একবার আমাকে এখানকার একটি হসপিটালের অপারেশন টেবিলে যেতে হয়েছিলো।অপারেশন টেবিলে যাবার পূর্ব থেকে হসপিটাল ছাড়ার পর পর্যন্ত দারুণ এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম।যা আমাকে এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের গভীরতা আরও বাড়িয়েছে।
দীর্ঘদিন একটি শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলাম। জেনারেল ডাক্তার দেখিয়ে ঔষদ সেবন করে শুশ্রূষা পাচ্ছিলাম না। দিন দিন সমস্যা বাড়তে লাগলো। জেনারেল ডাক্তার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট পাঠালো। তিনি ঔষদ দিলেন, কিন্তু তাতে সমস্যা থেকে মুক্তি পেলাম না। বেশ কয়েকবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট যাওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অপারেশন করতে হবে। ইতোপূর্বে শরীরে কোন ছুরী কাঁচি চলেনি তাই একটু ভয় হলো। ডাক্তার বলল, খুবই সাধারণ অপারেশন, ভয়ের কোন কারণ নেই। আমি মানসিক ভাবে তৈরি হলাম। অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ হল ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। চাকুরীর স্থান থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিলাম।ডাক্তারের নির্দেশ মত সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অপারেশনের দিন সকাল বেলা আমি ও জান্নাত হসপিটাল মারি থেরাচ এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।এখানে নিয়ম অপারেশনের দিন অবশ্যই সঙ্গে একজন মানুষ থাকতে হবে। যে অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পরে রোগীকে গ্রহণ করবে এবং সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। এজন্যই জান্নাত আমার সঙ্গে এসেছে। মিশেলকে বাসায় ঘুমের মধ্যে রেখে আসা হয়েছে। আমি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলে জান্নাত বাসায় ফিরে আসবে। অপারেশন শেষ হলে, পরে আবার হসপিটালে আসবে আমাকে নিতে।
হসপিটালের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে সকাল নয়টার দিকে হসপিটালের অপারেশন সেকশনে প্রবেশ করলাম।সেবিকাদের নির্দেশ মত অনেক কিছু করতে হল। কেউ অপারেশনের পোশাক পরতে সাহায্য করলেন, কেউ ঔষদ খাইয়ে দিলেন, কেউ সঙ্গে করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলেন।এদের আন্তরিক ব্যবহারে সবাইকে খুব আপন মনে হচ্ছিল।
অপারেশন থিয়েটারের ঢুকে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন ডাক্তার নার্সদের সমন্বয়ে ছয় সাতজনের একটি টিম। মনে করেছিলাম সাধারণ অপারেশন, কিন্তু এত সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি দেখে মনে হল বড় কিছু হতে যাচ্ছে। আমাকে একজন সেবিকা অপারেশন টেবিলে শুইয়ে দিলেন।শরীরে কয়েকটি ইনজেকশন পুস করা হলো। একজন ডাক্তার গল্পের ছলে আমার ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে করতে মুখে মাস্ক পরিয়ে দিলো। আমার চোখ দুটি ধীরে ধীরে বুজে আসতে লাগলো।মনে হলো দেহ মন জুড়ে অবসন্ন ধেয়ে আসছে। কেমন যেন এক প্রশান্তির ঘুম আমাকে নিয়ে যাচ্ছে অন্য এক সুখ স্বর্গে। আমি গভীর ঘুমে চলে গেলাম……
আমার মনে হচ্ছে পাহাড়ি কোন গহীন অরণ্যের ছায়া শীতল ঝর্না ধারার পাশে শুয়ে আছি। অসম্ভব এক আনন্দধারা বয়ে যাচ্ছে হৃদয়জুড়ে।এক সুখ স্বপ্নের মধ্যে ডুবে আছি।হঠাৎ আমার মনে হল আমিতো অপারেশন টেবিলে ,আমার অপারেশন কি সম্পন্ন হয়েছে? আমি আস্তে আস্তে বলার চেষ্টা করছি, আমার অপারেশন কি হয়েছে? চোখে গভীর তন্দ্রা, চোখ খুলতে পারছিনা। আমার পাশ থেকে এক মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, সে বলছে আপনার অপারেশন হয়ে গেছে। আপনি এখন ঘুম থেকে জেগে ওঠা রুমে আছেন। অপারেশনের পর রুগীদের জ্ঞান ফেরার জন্য রাখা হয় এই রুমে। ফরাসি ভাষায় এই রুমকে বলে salle de réveille ছাল দো রেভেই।ধীরে ধীরে আমি জেগে ওঠার চেষ্টা করছি । ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার পাশে এক তরুণী বসে আছে। অনেক বড় রুম, আমার মত আরও অনেকেই বিছানায় শুয়ে আছে। কেউ ঘুমে, কেউ জেগে। এদের প্রত্যেকেরই অপারেশন করা হয়েছে। ডাক্তার নার্সরা অপেক্ষা করছে এদের জ্ঞান ফেরার জন্য।আমার হাতে স্যালাইনের সুচ লাগানো রয়েছে।এর মাঝে আমার উপর ডাক্তারের ছুরিকাঁচি চলেছে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। তবে শরীরের কাটা-ছেঁড়া অংশে ব্যান্ডেজ দেখে বুঝলাম সত্যি মূল কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।জীবনের প্রথম এনাস্থেসি নেবার পর বুঝলাম, আমরা যে বেছে আছি তা আমাদের সক্রিয় মস্তিষ্ক মাধ্যমে অনুভূত হই। মস্তিষ্ক যখন সুপ্ত অবস্থায় চলে যায় তখন ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলো আমাদের নিকট ধরা দেয় না। যেমন, আমার শরীরে যে সময়টাতে ছুরিকাঁচি চলেছে ওই সময়ের বিন্দু পরিমাণ স্মৃতি আমার মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারেনি। কারণ আমার মস্তিষ্ককে এতটাই অচেতন করা হয়েছিল যে আমি আমার শরীরের মধ্যে ছিলাম না। শরীর ও আমার অস্তিত্ব আলাদা হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে আমার শরীরে উপর দিয়ে কি চলেছে তা আমার অনুভূতিতে ধরা পড়েনি। মানুষের মৃত্যুটা হয়তো এমনি, দেহ থেকে যখন আত্মা বা অস্তিত্ব বিদায় নেয় তখন এই শরীরকে পোড়ালেও মানুষ কিছু টের পায় না।আত্মা বা অস্তিত্বের অনুপস্থিতে দেহ মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তাই রক্ত মাংসের মূল্যহীন দেহকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৃথিবীর বুক থেকে ধ্বংস করার জন্য আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অনেক সময় শোনা যায়, এনেস্থেসি দেবার পর অনেকের জ্ঞান ফিরে না আসায় মৃত্যু ঘটে ।
যখন পরিপূর্ণ ভাবে আমি জেগে উঠলাম তখন আমাকে এই রুম থেকে নিয়ে যাওয়া হল অন্য একটি রুমে। বসতে দেয়া হল একটি চেয়ারে। কিছুক্ষণ পর একজন সেবিকা চা কফি আর বিস্কুট ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে আসল । আমি চা আর বিস্কুট নিলাম। চা পান করার পর প্রসাবের বেগ অনুভূত হল। একজন সেবিকার সহায়তায় টয়লেটে গেলাম। কিন্তু খুব চেষ্টা করে প্রসাব করতে পারলাম না। ফিরে এসে সেবিকাকে বললাম, প্রসাব বের হচ্ছেনা। নার্স বললেন,অপারেশনের জন্য আপনাকে প্রসাব বন্ধ রাখার ঔষদ খাওয়ানো হয়েছিল, এজন্যই সমস্যা হচ্ছে তবে চিন্তার কারণ নেই, খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার স্ত্রী আসলো আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে। আমার প্রচণ্ড বমি বমি ভাব অনুভূত হচ্ছে।আমার স্ত্রী জান্নাত কর্তব্যরত নার্সদের বিষয়টি জানালে তারা কয়েকটি কাগজের বমি করার পট দিয়ে গেলো, আর বলল আমরা ডাক্তারকে জানাচ্ছি। বেশ কয়েকবার বমি করলাম।ডাক্তার এলো দেখতে, জিজ্ঞেস করলো কেমন অনুভব হচ্ছে? বাসায় যেতে পারব কিনা? কিন্তু বমি বাড়তে থাকায় এবং শারীরিক অবস্থা দেখে ডাক্তাররা একদিন হসপিটালে রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।
আমার জন্য একটি ক্যাবিন বরাদ্দ দেয়া হল। ডাক্তার কিছু নির্দেশাবলী মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে চলে গেলো। শারীরিক অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। কিছুক্ষণ পর পর বমি হতে লাগলো। একজন সেবিকা ও আমার স্ত্রী জান্নাত আমাকে ধরে ক্যাবিনে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। স্বয়ংক্রিয় বিছানা,অনেকগুলো সুইচ বাটন রয়েছে,বিছানায় শুয়ে শুয়েই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। টিভি দেখা, বিছানা প্রয়োজনে ভাজ করা ও সোজা করা করা,এছাড়া খাওয়ার জন্য ছোট্ট টেবিল প্রস্তুত করা ইত্যাদি বিছানায় শুয়ে শুয়েই করা যায়।সব সিস্টেম বিছানার সঙ্গে সংযুক্ত। সেবিকা বিছানার সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটি বাটনের কাজ বুঝিয়ে দিলেন। একটি বাটনের কথা বিশেষ ভাবে বললেন। বললেন, যদি কখনো খুব খারাপ লাগে যেকোনো সময় এই বাটনে চাপ দেবেন আমরা চলে আসবো, কোন চিন্তা করবেন না, সার্বক্ষণিক আমরা আপনার পাশে আছি।
মেয়েকে বাসায় রেখে আমার স্ত্রী হসপিটালে এসেছে। তার মধ্যে মেয়ের জন্যও অস্থিরতা কাজ করছে। ছোট মানুষ যদি না বুঝে কোন দুর্ঘটনা ঘটায়। ওকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতো, কিন্তু হসপিটালের অপারেশন ইউনিটে শিশুদের প্রবেশ নিষেধ।প্রায় সন্ধ্যে নেমে এসেছে,কেবিনের জানালা দিয়ে দেখছি হসপিটালের করিডোরের বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। জান্নাত আমাকে রেখে চলে গেলো। হসপিটালের ক্যাবিনে আত্মীয় পরিজনহীন একা হলে নিজেকে একা মনে হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর সেবিকারা নিয়ম করে ঔষদ খাইয়ে দিচ্ছেন, ট্রেতে খাবার সাজিয়ে আনছেন,শরীরের ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছেন। ক্যাবিনের রুমটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। রুমের মধ্যেই টয়লেট,বাথরুম। সবকিছু চকচকে, তকতকে ।ঔষদ সেবনের পর বমি বমি ভাবটা চলে গিয়েছে। শরীরটাও একটু ফুরফুরে অনুভব হচ্ছে। কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম।নির্জন রুমে একা, জীবন জগত নিয়ে অনেক কিছু ভাবনায় ভর করলো…
জীবনে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অর্থকড়ি ধন সম্পদের প্রয়োজন অপরিহার্য।আমরা ভাবি, ধন সম্পদের মওজুদ যত বাড়বে জীবন অধিক নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।তাই, জীবনকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা হন্য হয়ে ব্যক্তিগত ধন সম্পদ অর্জনের জন্য ছুটে চলি।সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সম্পদ বলতে জড় পদার্থের পার্থিব সম্পদকে বুঝি। এই পার্থিব সম্পদের মধ্যে সুখ ও নিরাপত্তা খুঁজতে খুঁজতে অনেক সময় জীবনের প্রকৃত সম্পদ অযত্নে অবহেলায় অসময়ে বিনষ্ট সাধন করি।অনেকে আমরা সারা জীবনে একবারও উপলব্ধি করতে পারি না,কি মূল্যবান সম্পদ সঙ্গে নিয়ে আমরা পৃথিবীতে আসি!
সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ সেই যিনি সুস্থ শরীরে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সুস্থ ভাবে বেঁচে আছেন।মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও সুস্থ শরীর।এই সম্পদ যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্তই তাকে ঘিরে এই ধরিত্রীর যা কিছু রয়েছে সব তার অনুভূতিতে সুন্দর এবং অসুন্দর অনুভূত হয়।রাষ্ট্রীয় আইন কানুন দ্বারা সুরক্ষিত সম্পদের পাহাড় মূল্যহীন হয়ে যায় তখনি যখন প্রকৃতিগত ভাবে প্রাপ্ত শরীর কার্যকারিতা হারায়।
বাহির এবং অভ্যন্তরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা গঠিত আমাদের মানব দেহ।প্রতিটি অঙ্গ আমাদের পূর্ণাঙ্গ দেহকে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি ক্ষণ কাজ করে যায়।প্রতিটি অঙ্গ যখন একযোগে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কার্যকারিতা অব্যাহত রাখে তখনি জীবনের পূর্ণাঙ্গ স্বাদ গ্রহণ করতে পারি।
যখন আমরা পূর্ণ সুস্থতা নিয়ে জীবন যাপন করি, তখন উপলব্ধি করতে পারি না এক একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গুরুত্ব কতটুকও।
আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, « মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি » ।কথাটি আমাদের সমাজের অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার ও অনিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা ও বিশ্বাস করা হয়। আমাদের সমাজে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে মানুষের প্রত্যাশা ও কর্মের সাথে প্রাপ্তির সম্পর্ক নেই বলে, মানুষ ভাগ্য এবং অদৃশ্য শক্তির উপর অধিক ভরসা করে জীবন যাপন করে।এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে, আমাদের সমাজে কেউ সারা জীবন সৎ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জীবন যাপন করে তিন বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খায়। আবার অনেকে বাঁকা পথে এক বছর হেঁটে চৌদ্দ পুরুষের ভরণ পোষণের সম্পদ উপার্জন করতে পারে। এই অনিয়ম মানুষকে ভাগ্য বিশ্বাসের দিকে দ্বিগুণ ভাবে প্রভাবিত করে।
অর্থাৎ মুখ যিনি দিয়েছেন তিনি সারা জীবন মুখের আহারের ব্যবস্থা করবেন তার গায়েবী রহমতে,এই আহার জোটানো নিয়ে আমাদের এতো ভাবনার দরকার নেই, কোন কর্ম পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই।এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের ছোট্ট সীমারেখার দেশটিতে শুধু মানুষের মুখ আর মুখ। সেই মুখ গুলোর মধ্যে কোন মুখ মিষ্টিমণ্ডা, কোরমা পোলাওয়ের সাধ আস্বাদন করে, কোন মুখে কোন মত ডাল ভাত জোটে, কোন মুখে ঠিক মত আহারই জোটে না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রবাদটির সত্যতা এবং বাস্তবতা খুঁজে পাই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। মুখ যিনি দেন তিনি মূলত মুখের সারা জীবনের আহার সঙ্গে করেই একজন মানুষকে পৃথিবীতে পাঠান।কথাটি শুনে একটু হোঁচট লাগতে পারে, কিন্তু একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে উত্তর মিলে যাবে।আমাদের বিশ্বাসের জায়গা থেকেই বলি, আল্লাহ বা ঈশ্বর একজন মানুষকে শুধু মুখ আর পেট দিয়েই এই পৃথিবীতে পাঠান না। চিন্তা করার জন্য প্রাণী জগতের সবচাইতে উৎকৃষ্ট মস্তিষ্ক ,দেখার জন্য চোখ , ধরার জন্য হাত , হাঁটার জন্য পা , শোনার জন্য কান , শ্বাস প্রশ্বাসের গ্রহণের জন্য নাক দেহের সঙ্গে যুক্ত করেই পৃথিবীতে পাঠান।দেহের এই যে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার দেয়া মুখের সারা জীবনের আহার।আমার ব্যক্তিগত ভাবনা, স্রষ্টার এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেবার উদ্দেশ্যই হল একজন মানুষ তার দেহের এই সম্পদের( অঙ্গ প্রত্যঙ্গ) সঠিক ব্যবহার করে নিজের মুখের আহার জোগাড় করবে সমাজের ভেতর থেকে।দেহের এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার না করে বা স্রষ্টা প্রদত্ত শক্তি কাজে না লাগিয়ে অদৃশ্য শক্তির দিকে মুখের আহারের জন্য চেয়ে থাকা হচ্ছে জ্ঞানহীন মানুষের অজ্ঞতা।একটি নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে একজন মানুষ যদি তার শরীর নামক শ্রেষ্ঠ সম্পদের যথার্থ ব্যবহার করতে পারে তাহলে শুধু নিজের মুখের আহারই নয়, শত মানুষের মুখে আহার তুলে দিতে সক্ষম।
আমাদের শরীরটাই যে মুখের আহার উপার্জনের মাধ্যম সেটা বাস্তবতা দিয়ে বোঝা সম্ভব একজন অঙ্গহানী মানুষের জীবনের প্রতিকূল দিকগুলোর দিকে তাকালে।অন্যদিকে আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সৃষ্টিকর্তার দেয়া কত বড় সম্পদ সেটা বোঝা সম্ভব দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে।কোন রোগভোগে বা দুর্ঘটনায় যদি চোখের আলো চলে যায়, তাহলে এই সুন্দর পৃথিবীটাই আমার কাছ থেকে কত দূরে সরে গেলো।এমন পরিস্থিতিতে চাইব আমার সমস্ত পার্থিব সম্পদের বিনিময়ে হলেও চোখের আলো ফিরিয়ে এনে এই সুন্দর ধরণীর বুকে বেঁচে থাকতে।
যে চোখ এখনো আমাকে পৃথিবীর আলো উপভোগ করাচ্ছে, সেই চোখের মূল্য কি অর্থের বিনিময়ে পরিমাপ যোগ্য, যে অমূল্য সম্পদ আমি ধারণ করে আছি।চোখের মত আমাদের হাত,পা,নখ,কান,জিহ্বা, পেট,যৌনাঙ্গ,মলদ্বার,কিডনি,হৃদপিণ্ড,যকৃতের মত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে প্রতিনিয়ত যে সুবিধা গ্রহণ করে থাকি তার গুরুত্ব আলাদা করে ভাবার অবকাশ আমাদের খুব কম মানুষেরই হয়ে থাকে।কোন অঙ্গ যখন রোগাক্রান্ত হয়ে বিকল হয়ে পড়ে,অথবা একটি অঙ্গের আক্রান্ত হওয়ার কষ্ট যখন সমস্ত দেহ ও মনকে আচ্ছাদিত করে তখনি আমরা অনুধাবন করি দেহের প্রতিটি ক্ষুদ্র অঙ্গের অবদান ও গুরুত্ব কতটা গভীর …।
একদিন নিজস্ব জীবন বোধ নিয়ে কথা হচ্ছিলো একজন তত্ত্ব জ্ঞানীর সঙ্গে। আমি নিজেকে এই পৃথিবীর একজন পর্যটক ভাবি,কারণ যেখান থেকে পৃথিবীতে আসা কিছু বছর বা সময়ের জন্য, আবার সেখানেই প্রত্যাবর্তন করা বাধ্যতামূলক। তাই, এই সীমিত সময়ের মধ্যে পৃথিবীর মানুষের তৈরি জটিলতা থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে মুক্ত রেখে জীবন ও জগতের মধ্যে বিদ্যমান অবারিত সৌন্দর্যের স্বাদ প্রাণ ভরে গ্রহণ করা ও মানব সৃষ্ট জটিলতার সমাধানের জন্য কাজ করার মধ্যেই আমার প্রাপ্ত মানব জনমের সার্থকতা ও সমৃদ্ধি খুঁজি ।ওনার জীবন বোধ ব্যাখ্যা করলেন একটু অন্যভাবে।তিনি নিজেকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারক মনে করেন।কারণ প্রতিদিন সূর্য ওঠে আবার অস্ত যায়, রাতে চাঁদ জ্যোৎস্না ছড়ায়, ফুল ফোটে, বাতাস বয় এগুলো এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিত্য কর্মকাণ্ড।ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে অস্তিত্বের অনুভূতির সংযোগ অপরিহার্য, সেই অস্তিত্বই হচ্ছি আমি।আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে বলেই ওদের কার্যক্রম সার্থক,আমি ওদেরকে ধারণ করি এবং ওদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই বলেই ওরা এতো সুন্দর।আমার অস্তিত্ব যদি এই পৃথিবীতে না থাকে তাহলে সূর্য উঠলেই আমার কি, আর চন্দ্র জ্যোৎস্না না ছড়ালেইবা আমার কি যায় আসে। অর্থাৎ, এই পৃথিবী ও ব্রহ্মাণ্ডের প্রাত্যহিক কার্যক্রম চলমান এবং এই যাত্রা অসীমের দিকে।আমরা প্রত্যেকেই এই অসীমের মাঝে ক্ষণকালের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এক একটি অংশ।ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার অস্তিত্ব বিরাজমান এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মাঝে, ততোক্ষণ পর্যন্তই এই পৃথিবীতে বিরাজমান সবকিছু আমার।প্রকৃত জগত একটা হলেও প্রতিটি মানুষের জগত আলাদা আলাদা।একটি শিশুর নিজস্ব জগত তার নিজের মত,সে জগতকে সেই ভাবে চিন্তা করে, যেভাবে সে আবিষ্কার করে। ওই শিশুর মতই একজন কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ, অসুস্থ, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী বিভক্ত মানুষের এক একটি জগত তাদের নিজস্ব ভাবনায় যেমন।
ফুল সর্বদায় সৌন্দর্য বিলায়, ঊষার আলো সর্বদাই হলুদ,মৃদু বাতাস সর্বদাই প্রশান্তির, কিন্তু তা আপনার জগতে সুন্দর হয়ে ধরা দেবে তখনি যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার আত্মার বসবাস হবে আপনার সুস্থ শরীরের মধ্যে।মগজের মধ্যে যদি সারাক্ষণ কূট কূট ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের আলো রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের মতই। অন্যদিকে ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড়ের মানসিক প্রশান্তি নিমিষেই অশান্তিতে নিপতিত হয়, যখন ডাক্তার বলে দেয় আপনার ক্যান্সার আক্রান্ত দেহের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে মাত্র আর কয়েকটি মাস।
একজন মানুষের অস্তিত্ব, আত্মা ও দেহের সমষ্টি। আত্মা এবং দেহ দুইটি আলাদা সত্ত্বা।
ভারতীয় দর্শনে আত্মা ও দেহ সম্পর্কে একটি মত প্রচলিত রয়েছে,আত্মা অজড়ীয়,অবিভাজ্য এবং অবিনশ্বর।দেহ নশ্বর এবং পোশাকের মত। জীর্ণ পোশাক ত্যাগ করে নতুন পোশাক পড়ার মত আত্মা ভগ্ন জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহের সন্ধান করে।অর্থাৎ আত্মা ভগ্ন জীর্ণ রোগাক্রান্ত দেহে অবস্থান করতে চায়না।এই মত অনুসারে আপনার শরীর যদি সুস্থ ও সতেজ না হয় তাহলে আপনার শরীরের মধ্যে বসবাসরত আত্মাও আপনার দেহ ছেড়ে পালাতে চায়।তাই নিজের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যত্ন নেয়া অপরিহার্য এবং পৃথিবীর জীবনের স্বাদ দীর্ঘায়িত করতে শরীরকে গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য।
শরীর থাকলে সেই শরীরে রোগ বাসা বাধবে এটাই নিয়ম। তবে সেই রোগ সৃষ্টির জন্য নিজের ভুল এবং রোগ মুক্তির প্রচেষ্টা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী।
ইসলাম ধর্মে হালাল হারামের ভেতর দিয়ে মানুষের গ্রহণ বর্জনের বিভাজন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে মূলত ভালো ও সুস্থ থাকাকে উদ্দেশ্য করে।ইসলাম ধর্মে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নেয়ার চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।নেশা জাতীয় দ্রব্য ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে,কিন্তু সেই উপদেশ অমান্য করে যদি নেশা জাতীয় দ্রব গ্রহণের দ্বারা অসুস্থ হই, তাহলে সেই অসুস্থতার ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে। শুধু তাই নয় কেয়ামতের দিন আল্লাহর দেয়া শরীর ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট করার জন্য কৈফিয়তের সম্মুখীন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৫৮)।
আমার মনে হচ্ছিলো, পার্থিব সম্পদের দিকে আমরা অবশ্যই ছুটবো, তবে সেই ছোটার উদ্দেশ্য হবে জীবনের মূল্যবান সম্পদ শরীর নামক দেহটাকে রক্ষার জন্য অর্থাৎ সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য। শরীরকে বঞ্চিত করে অথবা ধ্বংস করে পার্থিব সম্পদ জমানোর নেশা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।যে সম্পদ জীবনকে সুন্দর অনুভূতিতে ভরে দিতে পারে, সেই সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টাই হবে জ্ঞানের পরিচয়।
নিজের শরীর নিয়ে এতো গভীর চিন্তা বা উপলব্ধি আমার কখনো হয়নি। মনে হল জীবনে বেঁচে থাকতে হলে কত বিচিত্র পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এক একটি পরিস্থিতি মানুষকে জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবায়, নতুন করে শেখায়, জীবনের গতি পথ পরিবর্তন করে দেয়। এটাই মনে হয়, জীবনের বৈশিষ্ট্য।
টিভি দেখা আর জীবন জগত ও সমাজ নিয়ে ভাবতে ভাবতে মধ্যরাত হয়ে এলো।কলিং বেল বাজিয়ে একজন নার্স এলো দিনের শেষ ঔষদটি খাওয়াতে। ব্যথার ঔষদ,কারণ রাতের কয়েক ঘণ্টা পাড়ি দিতে হবে। ঔষদ না খেলে কাটাছেড়া অংশে ব্যথা বাড়বে।ডাক্তার নার্সদের ক্ষণে ক্ষণে তদারকি,হসপিটালের পরিবেশ, আমার সুসজ্জিত কেবিন, সবমিলিয়ে আমার কখনোই মনে হয়নি আমি অসুস্থ রোগী হয়ে হাসপাতালে আছি। মনে হয়েছে, কোন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অবকাশ কালীন সময় কাটাচ্ছি।
দারুণ একটি ঘুমের রাত পাড়ি দিয়ে দিলাম। জানালার কাঁচ ভেদ করে সকালের সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। নতুন দিনের আলোয় ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি জান্নাত টুথপেস্ট, টুথ ব্রাশ, কিছু ফল নিয়ে আমার কেবিনে হাজির।অসুস্থতার সময় প্রিয় মুখগুলো আরও প্রিয় হয়ে ওঠে, যদি অসুস্থ বিছানার পাশে তাদের দেখা যায়।আমি জীবনে অনেকবার খুব জ্বরে ভুগেছি। প্রতিবার তেরো চৌদ্দ দিনের ভোগান্তি।এক সময় ঘুমহীন রাত জেগে বাবা মা সেবা সুশ্রুসা দিয়ে আমাকে সুস্থ করে তুলতেন। বিয়ের পর আমার স্ত্রী জান্নাত প্রতিবার আমার অসুস্থতার সময় খুব যত্নের সহিত আমার পাশে থেকে সেবা করেছে। কখনো বিন্দু পরিমাণ অবহেলা করেনি। যখন আমরা দুজন ঢাকা থাকতাম তখন একবার প্রচণ্ড জ্বরে পড়লাম,বাসায় আমাকে দেখার কেউ নাই, জান্নাত প্রায় বারো তেরো দিন অফিসে যাওয়া বন্ধ করে সার্বক্ষণিক আমার পাশে থেকেছে। ঝগড়াঝাঁটি, মান অভিমান ভুলে গিয়ে আরও গহীন আপন মানুষ হয়ে এই অসুস্থকালীন সময়ে সেবা করেছে।ওর ক্ষেত্রে হলে আমি ওর মত করে ওকে সেবা করতাম কিনা, আমার নিজেরই সন্দেহ রয়েছে।এ ক্ষেত্রে ও আমার থেকে অনেক মহৎ মানুষ। আজ হসপিটালে আমার বিছানার পাশে ওর উপস্থিতিতে সেই আগের মতই মমত্ব ভাব ফুটে উঠলো। আমার অপারেশনের কথা অবশ্য কাউকে বলিনি, সবাই এখানে কারণে অকারণে ব্যস্ত থাকে।জেনে কষ্ট ও সময় ব্যয় করে কেউ ছুটে আসবে তাই কাউকে না জানিয়েই হসপিটালে ভর্তি হয়েছি।তাছাড়া অপারেশনটাও খুব বড় মাপের ছিলোনা।
ডাক্তার এসে সার্বিক শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাকে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিলেন।বাসায় কিভাবে শরীরের কাটাছেঁড়া অংশের যত্ন নিতে হবে, ঔষদ সেবন করতে হবে সব বুঝিয়ে দিলেন।হাসপাতালের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আমরা বাসায় চলে এলাম। ফ্রান্সের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমার নতুন এক ধারনার জন্ম নিলো।বিপদকালিন দুইদিনের হসপিটাল জীবন থেকে বিশেষ এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম ।আমি হসপিটালে ডাক্তার নার্সদের সঙ্গে সময় কাটালেও আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি ছিলাম পারিবারিক পরিবেশে এবং আমার পাশে থেকে সেবা করেছে আমার বাবা মা অথবা আপন ভাই বোন।
ফ্রান্সে আমার ব্যক্তি জীবনে উল্লেখিত দুটি স্বাস্থ্য সমস্যায় যে ভাবে স্বাস্থ্য সেবা পেয়েছি, করোনা সঙ্কটকালীন সময়েও আক্রান্ত মানুষ একই রকম যত্নে স্বাস্থ্য সেবা পেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৯)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৮)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৭ )
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৬ )
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৫ )
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৪ )
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৩)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব -২ )
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব -১)