ জীবনের স্বাদ গ্রহণ ছাড়াই বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।ভাইরাসের কারণে মৃত্যু ভয়, অথচ আমরাই প্রতিদিন অধিক মুনাফার আশায় খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে ভেজাল মিশিয়ে একে অপরের জন্য প্রতিদিন মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করে রাখছি।পৃথিবীটা মানুষের জন্য অথচ এই পৃথিবীটাকে অনিরাপদ করার জন্য মানুষই প্রধানত দায়ী। প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এক ধর্মের মানুষ খুন করছে অন্য ধর্মের মানুষকে,এক রাষ্ট্র হামলা চালাচ্ছে অন্য রাষ্ট্রের উপর,বর্ণবাদী সহিংসতায় এক বর্ণের মানুষ খুন করছে অন্য বর্ণের মানুষকে।কিন্তু, করোনা ভাইরাসের বিশেষ প্রীতি নেই বিশেষ কোন ধর্ম,বর্ণ বা রাষ্ট্রের প্রতি।অদৃশ্য করোনা ভাইরাস যুদ্ধ ঘোষণা করছে পৃথিবীর দৃশ্যমান মানুষের সঙ্গে।যখন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো নিজ দেশের মানুষের জৌলুশপূর্ণ জীবন যাপন নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধবিগ্রহ বাধিয়ে অন্য দেশের মানুষকে বাস্তুহারা করে দিচ্ছে।ঠিক সেই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস কিছু মানুষের জীবন কেড়ে নিলেও পৃথিবীর সমগ্র মানুষ, ধর্ম, গোত্র,বর্ণ ও রাষ্ট্রকে একত্রিত করে একটি বার্তা দিচ্ছে, তাহলো শুধু পৃথিবীতে একা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম নয়, সংগ্রাম হোক পৃথিবীর সমগ্র মানুষের সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার সম্মিলিত সংগ্রাম।মানুষ বাঁচলেই ধর্ম থাকবে,বর্ণ থাকবে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা টিকে থাকবে।এই ধরণী টিকে থাকবে মানুষের নেতৃত্বে।মৃত্যু অনিবার্য, মৃত্যুকে সঙ্গে করেই আমাদের বসবাস,আমাদের জন্মই হয়েছে মৃত্যুকে সঙ্গী করে।তাই মৃত্যু ভয়ে বেঁচে থাকা নয়। যত দিন বাঁচি সেই বেঁচে থাকাটা হোক সুন্দর। সেই লক্ষ্যে আমাদের সচেতনতা, সাবধানতা এবং একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্য ও সম্মান হোক বেঁচে থাকার মূল ব্রত।সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলি মানব বসতির শান্তির পৃথিবী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন