শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ছাত্রলীগের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের লাগাম টেনে ধরা সময়ের দাবী ।

আওয়ামেলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভীত সন্ত্রস্ত সারা দেশের মানুষ।রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধী অনৈতিক কর্মকাণ্ডের এমন কোন কর্ম নেই যে তারা করছেনা। বল্গাহীন এই উচ্ছশৃঙ্খলতার লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবী। 

 

ছাত্রজীবনে দুটি ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আমাকে ছাত্র রাজনীতির প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে ছিল।একটি আওয়ামী ছাত্রলীগ অন্যটি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।তখন এই দুটি ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের চিন্তা ভাবনায় প্রগতিশীল মনে হতো।আচার আচরণে মধ্যেও ছাত্রত্ব ভাব ফুটে উঠত। আমার ছাত্র জীবনের ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা বড় কোন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নয়।রাজবাড়ী জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ রাজবাড়ী সরকারী কলেজে অধ্যায়ন কালে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র মৈত্রী’র আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।জেলার সবচেয়ে পুরাতন কলেজ হওয়ায়,স্বাধীনতা পূর্ব থেকেই এখানে ছাত্র রাজনীতির ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত ছিল।বাংলাদেশের প্রতিটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো এই ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে তাদের আন্দোলন সংগ্রামে সরব ছিল।ছাত্র রাজনীতির আমাদের সময়ে এবং পূর্বে ছাত্রলীগকে দেখেছি কলেজ ক্যাম্পাসে সুসভ্য ও নিয়মতান্ত্রিক  ভূমিকায়। ছাত্রলীগকে কখনো ক্যাডার ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা করতে দেখিনি।অবশ্য তাদের সাংগঠনিক কাঠামোও বেশ দুর্বল ছিল।বরং ক্যাম্পাসে ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র দলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে মাঝে মাঝেই কলেজ ক্যাম্পাস সহ পুরো শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠত। আমাদের দেশের রাজনীতিতে সাধারণত দল ক্ষমতাসীন হলে ঐ দলের ছাত্র সংগঠন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের বড় বড় নেতাদের সমর্থন ও ইশারা থাকায় ছাত্র নেতারা অপকর্ম করে পার পেয়ে যায়।কিন্তু, ১৯৯৬ সালে আওয়ামেলীগ ক্ষমতায় আসার পর, আমার মনে পড়ে  না তৎকালীন আওয়ামী ছাত্র সংগঠন  ছাত্রলীগের নেতারা  রাজবাড়ীর বুকে ক্ষমতা অপব্যাবহার করে রাজবাড়ী শহরে উল্লেখ করার মত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, ধর্ষণের মত একটি অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।এই না ঘটার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল, বর্তমানে যিনি রাজবাড়ী ১ আসনের সংসদ সদস্য, তিনি তখনও এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।মানুষ পরিবর্তনশীল, বর্তমানে তিনি কেমন সেটা আমার জানা নেই, তবে তখনকার সময় তিনি ছাত্র সংগঠনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিতেন না। যার ফলে, তৎকালীন রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগকে আওয়ামেলীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকালীন সময়েও কখনো দানবীয় চরিত্রে দেখা যায়নি। তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাদেরকে এখনো আমরা ভদ্র মানুষ হিসেবেই জানি।তাদের নৈতিকতার অধঃপতন এখনো এতো নিম্নগামী নয়।গত বছর দেশে গিয়েছিলাম আমাদের সময়কার ছাত্রলীগের বড় ভাই ও ছোট ভাই যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছে তাদেরকে  দেখেছি কেউ ব্যবস্যা করছে,কেউ চাকুরী করছে, আবার কেউ রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থাকলেও তাদের নামের পাশে এখনো নোংরা ইমেজের ছায়া যুক্ত হয়নি। রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের বর্তমানের কর্মকাণ্ড কেমন,সেটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমাদের সময়ের রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগ একটি আদর্শ ছাত্র সংগঠন ছিল তা বুকে হাত দিয়ে বলা যায়।   


মূল রাজনৈতিক দল যদি ছাত্রলীগের কর্মীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয় এবং তাদের তারুণ্যের শক্তিকে মাঠের রাজনীতিতে অপব্যাবহার না করে, তবে সারা দেশে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি তৎকালীন রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের মত একটি আদর্শ ছাত্র সংগঠন হয়ে উঠতে পারে।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পৃথিবীর নিয়মতান্ত্রিক ও অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রশান্তি ও অশান্তি

পৃথিবীতে দুই ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা বিদ্যমান।নিয়মতান্ত্রিক ও অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র একটি যথাযত আইন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করে। অপরদিকে, অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বইয়ের পাতায় লিখিত সাংবিধানিক আইন ও প্রয়োগের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান।ফলে পদে পদে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার দরুন এমন রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের অনাস্থা সৃষ্টি হয়।জনগণ যে কোন পন্থায় নিজের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব বাধ্য হয়ে নিজেই নিশ্চিতের চেষ্টা করে।ফলে সমাজ এক অনিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে। 


একটি মানবিক, জবাবদিহিতামূলক  ও নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ তার আর্থিক সামাজিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের আইন ও নীতির উপর আস্থা রেখে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করে।এমন রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল রাষ্ট্রের কাছে জনগণের প্রাপ্তিটুকু রাষ্ট্র জনগণকে বুঝিয়ে দিতে সচেষ্ট থাকে, আবার জনগণের নিকট রাষ্ট্রের প্রাপ্যটুকু রাষ্ট্র নিয়মের মধ্যদিয়ে বুঝে নেয়। জনগণ ও রাষ্ট্র একে অপরের উপর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও আস্থাশীল।রাষ্ট্র ও জনগণ একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমন সমাজের মানুষ সৎ কর্মকে জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে দেখে।  


অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ তার জীবনের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য অর্থ ও ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল হয়। রাষ্ট্রের সংবিধানের উপর নয়।ফলে অর্থ ও ক্ষমতা অর্জনের নেশা এমন রাষ্ট্রের মানুষকে চরম দুর্নীতি পরায়ণ ও অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে ।নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে পার্থক্যের  বিশেষ কোন ফারাক খুঁজে পাওয়া যায়না।উভয় শ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে যত বেশী টাকা উপার্জন করা যাবে  জীবন ততো বেশী স্বাচ্ছন্দ্যময়, আরাম আয়েশে ভরা ও নিরাপদ হবে।অধিক অর্থ ক্ষমতার উৎস আর ক্ষমতা মানে মানুষের কুর্ণিশ আর দুঃসাধ্যকে সাধ্যে রূপান্তর। গভীর বিশ্বাস, তাদের বিপদে অর্থ ছাড়া মুক্তির আর কোন মাধ্যম খোলা নেই এবং কোন কিছু অর্জনের জন্য ক্ষমতা ছাড়া প্রাপ্তি নেই।তাই, অর্থ ও ক্ষমতাকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করে এমন রাষ্ট্রের মানুষ যাবতীয় কর্ম পরিকল্পনা সাজায়। কারণ তারা জানে, রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের জন্য প্রদত্ত কল্যাণের প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার বিজ্ঞাপন মাত্র।ফলে জনগণ তার রাষ্ট্রের সংবিধানকে বিশ্বাস করেনা,রাষ্ট্রও জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছা, আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাথা ঘামায় না।এখানে জনগণ রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, দুইটি বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা। 

এই সমাজের মানুষ ভাগ্য ও কুসংস্কারের উপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। যা আধুনিক, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞান মনস্ক ও প্রগতিশীল জাতি গঠনের চরম অন্তরায়।এছাড়া "পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি"এমন প্রবাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিত্তিহীন। কারণ এমন সমাজে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যেহেতু কোন কিছু সম্পন্ন হয় না তাই গাধার মত পরিশ্রমের পরিবর্তে সুযোগ সন্ধানী হতে হয়।পরিশ্রম করে যোগ্যতা অর্জনের পর যোগ্য আসন মেলে না, কিন্তু অযোগ্য মানুষ তোষামোদি,ব্যক্তিপূজা ও ধূর্ত পথ অবলম্বন করে সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বের আসন অলংকরণ করে। এমন নজীর এমন সমাজে ভূরি ভূরি।       

রাষ্ট্রের প্রতি এমন আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাস এ সকল রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে আরম্ভ করে একজন শ্রমিক পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে প্রচণ্ড অর্থলিপ্সু,লোভী ও আত্মকেন্দ্রিক  করে গড়ে তোলে।জনগণ নিয়মতান্ত্রিক ও অনিয়মতান্ত্রিক উভয় উপায়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও জীবনের প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিমুহূর্তের অবিশ্বাস ও অনিরাপত্তার ভীতি প্রতিটি মানুষকে  উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখে।এমন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকেও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অন্যায়ের আশ্রয় নিতে হয় এবং চলমান অনিয়ময়ের ফল অদূরে ভোগের ভয়ে ভবিষ্যতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আরও অনিয়ম করার ছক বা কূটকৌশল আঁটতে হয়। রাষ্ট্রের প্রধান চেয়ার মানুষের কুর্ণিশ এনে দিলেও সেই কুর্ণিশ তাকে আত্মতৃপ্তির প্রশান্তি দেয় না। কারণ তিনি জানেন, এই কুর্ণিশ শ্রদ্ধার অর্জন নয়, এই কুর্ণিশ ভয়ের। রাষ্ট্রের চেয়ার সরে গেলেই কুর্ণিশের পরিবর্তে জনগণের ঘৃণার ঢিল নিশ্চিত ধেয়ে আসবে তার দিকে।


নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী  জীবনের যে স্বাদ উপভোগ করে জীবন পাড়ি দেয়, একটি অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক ও রাষ্ট্রপ্রধান সেই সেই সুখের কাছাকাছিও যেতে পারে না।  


একটি নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ ব্যক্তিগত অর্থ বিত্তের মালিক না হলেও রাষ্ট্রের উপর ভরসা রেখে নিশ্চিন্ত জীবন যাবন করে। অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ টাকার পাহাড় ও ক্ষমতার চূড়ায় অবস্থান করেও  রাষ্ট্রের উপর আস্থাহীনতা অবিশ্বাস ও অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকায় একটি অনিরাপদ ও দুশ্চিন্তার জীবন অতিবাহিত করে। 


আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবন সুন্দর ভাবে পরিবাহিতের জন্য দরকার একটি নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় ও ক্ষমতার চূড়া  নয়।প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই বোধ সৃষ্টি হওয়া একান্ত অপরিহার্য। সেই লক্ষ্যে প্রত্যেকের ভূমিকা অত্যাবশ্যক ।