মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময় যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে -যেন একটি করুর্ণাদ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারো একফোঁটা জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।কথাগুলো বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের।
আজ হঠাৎ করেই কথাগুলো মনে পড়ে গেলো দেশে ঘটে যাওয়া কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনার খবর জেনে। মৃত্যুর ঘটনাগুলো অনেক হৃদয়বান মানুষের অন্তরে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে।যাদের মৃত্যু পূর্ব মুহূর্তগুলো ছিল খুবই মর্মান্তিক।মানুষগুলো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় হঠাৎ করেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।কিন্তু করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তাদের কাছে এগিয়ে আসেনি কোন প্রতিবেশী, সাড়া মেলেনি সরকারের জরুরী নম্বরের ওই প্রান্তে বসে থাকা ব্যক্তির,ছুটে আসেনি স্থানীয় হসপিটালের এম্বুলেন্স, কোন চিকিৎসক।নির্বিকার চেয়ে থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষ্ঠুর সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে।
আমরা অবশ্যই এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকবো,তার মানে এই নয়, ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করবো।বরং আক্রান্ত ব্যক্তির শুশ্রূষার জন্য সোচ্চার হয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করবো।কে এই ভাইরাস বহন করে এনেছে,কার কারণে ছড়িয়েছে এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা বোকামি। যে অবহেলায় অন্যের মৃত্যু হয়েছে, তেমন মৃত্যু যে আপনার দিকে ধেয়ে আসছেনা, তা আপনি কিভাবে নিশ্চিত ?
আপনি সরকারকে ভ্যাট দেন, ট্যাক্স দেন, রেমিটেন্স দেন কেন?আপনি চৈত্রের খররৌদ্রে ফসল ফলান,মিল কারখানায় ঘাম ঝরিয়ে পণ্য উৎপাদন করেন,নগর শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখেন,মাঝ দরিয়া থেকে মৎস্য আহরণ করেন কেন? কারণ, আপনার বিপদে রাষ্ট্রের সেবার হাত বাড়িয়ে দেবার আশায়, অবহেলায় মৃত্যু বরণের জন্য নয়।মনে রাখতে হবে,রাষ্ট্র সংঘের কাছে যে কোন প্রকার স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া আপনার মৌলিক অধিকার। করুণা বা দয়া নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন