বাংলাদেশের ক্রিকেট আমাদের গর্বের জায়গা।ক্রীড়া ক্ষেত্রে গর্ব করার মতো অনেকে কিছু দিয়েছে আমাদের ক্রিকেট।অনেক মেধাবী ক্রিকেটারের শ্রম, ত্যাগ ও নিষ্ঠা জড়িয়ে রয়েছে আজকের এই অবস্থানের পেছনে। ক্রিকেটের এই অগ্রগতিকে কেন্দ্র করে দেশের যুব সমাজের বিশাল অংশ আজ ক্রীড়ামুখী, খেলাকে নিয়ে অনেক তরুণ আজ জীবন গড়ার স্বপ্নও দেখে । এই ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফলে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।সুস্থ জাতি গঠনে ক্রীড়ার ভূমিকা অপরিসীম।একমাত্র ক্রিকেটই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে গর্বের সহিত আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। তাই ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে ক্রিকেটারদের প্রতি আমাদের সমর্থন ও উৎসাহ গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিগত মানসিকতায় আমরা সবকিছু তাৎক্ষনিক চাই, কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য সাধনা এবং ধৈর্য ধারণ করতে অভ্যস্ত নই।যেটা জানিনা বা পারিনা সে বিষয়েও পাণ্ডিত্য করতে আমাদের জুরি নেই। আমরা বুঝতে চেষ্টা করিনা, যে কাজটি করে তার কাজের চেষ্টা ও পরিশ্রমের কষ্ট।দূর থেকে নিজের মত একটা মন্তব্য করেই মনে করি বিশাল কাজ করে ফেলেছি। আমার একটি মন্তব্য অন্যের জীবন ও কর্মে উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে তা ভাবার সময় হয় হয় না কখনো।
চলমান টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফর্মেন্স নিয়ে চলছে দারুণ সমালোচনার ঝড়।আমার কাছে মনে হয়েছে দারুণ একটি প্রতিভা সম্পন্ন দল এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে। যে দলটি দেশের মাটিতে এই ফরম্যাটের খেলায় অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সাথে সিরিজ জিতে মানিসিক শক্তিতে উদ্দীপ্ত হয়ে এই বিশ্বকাপ মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা টেস্ট প্লেয়িং দেশ,ক্রিকেট মান মর্যাদায় অন্যদের থেকে উপরে তাই দলের প্রতি আমাদের প্রত্যাশাও অনেক। ধরেই নেই আমাদের সাথে আইসিসি’র কোন সহযোগী সদস্য দেশ জিততে পারবে না।মনে রাখতে হবে,১৯৯৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত আমরা আইসিসি’র সহযোগী সদস্য ছিলাম।এতো বছর পার হলেও অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মতো দল এখনো বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কোন সিরিজ খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করেনা না। আমরা দেখেছি সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া দলকে বাংলাদেশে আনতে বিসিসিবি’কে কি পরিমাণ কসরত করতে হয়েছে।অস্ট্রেলিয়া টিম এবং তাদের সমর্থরা ধরেই নেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা মানেই অস্ট্রেলিয়ার জয়।তাদের এই প্রত্যাশার কারণ তাদের ধারাবাহিক এবং অতীতের সাফল্য।সেই অস্ট্রেলিয়া যখন বাংলাদেশ দলের কাছে এসে পাত্তা না পেয়ে সিরিজ হেরে যায় তখন তাদের খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের মানসিক অবস্থা কি ঘটে, একটু হৃদয় দিয়ে ভাবুনতো …তবে এটাই ক্রিকেট এবং এটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য ।এই অনিশ্চয়তাই ক্রিকেটের আনন্দ।
চলমান বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দল হেরে যায় আইসিসি’র সহযোগী দেশ স্কটল্যান্ডের কাছে, অভিজ্ঞ তারকা সমৃদ্ধ দলের এমন পরাজয় মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হয়েছে।তবে এই পরাজয় অস্বাভাবিক নয় । দিনটি স্কটল্যান্ডের ছিল বলেই এমন অঘটন ঘটেছে ।কিন্তু, আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থেকে আরম্ভ করে সমর্থকরা প্রথম দিনেই ক্রিকেটারদের প্রতি তীর্যক মন্তব্য করে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি।আমি মনে করি আমাদের এই তীর্যক মন্তব্যগুলোই আমাদেরকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে।
আমরা যদি প্রথম রাউণ্ড থেকে বাদ পরতাম তাহলে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না কারণ ওমান ক্রিকেট টিমের আমাদের সঙ্গে জেতার শক্তি সামর্থ্য ছিল, কিন্তু সৌভাগ্য তেমনটি ঘটেনি। আর যদি এমনটি হতো তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে গেলো এমনটি ভাবার যৌক্তিকতা নেই।
যারা মাঠের খেলা খেলে আমাদের জন্য সুনাম বয়ে আনবে তাদের একটি পরাজয় দেখে যদি আমরা তাদেরকে মানসিক শক্তি না জুগিয়ে ভর্ৎসনা করি তাহলে তারা উজ্জীবিত হবে কিভাবে। শুধু শারীরিক শক্তি ও কৌশল জানা থাকলেই কোন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়না,জয়ী হওয়ার জন্য সব চেয়ে বেশী দরকার মনোবল ও অন্যের অনুপ্রেরণা।কোন ব্যর্থতার সময় সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন অন্যের অনুপ্রেরণা, সেই অনুপ্রেরণার বদলে আমাদের বোর্ডকর্তা প্রথম ব্যর্থতায় দিনে ক্রিকেটারদের পাশে না থেকে ভর্ৎসনা উপহার দিয়েছেন।ফলে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে টিমের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় মাঠের পারফর্মেন্সের চাপের পাশাপাশি বোর্ড ও সমর্থকদের সমালোচনার চাপ মাথায় নিয়ে মাঠে নেমেছে।ফলে, অতিরিক্ত পেশারের কারণে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় তার সহজাত খেলাটা হারিয়ে ফেলেছে।একজন খেলোয়াড় কিভাবে ব্যাট চালাবে, কিভাবে বল করবে সে সিদ্ধান্ত ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করবে একজন খেলোয়াড়, কখনো পরামর্শ থাকবে অধিনায়ক ও দলের কোচের।
একজন ক্রিকেটার তার অর্জিত অভিজ্ঞতা ও খেলোয়াড়ি শিক্ষা মাঠে প্রয়োগের ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কখনো সফল হন, কখন ভুল সিদ্ধান্তে ব্যর্থ হন।কিন্তু তার চেষ্টা ও সামর্থ্য ঢেলে দেবার কার্পণ্য থাকে না বলে বিশ্বাস করি।কারণ তার প্রতিটি ম্যাচের খেলার পারদর্শিতার উপর নির্ভর করে একজন খেলোয়াড়ের পেশাগত পরবর্তী খেলোয়াড়ি জীবন।মুশফিক রহিম সুইপ শর্ট খেলে রান করতে পারেন বলেই এমন শর্ট খেলেন এবং রানও করেন। এখন কোন দিন যদি এমন শর্ট খেলতে গিয়ে তিনি আউট হন তাহলে তার নোংরা সমালোচনায় মেতে ওঠা কতটা যৌক্তিক ?যে শর্টটা খেলে তিনি আউট হয়েছেন সেই শর্টটাতেতো চার রানও হতে পারতো।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, যারা মাঠে পারফর্মেন্স করবে তাদের খেলার কৌশলের প্রতি পূর্ণ স্বাধীনতা এবং আস্থা রাখা জরুরী একটি টুর্নামেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত।কোন খেলোয়াড়ের যোগ্যতার কাটাছেড়া বা বিশ্লেষণ হওয়া উচিত টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর।বোর্ডকর্তা,সাংবাদিক ও সমর্থদের টুর্নামেন্ট মধ্যবর্তী সমালোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক এবং ইতিবাচক, কখনোই অপমানজনক নয়।
চলমান বিশ্বকাপে আমরা দেশের সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক ও সোশ্যাল মিডিয়া সমর্থকরা সেই সমালোচনাটা গঠনমূলকভাবে করতে পারিনি , বরং সমালোচনার নামে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিজীবন ও খেলার যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করেছে। যা একেবারেই সমীচীন হয়নি।যা আমাদের প্রত্যাশাকে আরও গুড়ে বালি করেছে।এই ব্যর্থতার দায় যেমন খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফদের সেই সাথে বোর্ডকর্তা,সংবাদ মাধ্যম ও সমর্থদের কোন অংশে কম নয় বলে মনে করি।
মনে রাখতে হবে, যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট জন্ম দিয়েছে সেই দল ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছে ২০১৯ সালে, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দল এখনো বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায়নি, তাহলে আমাদের কেন এতো অস্থিরতা?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন