মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব -১)

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে সারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক অদৃশ্য দানব করোনা ভাইরাস।একটি স্থানীয় বাজারের অজানা কোন পশুপাখীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে অবস্থান। এর পর থেকে জ্যামিতিক হারে তার বংশবিস্তার।এখন পৃথিবীর মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে চালাচ্ছে  আগ্রাসী অভিযান।প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছে প্রতিটি দেশ।বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ,জনবল ও নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে।কিন্তু প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে এই মরণঘাতী ভাইরাসের আক্রমণ।এক সময় সারা পৃথিবীর মানুষ এই ভাইরাসে কাছে উহানের মানুষের অসহায়ত্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছে।চীনা জাতি একটি ভাইরাসের কাছে পরাস্ত হবে,এটা তারা মেনে নিতে পারেনি।সারা পৃথিবী যখন চীনাদের খাদ্যাভ্যাস,ধর্মীয় বিশ্বাস অবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এই ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে নিজেদের মত করে গবেষণা, হাসি তামাশা করছে,তখন চীনারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই ভাইরাকে নির্মূলের লক্ষ্যে নির্ঘুম লড়াই করেছে নিজেদের মত করে। অনেকেরই ধারণা ছিল হয়তো এই তাণ্ডবলীলা চীনেই শেষ হবে। কিন্তু তা না হয়ে বরং সারা পৃথিবীর আজ অন্যতম উদ্বেগের কারণ এই করোনা ভাইরাস।  

  

ধারণা করা হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির দিকে ফ্রান্সের Mulhouse মুলুজ অঞ্চলের Haut Rhin উ রা শহরের একটি খ্রিস্ট ধর্মীয় সমাবেশ থেকে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঘটে।কিন্তু,ফ্রান্সের করোনা আক্রান্ত প্রথম মৃত্যুর ঘটনার গল্পটা অন্য রকম। জানুয়ারি মাসে চীনের হুবেই শহরের ৮০ বছরের এক অধিবাসী ও তার মেয়ে ফ্রান্সে ভ্রমণে আসেন।হঠাৎ করেই তারা অসুস্থ হয়ে পরে।২৫ জানুয়ারি প্যারিসের Hopital Bichat অপিতাল বিশেতে তারা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন।ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পরে তারা উভয়ই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।প্রায় তিন সপ্তাহের চিকিৎসায় মেয়ে সুস্থতার দিকে এগিয়ে গেলে পিতার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে মৃত্যু হয়।খবরটি ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রী Agnes Buzyn ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে জানায় ফ্রান্সে কোভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন চীনা পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।ধারণা করা হয়, এশিয়ার বাইরে প্রথম এটাই কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমিত মৃত্যু।

করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত  হওয়ার পর থেকেই  ফ্রান্সের  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই দুর্যোগকে তিনটি স্তরে ভাগ করে মোকাবেলার প্রস্তুতি চালাচ্ছিল। প্রথম স্তরে, জনসচেতনেতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রচার অভিযান চালায় ইলেক্ট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে।সেই সাথে ভাইরাস যদি ব্যাপক ভাবে  ছড়িয়ে পরে সেটাকে মোকাবেলার একটি খসড়া প্রস্তুতিও জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়।২০২০ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা করা হয় মহামারীর দ্বিতীয় স্তর।এই স্তরে সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকে,নিম্নগামীর কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়না।তখন পর্যন্তও সচেতনেতা মূলক কার্যক্রমের মধ্যেই ছিল ফ্রান্স সরকারের পদক্ষেপ।প্রতিনিয়ত ভালোভাবে হাত ধৌত করা, একে অন্যের সাথে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকা।হাত নাখ মুখ ও চোখে স্পর্শ থেকে বিরত রাখা,হাঁচি কাশি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধির আচরণ মেনে চলা, টিস্যু পেপার একবার ব্যবহার করে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেয়া ইত্যাদি।এর মধ্যদিয়েই যতটা সম্ভব সতর্কতার অবলম্বন করে চলছিলো সরকার।  ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়,অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থলগুলোতেও নেয়া হচ্ছিলো অতিরিক্ত সতর্কতা। কিন্তু,করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম সপ্তাহে ১ থেকে ১২ জনে উত্তীর্ণ হয়, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৯১জন, তৃতীয় সপ্তাহে ৬৫৩ জন, চতুর্থ সপ্তাহে ৪৪৯৯ জনে।পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুর্যোগের তৃতীয় স্তর ঘোষণা করে।প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৩ মার্চ ২০২০,  ফরাসি সরকার  ১৬ মার্চ থেকে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার নির্দেশ ও সাথে জরুরী সতর্কতামূলক নির্দেশাবলী পালনের ঘোষণা প্রদান করেন। এর পর থেকেই জনমনে আশংকা ঘনীভূত হতে থাকে। আরও কঠিন নির্দেশ আসার সম্ভাবনা অনুধাবন করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব সামগ্রী মওজুদের জন্য ব্যাপক মানুষের সমাগম হতে  থাকে সুপার মার্কেটগুলোতে। কিন্তু সরকার পূর্ব ঘোষিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ১৫ মার্চ বলবদ রাখে এবং  ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চালায় ব্যাপক প্রস্তুতি।


ইচ্ছে ছিল ভোট দিতে না যাওয়ার, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য দুপুর বারোটার দিকে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে বাসার পাশের ভোট কেন্দ্রে যাই। ভোট কেন্দ্রে ভোটার ও কর্মকর্তা উভয়ের মধ্যে এক ধরণের সন্দেহাতীত দৃষ্টি এবং একে অপরকে স্পর্শ না করার সর্বোচ্চ সতর্কতা।ভোটার উপস্থিতি খুব কম যারা রয়েছে তারা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করছে।ভোট কেন্দ্রের কলম ব্যবহার না করে নিজের কলম দিয়ে সাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে ভোট প্রদান করলাম।হ্যান্ড স্যানিটেশন জেল হাতে মেখে মানসিক স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বাইরে এসে চলে গেলাম দানুভ মেট্রো স্টেশনের দিকে। 


আমার এলাকার এক বড় ভাই,নাম মুজিবর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার। সেন্ট্রাল আফ্রিকায় জাতীসংঘ মিশনে দায়িত্বরত রয়েছেন।এক মাসের ছুটিতে ঘুরতে এসেছেন প্যারিসে। তার পরিকল্পনা ছিল এখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ ঘুরে বেড়াবেন।কিন্তু,করোনা সংকটের কারণে আটকা পড়ে আছেন প্যারিসে।ওনাকে পূর্বে সরাসরি কখনো দেখিনি। বাড়ী করেছেন আমাদের এলাকায়। সেই ২০০৫ সালের পর থেকে রাজবাড়ীর বাইরে রয়েছি যার ফলে আমাদের এলাকা নতুন বসতি স্থাপন করা অনেকেই আমার অচেনা।আবার ষোল বছর পূর্বে যে শিশু মায়ের কোলে ছিল সেই শিশু এখন যুবক কিংবা যুবতী হয়ে উঠেছে তারাও আমাকে চেনেনা।মুজিবর ভাইয়ের আর একটি বড় পরিচয় হল তিনি আমার বড় বোনের মেয়েবেলার সই ময়না আপার স্বামী।আমাদের ছেলেবেলার ওই সময়ে স্কুলের বন্ধু কিংবা খেলার সাথীদের মধ্যে যার সাথে বেশী সখ্যতা গড়ে উঠত তখন এক মেয়ে অন্য মেয়ের সাথে সই ,এক ছেলে অন্য ছেলের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোস্তো পাততো।এই সম্পর্কগুলো হতো অন্য বন্ধুদের থেকে একটু বিশেষ এবং ভিন্ন ধরণের।অনেকটা আত্মীয়তা সম্পর্কের মত।ছেলে মেয়েদের সই কিংবা দোস্তো সম্পর্কের সুবাদে অভিভাবকদের মধ্যেও আলাদা সখ্যতা গড়ে উঠত,উপহার বিনিময় হতো,এক বাড়ীর সদস্যরা অন্য বাড়িতে আমন্ত্রিত হতো।ময়না আপা আমার বোনের সই হওয়ার সুবাদে ছোটবেলায় তাদের বাড়িতে অনেক যাওয়া হয়েছে,খাওয়া হয়েছে।সেই সুবাদে ময়না আপাদের পরিবারকে  আত্মীয়র মত ভাবতাম, ফলে ওনার পরিবারের সবাইকে আমার ভালোভাবে চেনা জানা। মুজিবর ভাইকে রোববার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম আমার কুটিরে। দুপুর একটার দিকে দানুভ মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে মেট্রোর প্রবেশ দ্বারে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকার কথা থাকলেও উনি পৌঁছুলেন পনেরো মিনিট পরে।ওনাকে নিয়ে বাসায় এসে একটু গল্পগুজব খাওয়া দাওয়া হল।আমার  দীর্ঘ বারান্দার সাজানো ফুলের বাগান ঘুরে দেখে ওনার মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন।সুদীর্ঘকাল পরে ময়না আপার সাথে হোয়াসআপে ভিডিও ফোনালাপ হল।উনি এখন ওনার নিজের বাসায় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল চালান।দুপুরের খাওয়া দাওয়া  করে ওনাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমার আবাস এলাকা ঘুরে দেখাতে।এর মধ্যেই  আইফেল টাওয়ার,ল্যুভর মিউজিয়াম সহ প্যারিসের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপায়হীন হয়ে আমি ওনাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম পাহাড় অরণ্যে ঘেরা বুতসুমো পার্কে।আলো ঝলমল রৌদ্রোজ্জ্বল দিন,অনেক দিনের মেঘে ঢাকা সূর্য মেঘ ভেদ করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।এখানে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হল প্রকৃতির বিশেষ উপহার।মানুষ বছরের অধিকাংশ সময় পার করে শীতল মেঘাচ্ছন্ন প্রকৃতির মাঝে।অধীর প্রতীক্ষা থাকে একটু উষ্ণ আলো ঝলমলে দিনের।রোববারের দিনটি প্যারিসে এলো বর্ণনার মতই ভিন্ন রূপে।মানুষ এমন একটি দিনের আগমনে ভুলে গিয়েছিলো করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের কথা, সরকার নির্দেশিত সতর্কতা,বিধিনিষেধ সব কিছু। মানুষের চেহারার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ আতংকের ছাপ পাওয়া গেলনা।পাহাড়ের ঢালু ভূমির  উপর মকমলের মাদুরের মত দূর্বা ঢাকা ঘাস,তার উপর স্বল্প বসনে নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে শত শত মানুষ।পার্কের অলিগলির রাস্তাগুলোতে অনেকটা গায়ের সাথে গা লাগানো মানুষের লাইন।এমন চিত্র দেখে আমি অনেকটাই হতবাক হলাম। মুজিবুর ভাইয়ের সাথে হাঁটছি কিন্তু ভেতর থেকে প্রতি মুহূর্তে সতর্কতার সংকেত দিয়ে যাচ্ছে । যদিও ওনার মধ্যে তেমন কোন আতংকের বহিঃপ্রকাশ দেখা মিলল না।উনি ঘুরতে এসেছেন, নতুন নগর প্রকৃতির সৌন্দর্যে উড়ে গেছে ওনার ভেতরের ভয়ভীতি।আমি এখানকার জীবন যাপনে অভ্যস্ত।টেলিভিশনে নিয়মিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সংবাদ দেখে আসছি এবং সরকারের নির্দেশবলি অনুসরণ করে চলাফেরা করছি মার্চ মাসের শুরু থেকেই।আমাদের পরিবারের সবার পকেটে হ্যান্ড স্যানিটেশন জেল থাকে।আমার মেয়ে মিশেল সুযোগ পেলেই হাতে মাখে।মেট্রো বাসে খুব সতর্কতার সহিত চলছি অনেক আগে থেকেই।এভাবে চলাফেরা করতে করতে পরিবারের তিনজনই অনেকটা শুচিবাইগ্রস্ত মানুষ হয়ে উঠেছি ইতোমধ্যে।


কিভাবে,কবে এলাম এই দেশে ,কিভাবে হয়ে উঠলাম এই ভূখণ্ডের একজন মানুষ,এই দেশের চাকুরী,বেতন,সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে মুজিবুর ভাইয়ের কৌতূহলভরা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বুতসুমো পার্ক থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম পার্ক দ্যো লা ভিলাত।সেখান থেকে পার্ক বুত দু সাপু রুস।সব খানেই লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যে নামার আগে ওনাকে নিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।টিভি ছেড়ে ছোপায় বসতেই টিভি পর্দায় বিএফএম চ্যানেলে ভেসে উঠলো বুতসুমো পার্কের ছবি।যেখান থেকে আমরা কয়েক ঘণ্টা আগে ঘুরে এলাম।এমন পরিস্থিতিতে পার্কে মানুষের এমন উপচে পড়া ভীর দেখে আগামীর করোনা ভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে চলছে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ তাদের আলোচনার মধ্য দিয়ে।এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ফরাসি জনগণের এমন আক্কেল জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড দেখে সরকারও বেশ শঙ্কিত হয়ে উঠলো এবং বিশেষজ্ঞদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা গুরুত্বের সহিত আমলে নিলেন।ঐদিন রাতেই ঘোষণা আসলো ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ জাতির উদ্দেশ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেবেন।ইতোমধ্যে মানুষের সকল জনাকীর্ণ স্থলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে,করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা পাঁচ হাজারের উপরে,প্রাণহানীর সংখ্যাও কম নয়, তাই মানুষ ধরেই নিয়েছিলো সরকার দীর্ঘমেয়াদী  কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।সেই অনুমানকে মাথায় রেখে ১৬ মার্চ সকাল থেকেই সকলের মধ্যে শুরু হলো  এক ধরণের যুদ্ধ আতংক।নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী,শুকনো খাবার ইত্যাদি মজুদের জন্য ট্রলি হাতে সবার ভিড় জমেগেলো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে।দোকানের তাকে রাখা পণ্য সামগ্রী যতটুকু যার চোখে পড়ছে সবটুকুরই সে দখল নিয়ে নিচ্ছে।আমার জীবদ্দশায় কখনো যুদ্ধ পরিস্থিতি বাস্তবে দেখা হয়নি।১৬ তারিখের সারা দিনের  চিত্র থেকে আমার কল্পনায় ভেসে উঠলো যুদ্ধপূর্ব কোন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অসহায় দৃশ্যপট।আমার স্ত্রীও বেশ কয়েকটি দোকান থেকে কয়েক বার উদভ্রান্তের মত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে এনে আবার ছুটতে লাগলো ভুলে যাওয়া জিনিসপত্র কিনতে।দিন শেষে তার মজুদপণ্য দেখে তাকে ডাকাত দলের একজন বীর সদস্য মনে হল।যে মানুষ পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথের ভয়ে বাসের এক স্টপেজ যেতে প্রায় দুই ইউরোর একটি টিকেট খরচ করে সেই মানুষ ভবিষ্যৎ সংকটের কথা ভেবে ঐদিন সাহসী ডাকাতের মত প্যারিসের দোকানপাট লুটে নিয়ে এসেছে।বিশ্বাস হচ্ছিলো না কিভাবে পারলো সে!  মনে হল বাঁচার তাগিদে খাদ্যের জন্য বাঘ যেমন হিংস্র হয়ে ওঠে, সংকটময় মুহূর্তে একজন ভীতু মানুষও বীর হয়ে উঠতে পারে। 

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব -২ ) 

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৩)

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৪ )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন