বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
শুধু শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নয়,
শুধু বিশেষ দিনে আলোচনার ঝড় তোলা নয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
কোন শিশু বাংলাদেশের বুকে ঋনের বোঝা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হবেনা।
কোনো বাঙ্গালী অন্য বাঙ্গালীর বুকে আর গুলি চালাবে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে
সুশিক্ষা ও প্রযুক্তির হাত ধরে বাঙ্গালী জাতির অগ্রযাত্রায় পথে হেঁটে চলা,
জাতীয় স্বার্থে দল মত ভুলে গিয়ে এক সুরে কথা বলা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে 
বাংলার এক একটি ভোর বাঙ্গালীর হাসি মুখ দিয়ে শুরু হওয়া।

রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২

প্রসঙ্গ আমাদের বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা


আমি যে দেশটাতে বসবাস করি সেই দেশের ফুটবল টিম এবারের ফুটবল বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট টিম, যাদের এবারও বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ তারা গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন । অথচ, প্যারিসের কোন এপার্টমেন্টের বারান্দায়, বিল্ডিঙয়ের ছাদে, রাস্তার ধারে কোথাও ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা বা ফ্রান্সের ফুটবল টিমের কোন পতাকা এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি। এছাড়া বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার বিশেষ কোন চিহ্ন কোথাও খুঁজে পাওয়া দায়। তার মানে ফরাসিরা ফুটবল ভালোবাসে না, অথবা তাদের ফুটবল নিয়ে কোন উচ্ছ্বাস নেই! তা কিন্তু নয়, ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল এবং ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব পারি ছা জেরমা Paris saint germain প্যারিসে অবস্থিত। এই খেলাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরোর ব্যবসা জড়িত। প্রশ্ন জাগতে পারে,তাহলে ফরাসিরা কিভাবে এই উৎসব উন্মাদনা পালন করে ?

 

যেদিন ফ্রান্সের খেলা থাকে সেদিন শহরের বারগুলোতে ফুটবল প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কারো অবসর সময় থাকলে বাসার টিভি পর্দায় খেলার আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু, খেলাকে কেন্দ্র করে অতিরঞ্জিত কোন কার্যকলাপ কখনো লক্ষ্য করা যায় না। কারণ, ফরাসিদের নানা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফুটবল একটি মাধ্যম মাত্র।এছাড়া, এখানকার প্রত্যেকের জীবন যাপনে প্রথমে গুরুত্ব পায় নিজের জীবিকা অর্জনের কর্ম,এরপর অন্যকিছু। যার কারণে কোন কিছুতেই ফরাসিদের মধ্যে আদিখ্যেতা পরিলক্ষিত হয়না। 

গতবার যখন বিশ্বকাপ জিতল তখন একদিন প্যারিসের বিখ্যাত এভেনিউ শঁজেলিজেতে একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরাসীরা একত্রিত হয়ে উল্লাস করেছে।এরপর ফুটবল উন্মাদনা ঝেড়ে ফেলে যার যার কর্মে মনোনিবেশ করেছে।এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সপ্তাহ ব্যাপী অতিরঞ্জিত উৎসব আনন্দ করে সময় নষ্ট করেনি। 

 

ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশ ফুটবল দল কখনো অংশগ্রহণ করেনি এবং আমাদের জীবদ্দশায় করবে কিনা তা সন্দিহান। অথচ, প্রতিটি বিশ্বকাপ আসলে বাংলাদেশে ভিনদেশে ফুটবল দলকে সমর্থন করে যা হয়, তা আমাদের জাতিগত মানসিকতা নিয়ে ভাবনায় ফেলে দেয়।আমরা ভিনদেশি দলগুলোকে নিয়ে যে কার্যকলাপগুলো করি তার কিঞ্চিত পরিমাণ ঐ সব দেশের মানুষ তাদের দলকে নিয়ে করে কিনা আমি সন্দিহান। ফেচবুকে চোখ রাখলে ভেসে আসে এই ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সব অদ্ভুত সংবাদ।কেউ জমি ও স্ত্রীর গহনা বিক্রি প্রিয় দলের জন্য তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতাকা টাঙ্গিয়ে তাক লাগিয়েছে, কোন আর্জেন্টিনা সমর্থক চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতাকা টাঙ্গানোয় ব্রাজিল সমর্থক ঋণ করে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতাকা টাঙ্গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।কেউ একজন ব্যক্তিগত অর্থ খরচ করে কাতারের ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোর আদলে ডামি স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছে, কেউ প্রিয় দলের জন্য মোল্লা পুরোহিত দিয়ে প্রার্থনার আয়োজন করছে, কেউবা বাড়ীর বিল্ডিং ভিনদেশি পতাকার আদলে রং করে ফেলেছে।খেলা থেকে আনন্দ নেবার কথা,কিন্তু প্রশ্ন সবার কাছে, এসব অনুৎপাদনশীল কার্যকলাপের মধ্যে মানসিক আনন্দ ছাড়া আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের বাড়তি কি অর্জন নিহিত রয়েছে? এসব খবর আবার জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করছে,সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রচার বাড়ানোর লক্ষ্যে। যেখানে সংবাদপত্রের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এসব অনুৎপাদনশীল কার্যকলাপকে প্রচার না করে নিরুৎসাহিত করার কথা।রক্ত দিয়ে পাওয়া নিজের স্বাধীন দেশে যে উপলক্ষেই হোক না কেন ভিনদেশী পতাকা উড়ানো যে সম্মানের বিষয় নয়, এই সামান্য সম্মান বোধটুকুই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের আমরা নিজেদের মধ্যে তৈরি করতে পারিনি। জাতিগত ভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ যে অবরুদ্ধ তা এ থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়।জাতীয় পতাকা হচ্ছে একটি দেশ ও জাতির পরিচয় ও সম্মানের প্রতীক।নিজের স্বাধীন সার্বভৌম দেশে ফুটবল ভালোবাসার নামে ভিনদেশি পতাকার মহোৎসব করা মানে নিজের পতাকাকে অপমান করা,নিজের সত্ত্বাকে অপমান করা।তা আমাদের উপলব্ধি করা অতীব জরুরি। 

 

যেসব দেশের দল এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করছে সেইসব দল ও দেশের মানুষ সম্মান পাবে, আর্থিক পুরষ্কার পাবে, তাদের বাড়াবাড়ি আনন্দ উল্লাস মেনে নেয়া যায় , কিন্তু ভিনদেশী দল নিয়ে আমাদের যে বাড়াবাড়ি তা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া অন্যকিছু ভাবা না যায়না। এগুলো করে খেলা চলাকালে মানুষের মূল্যহীন সস্তা বাহবা পাওয়া যাবে, কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর ঋণ করে পতাকা বানানোর টাকাতো নিজেকেই পরিশোধ করতে হবে। এমন ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ আপনার ঋণের দায়ভারতো ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা সরকার নেবে না। 

 

কোন কিছুর প্রতি অবশ্যই ভালোবাসা থাকবে,উন্মাদনা থাকবে এবং থাকাটা অবশ্য ভালো, তবে তা হওয়া উচিত সীমার মধ্যে, শৃঙ্খলার মধ্যে, আত্মমর্যাদা বোধের মধ্যে।লাগামহীন অবশ্যই নয়।আমাদের মূল্যবান মেধা, শ্রম ও অর্থ যদি অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের চর্চা বন্ধ করে উৎপাদনশীল কর্মে ব্যবহারের অনুশীলন শুরু করি তবেই আমাদের জাতিগত অগ্রগতি তরান্বিত হবে এবং তার মধ্যেই আমাদের সামগ্রীক কল্যাণ নিহিত।

 

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

বরফে ঢাকা আল্পস ভ্রমণের দিনগুলো (পর্ব-২ , মোঁ ব্লঁ)


২১ ডিসেম্বর ২০২১, ঘুম থেকে উঠেই আমরা সকালের প্রাত্যহিক কার্যক্রম শেষ করে  মোঁ ব্ল পর্বতে ওঠার উদ্দেশ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নিলাম।পর্বত চূড়ায় ওঠার ট্রাম স্টেশন  ছা জারভে লে বাঁ লো ফায়ে  St-Gervais-les-Bains-le-Fayet ট্রেন স্টেশনের পাশেই অবস্থিত। স্টেশনটি ভূমি থেকে ৫৮০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আমরা  TRAMWAY DU MONT-BLANC স্টেশনে এসে প্রথমেই এখানকার কর্মরত এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোঁ ব্ল ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জেনে নিলাম। স্কি করার সরঞ্জাম কোথা থেকে সংগ্রহ করতে হবে ,শেষ ট্রাম পাহাড় থেকে কখন নেমে আসবে ইত্যাদি।স্টেশনে একটি ট্রাম যাত্রা শুরুর প্রহর গুনছে  ।ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে দশটা বাজলে ট্রামটি পর্যটকদের নিয়ে স্টেশন ছাড়বে।আমরা কাউণ্টার থেকে তিনটি টিকেট সংগ্রহ করলাম। টিকিটের দামটা অনেক বেশি মনে হল ।প্রত্যেক পূর্ণ বয়স্কদের যাওয়া আসার টিকেটের দাম ৩৯,২০ইউরো এবং শিশুদের ৩৩,৩০ইউরো করে।আমরা সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে ট্রামে চেপে বসলাম।যথা সময়ে ট্রাম ষ্টেশন ছাড়ল।আমাদের অন্যান্য সহযাত্রীদের  মধ্যে কারো সঙ্গে স্কি করার  সরঞ্জাম হাতে,কারো কারো গলায় আমার মত  ক্যামেরা  ঝোলানো রয়েছে ।দিনটি রৌদ্রোজ্জ্বল হওয়ায় নিজেদেরকে খুব ভাগ্যবান মনে হলো।নির্ধারিত সময়ে ট্রাম আমাদেরকে নিয়ে ষ্টেশন ত্যাগ করে কিছু দূর এগুনোর পর পাহাড়ি পথে প্রবেশ করলো। ট্রামলাইনের দুইপাশে ঘন বনভূমি।বৃক্ষরাজির পাতা ও ডালপালার  উপর  তুষারের সাদা আবরণের কারণে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল একটি পুষ্প কাননের রূপ ধারণ করেছে। ট্রাম যতই পাহাড়ি পথ ধরে যতই এগিয়ে যেতে লাগলো ততই বিস্ময় বাড়তে লাগলো। মনে হচ্ছিলো, আমরা কোন নতুন  কল্পনার রাজ্য আবিষ্কারের অভিযানে যাত্রা শুরু করেছি ।পাহাড়ি পথের কোল ঘেঁষা অরণ্যের মধ্যে গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের ছোট ছোট নয়নাভিরাম বশত বাড়ী।প্রায় পনেরো মিনিটের পাহাড়ি রেলের সরু পথ বেয়ে  আমাদের ট্রাম ভূমি থেকে ৮৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তার দ্বিতীয় ষ্টেশনে এসে যাত্রা বিরতি করলো নতুন যাত্রী তোলার জন্য।আমরা ট্রাম থেকে বেরিয়ে নিচে দাঁড়ালাম কারণ এই ষ্টেশনের আশেপাশেই  সন্ত ভিল(শহরের কেন্দ্রস্থল) অবস্থিত, যেখানে স্কি করার যাবতীয় সামগ্রী কেনা ও ভাড়া পাওয়া যায়। ট্রাম চালক তার আসন থেকে বেরিয়ে এসে আমাদেরকে জানালো যে পরবর্তী ট্রাম এখান থেকে ছেড়ে যাবে আরও চল্লিশ মিনিট পর, তাই কেউ যদি স্কি করার সরঞ্জাম ভাড়া করতে চান তাহলে এই সময়ের মধ্যে আপনাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে পরবর্তী ট্রামে করে আপনাদের গন্তব্যে পৌছুতে পারবেন, এজন্য পুনরায়  টিকেট কাটতে হবে না।আমরা কিছুক্ষণ এখানকার চারপাশ ঘুরে দেখছিলাম।কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতির কারণে দৃষ্টির কিছু দূরের দৃশ্যপট ধোঁয়াশা হয়ে আছে।মাঝে মাঝে সূর্যের তির্যক রশ্মি কুয়াশা ভেদ করে দূর পাহাড়ের চূড়ার উপর পড়ছে ,ফলে চূড়াগুলো রূপার মত চিকচিক করে ভেসে উঠে আবার আড়াল হয়ে যাচ্ছে।মেঘ পাহাড়ের এই লুকোচুরি খেলার দৃশ্য বর্ণনাতীত।পাহাড়ের কোলের মধ্যে অবস্থিতি  ফ্রান্সের Auvergne-Rhône-Alpes  পাহাড়ি অঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর Saint gervais les bain ছা-জারভে লে বাঁ। আমরা  টিকেট কাউন্টারে কর্মরত ব্যক্তির কাছে স্কি সামগ্রী ভাড়া করার দোকানে যাওয়ার দিক নির্দেশনা জেনে তিনজন  ছা-জারভে লে বাঁ সন্ত ভিললের দিকে এগুতে লাগলাম।অচেনা জায়গা তাই মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে প্রায় পনেরো মিনিটের হাঁটা পথ মাড়িয়ে এসে পৌছুলাম সন্ত ভিলের একটি স্কি সামগ্রীর দোকানে। স্কির জুতা ট্রায়াল দেয়ার পর আমি প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিলাম স্কি না করার।কারণ, জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মনে হল আমার পায়ে পাথর বেঁধে দেয়া হয়েছে, সেইসাথে এই ভারী জুতা পরে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাও যায় না। বরফের উপর পায়ের গোড়ালিতে ভর দিয়ে  হাঁটতে হয়। আমার এখানে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ফটোগ্রাফি করা তাই স্কি করার ভারি সামগ্রী বহন করে ছবি তোলা দুরূহ কাজ মনে হল।ভাবলাম, দুই কাজ একসঙ্গে না করে আমার আসল কাজটি ভালো ভাবে করি ।সুমি স্কি করার পূর্ণ একটি সেটআপ ভাড়া করলো  শুধু চশমা বাদে।আমাদের তিনজনের স্কি চশমা প্যারিস থেকে কিনেছি।আমার মত মিশেলও  স্কি না করা সিদ্ধান্ত নিলো, তাই খেলার জন্য একটি প্লাস্টিকের ট্রে ভাড়া নিলো, যেটির মধ্যে বসে বরফের উপর স্লেজ করা যায়। সুমির একজোড়া স্কি, স্কির জুতা, ,লাঠি ও মিশেলের ট্রে মিলে একদিনের ভাড়া বাবদ প্রায় সত্তর ইউরোর মত প্রদান করা হল। স্কি সেন্টার থেকে ফেরার পথে এগুলো ফেরত দিতে হবে। 


 স্কির দোকানের কাজ সম্পন করে আমরা  আবার ট্রাম স্টেশনের দিকে রওনা হলাম।এবার চেনা পথে স্কির ভারী সরঞ্জাম নিয়ে  সাত  মিনিটের মধ্যে ট্রাম স্টেশনে ফিরে এলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রাম এসে হাজিত হলো। আবার শুরু হল আমাদের পাহাড় চূড়ার স্কি সেন্টারের উদ্দেশ্যে যাত্রা।ট্রাম ধীর গতিতে খাড়া পর্বত বেয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।ট্রাম যতই এগিয়ে যাচ্ছিলো আমাদের বিস্ময়ও ততই বাড়ছিলো।পাহাড়ি ভূমি এভাবে আমাদের কখনোই দেখা হয়নি তাই চোখে নতুন নতুন রূপে ধরা দিচ্ছিল আল্পস পর্বতমালার বৈচিত্র্যময় রূপ। পাহারের ভাজে ভাজে কালের সাক্ষী হয়ে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাইন গাছের দল। দূর থেকে এই পাহাড়ি ঘন পাইন গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় খয়েরী রঙা বিশাল কার্পেটে দিয়ে যেন পাহাড়ের গা ঢেকে রাখা হয়েছে।আমরা যত উপড়ে উঠছিলাম ততই ট্রাম চলার এই নির্জন সরু পাহাড়ি পথটাকে চরম বিপদ সংকুল মনে হচ্ছিলো।পথের এক পাশ এতোটাই ঢালু যে কোন মানুষ যদি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে এখান থেকে পড়ে যায় তাহলে তার জীবন ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।আবার প্রাণে বেঁচে গেলেও এই দুর্গম বরফে ঢাকা খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে আসা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব।হলিউডের অনেক এডভেঞ্চার সিনেমায় এমন স্থানের দৃশ্য সচারাচর দেখা যায়।যেখানে থাকে সিনেমার মূল চরিত্রের জনমানবহীন এমন দুর্গম এলাকায় বৈরি প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প ।সিনেমার পর্দার বাস্তব  দৃশ্যের এমন পর্যবেক্ষণ আমারকে আশ্চর্য রকমের ভালোলাগায় মোহিত করছিলো।।স্রস্টার পৃথিবীটা যে কত বৈচিত্র্য ভাবে সাজানো তার অনেক কিছুই চোখে না দেখেই আমাদেরকে এই ধরিত্রীর বুক থেকে বিদায় নিতে হয়।তাই ঐ মুহূর্তে নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো। আর ভাবছিলাম মানুষ কত সাহসী! এই প্রতিকুল ভূপ্রকৃতিকে বশে এনে কি অনায়াসে তার উপর যান চলার রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। 

মাঝে মাঝে ঘন বনের ফাঁক দিয়ে চোখে ধরা দিচ্ছিল দূর পাহাড়ের অভ্রভেদী চূড়ার উপর জমে থাকা সাদা বরফের সঙ্গে সূর্য রশ্মির এক অভূতপূর্ব মিতালীর দৃশ্য। মনে হচ্ছিলো রূপা দিয়ে মোড়ানো পাহাড় চূড়াগুলো যেন নিজেদের রূপ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। 

 

 


ট্রাম ধীর গতিতে মতিভো MOTIVO ষ্টেশন পাড়ি যখন কোল দো ভোজা COL DEVOZA স্টেশনে থামল  তখন মনে হল আমরা যেন একটি ভিন্ন গ্রহে এসে পৌঁছেছি।সামনে বিস্তীর্ণ বরফে ঢাকা উঁচুনিচু ভূমি।তুষারের মরুভূমি বললে ভুল হবে না।কোথাও দু একটি পাইন গাছ নিঃসঙ্গ একা দাঁড়িয়ে আছে।এর মধ্যে স্কিয়ারের দল ছুটে চলছে দুরন্ত গতিতে।এরপর বেলভু  BELLEVUE স্টেশনে কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে ট্রাম এসে দাঁড়াল ভূমি থেকে ২৩৮০ মিটার  উচ্চতায় অবস্থিত গন্তব্যের  নিদ দানগ্লে  NID D’AIGLE ষ্টেশনে।আমাদের সঙ্গের অনেক পর্যটক অন্যান্য ষ্টেশনে নেমে গেলোও আমরা নিদ দানগ্লেতে নামলাম। 

 

আল্পস্‌ পর্বতমালা অস্ট্রিয়া, স্লোভানিয়া ইতালি, সুইজারল্যান্ড, লিশ্টেনশ্টাইন, জার্মানি ও  ফ্রান্স জুড়ে বিস্তৃত।এই বৃহৎ পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি  ফ্রান্সের অংশে অবস্থিত, যার নাম মোঁ ব্লঁ।ভূমি থেকে উচ্চতা ৪৮০৮ মিটার।নিদ দানগ্লে’র সামানে মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে মোঁ ব্লঁ Mont-Blanc। নিদ দানগ্লে থেকে চূড়াটি খুব কাছাকাছি মনে হলেও গাণিতিক হিসেবে ২৪৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।পৃথিবীর অন্যতম একটি পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে সত্যি খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো।আমার দীর্ঘদিনের শখ ছিল পাহারের ছবি তোলার। এ উপলক্ষে একটি ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির বিশেষ লেন্সও কিনেছি । চারপাশের এমন স্বর্গীয় দৃশ্য দেখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না।দ্রুত নেমে পড়লাম ক্যামেরায় দৃশ্য ধারণে।সুমি জীবনের প্রথমবারের মত স্কি করার প্রস্তুতিতে নেমে পড়লো কিন্তু ভারি জুতার সঙ্গে স্কির সংযোগ ঘটাতে দেখা দিল বিড়ম্বনা, নানা চেষ্টা করেও সফল হল না।পরে ট্রাম স্টেশনে কর্মরত এক ব্যক্তির সহায়তায় জুতা ও স্কির মধ্যকার কারিগরি সমস্যায় সমাধান মিলল।সুমি স্কি সরঞ্জাম শরীরে পরিধান করে প্রথমে বরফের উপর দিয়ে একটু একটু করে এগুবার চেষ্টা করলো কিন্তু ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে কয়েকবার বরফের উপর পড়ে গেলো।আমি আর মিশেল মিলে ওকে পুনরায় উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলাম।শিশু যেমন বারবার পড়ে গিয়ে হাঁটা শেখে, তেমনি সুমিও হার না মানা বার বারের চেষ্টায় বরফের উপর দিয়ে স্কি পায়ে চলতে শিখে গেলো।এরপর মিশেল তার মায়ের পাশে থেকে হাঁটতে লাগলো যাতে পড়ে গেলে তাকে তুলে দিতে পারে। 

 

নিদ দানগ্লে মূলত স্কি খেলার একটি অন্যতম জনপ্রিয় স্থান।শত শত পেশাদার,অপেশাদার স্কি খেলোয়াড়দের অবিশ্রান্ত ছুটে চলায় পাহারের এই পৃষ্ঠদেশ তুষারের কংক্রিটে পরিণত হয়েছে।টেলিভিশন ও সিনেমায় স্কি খেলোয়াড়দের ছুটে চলা দেখেছি কিন্তু এই প্রথমবারের মত  বাস্তবে স্কিয়ারদের ক্রিয়া নৈপুণ্য দেখে বিস্মিত হয়েছি।পাহারের ভয়ঙ্কর খাড়া ঢালু,যেখান থেকে কেউ স্লিপ করে পড়ে গেলে জীবন রক্ষা করা দায় অথচ স্কিয়ারের দল অনায়াসেই তুষারকে তুলোর মত উড়িয়ে সেই ভয়ঙ্কর পাহাড়ি ঢালুর মধ্যে  নির্ভয়ে চোখের পলকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

 

 সাদা পাহাড়ি ভূমির বুকে চকচকে রোদের নরম উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছে।ফলে ঘোরাঘুরির কারণে তুষারের ঠাণ্ডা প্রতিরোধক কাপড়ের ভেতর কিছুটা ঘাম অনুভব হচ্ছে।

আমরা ছবি তোলা, স্কি করা কিছু সময়ের জন্য বিরতি দিয়ে কোন খাবারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে জন্য একটি উঁচু টিলার উপর রেস্তোরা আকৃতির ঘর দেখে উপরে উঠতে লাগলাম। ওঠার পর জানলাম এটা রেস্তোরা নয়। ছোট একটি ইংরেজ পর্যটকের দল টিলার উপর বসে সঙ্গে আনা জলখাবার খাচ্ছে।ঐ মুহূর্তে মনে হল, আমাদেরও সঙ্গে করে কিছু জলখাবার আনার দরকার ছিল, কারণ এমন এলাকায় খাদ্য সামগ্রী  সহজলভ্য না হওয়াই স্বাভাবিক।ঐ পর্যটক দলের একজন জানালো রেস্তোরা পেতে হলে ট্রামে করে বেল ভু’তে যেতে হবে।আমরা কিছু সময় টিলার উপর বসে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করে নেমে এলাম।                                                    

ট্রাম স্টেশনে কর্মরত এক ব্যক্তির কাছে জানলাম এখান থেকে ছেড়ে যাওয়ার আরও দুটো ট্রাম রয়েছে।একটা বেলা দুইটায় এবং সর্বশেষটি বিকেল চারটায়।সিদ্ধান্ত নিলাম দুটোর ট্রামে উঠে আমরা বেল ভু’তে নামবো এবং সেখানে খাওয়া দাওয়া সেরে আমি ছবি তুলবো আর সুমি স্কি করে সময় কাটাবে,পরে সর্বশেষ ট্রাম ধরে  ছা জারভে লে বাঁ লো ফায়েতে ফেরবো ।সে অনুযায়ী বেলা দুটো পর্যন্ত আমরা নিদ দানগ্লে ঘুরেফিরে সময় কাটালাম, এরপর ট্রাম ধরে বেলভু’তে নেমে এলাম। 

 

বেলভু’র একদিকে প্রশস্ত উঁচু পাহাড়ি ঢালুভূমি  ঝর্ণাধারার মত নেমে এসেছে।সেই উঁচু ঢালুর চূড়া থেকে শতশত স্কিয়ার জলপ্রপাতের  মত নেমে আসছে।যেখানে বরফের উপর দিয়ে হাঁটতে গেলে পা পিছলে যাওয়ার ভয়ে ভয়ে এগুতে হয় সেখানে সুউচ্চ বরফে ঢাকা ঢালুর উপর থেকে এমন নির্ভয়ে নেমে আসতে দেখে বেশ অবাক হচ্ছিলাম।মানুষ অধ্যবসায় ও অনুশীলনের ভেতর নিয়ে কতকিছুই যে সাধন করতে পারে তাই ভাবছিলাম কিছুক্ষণ।

 

ট্রাম স্টেশনের পাশেই একটি ব্যস্ত রেস্তরা।স্কিয়ার ও পর্যটকের দল তেরাসে বসে মধ্যাহ্ন ভোজের সঙ্গে গল্প করে আয়েসি সময় পার করছে।আমরা আমাদের স্কি সরঞ্জাম তেরাসের এক পাশে রেখে রেস্তরাটিতে প্রবেশ করলাম ।ফ্রেস হয়ে স্যান্ডুইচ,ফ্রেন্স ফ্রাই সঙ্গে কোকাকোলা অর্ডার করে রেস্তোরাঁর ভেতরের একটি টেবিলে বসলাম।বৈদ্যুতিক হিটারের তাপে ভেতরটা বেশ উষ্ণ হয়ে আছে। বরফে ঢাকা ঠাণ্ডা প্রকৃতির মধ্যে থেকে রেস্তোরাঁর এমন উষ্ণ পরিবেশে প্রবেশ করে ভিন্ন রকমের আরাম অনুভব হল।কিছুক্ষণ পর একজন ওয়েটার আমাদের খাবার নিয়ে এলো।খাওয়া শুরু করে বুঝলাম সবসময় যেসব স্যান্ডউইচ খেয়ে থাকি সেসব স্যান্ডউইচ থেকে এখানকার স্যান্ডউইচের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। নতুন একটি স্যান্ডউইচের স্বাদের সঙ্গে পরিচয় হলাম সঙ্গে জীবনে প্রথমবারের খেলাম মিষ্টি আলুর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।ইউরোপের বেশ কিছু শহর আমার ভ্রমণ করা হয়েছে।প্রত্যেকটা শহরের একই খাবারের স্বাদের ভিন্নতা পেয়েছি,নতুনত্ব পেয়েছি।যেমন,প্যারিসে ফ্রেন্স ফ্রাই বা ফ্রিত নিয়মিতই খাওয়া হয় কিন্তু মিষ্টি আলু দিয়ে ফ্রিত তৈরি হয় এমন কোন রেস্তরাঁর সন্ধান পাইনি কখনো। কিন্তু আল্পেসের বুকে মিলল এমন একটি ভিন্ন স্বাদের সুস্বাদু খাবারের রেস্তোরা ।

 

খাওয়া শেষ করে আমরা বেশ কিছুক্ষণ রেস্তরাঁয় গল্প করে কাটালাম। এখান থেকে বেরিয়ে সুমি শেষ সময়ের মত স্কি করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হার না মানা অনুশীলনের ফলে ও স্কি করা অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে এসেছে । বেলভু’র বরফের উপর বেশ দ্রুত গতিতে একা একাই স্কি করে অনেক দূর চলে গিয়ে আবার ফিরে আসতে কোন বাধা পেল না ।যার দরুন মিশেল আর তার মায়ের দিকে নজর না দিয়ে নিজের ক্যামেরায় ফটোগ্রাফিতে মেতে উঠলো।আমিও পাহাড়ের গায়ে শেষ বেলার আলো পড়া পাহাড়ের ভিন্ন রূপের দৃশ্য ধারণে মনোনিবেশ করলাম ।আমরা যার যার কাজে বেশী দূরে না গিয়ে ট্রাম স্টেশনের আশেপাশেই থাকার চেষ্টা করলাম।কারণ এই শেষ ট্রামটি মিস হলে পাহাড় থেকে আমাদের আর নিচে নামা হবে না।বেলভুর বিকেলের শেষ মুহূর্তটুক কাটল ভ্রমণ স্মৃতি ধরে রাখতে  আমাদের একে অপরের  ব্যক্তিগত ছবি তুলে। 

 

বিকেল চারটার দিকে নিদ দানগ্লে থেকে পাহাড়ি ঢালু পথ বেয়ে নেমে এলো দিনের শেষ ট্রাম। আমরা বেলভু’কে বিদায় জানিয়ে ট্রামে উঠে পরলাম।ট্রাম বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো শেষ সময়ের যাত্রীদের তুলে নেয়ার জন্য।সন্ধ্যার গোধূলি আলোর আভা ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। পাহাড়চূড়াগুলো রূপালী রঙ বদলে হাল্কা সোনালি রঙ ধারণ করছে।এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে আমাদের ট্রাম বেলভু থেকে রেলের পাহাড়ি ঢালু পথ ধরে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলো।  

ট্রামের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।জনমানববহীন পাহাড়ি পথের চারপাশে সুনসান নীরবতা ।মাঝে মাঝে ট্রামের জানালার কাঁচ দিয়ে দেখা যাচ্ছে সুদূরের পাহাড়ি গাঁ। পাহাড়ের শরীর বেয়ে সাপের চলার মত আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে গেছে রাস্তা, সন্ধ্যাবাতি জলে ওঠায়  তা ফুটে উঠেছে ।এই আঁকাবাঁকা ঢালু রাস্তাগুলো পাহাড়ের  গাঁয়ে গড়ে ওঠা এক একটি গ্রাম ও শহরের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করেছে। এক পাহার থেকে অন্য পাহাড়ের এই দৃশ্য দেখতে খুব অদ্ভুত লাগে।আমি কৌতূহলের সঙ্গে ভাবছিলাম এমন সুউচ্চ পাহাড়ের গাঁয়ে মানুষ কিভাবে আধুনিক বসতি স্থাপন করেছে।সমতল থেকে এসব পাহাড়ি বসতি অনেক উঁচুতে অবস্থিত।সন্ধ্যার পাহাড়ি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা চলে এলাম ছা-জারভে লে বাঁ স্টেশনে।আমাদেরকে এখানে নেমে পড়তে হল স্কি সামগ্রী ফেরত দেবার জন্য । ট্রাম চালকে জিজ্ঞেস করলাম, যেহেতু পরবর্তীতে আর ট্রাম নেই তাহলে এখান থেকে ছা জারভে লে বাঁ লো ফায়ে’তে যাওয়ার আর কি ব্যবস্থা আছে ?ভদ্রমহিলা অর্ভয় দিয়ে বললেন, কোন সমস্যা হবে না,আপনার বাস অথবা চাইলে হেঁটে যেতে পারবেন, এখান থেকে লো ফায়ে খুব বেশী দূরের পথ নয়। 

আমরা ভদ্রমহিলার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ট্রাম স্টেশন থেকে স্কি সরঞ্জাম ফেরত দেওয়ার জন্য সন্ত ভিলের দিকে রওনা হলাম।সময়ের তাড়া না থাকায় পাহাড়ি ছোট্ট শহরের বাড়িঘর দেখতে দেখতে চলে এলাম স্কি’র দোকানে।এখানে সবকিছু সঠিক মত ফেরত দিয়ে আমরা কিছু কেনাকাটার জন্য চলে গেলাম শহরের কেন্দ্রের দিকে। রাতের অন্ধকারে শহরের চারপাশের সুউচ্চ পাহারের বেষ্টনী দেওয়াল দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে ।মানুষের ভিড় নেই। বড়দিন উপলক্ষে শহরের বড় বিক্রয়কেন্দ্র,রাস্তা,বিশেষ ভবনগুলো আলোকসজ্জা করার কারণে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে।পাহাড়ের রকমারি পোস্টার দেখে আমরা একটি সুভেনিরের দোকান ঢুকলাম,পাহাড়ের নানারূপ ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায়,সেইসব দৃশ্যের আকর্ষণীয় কার্ডের সমাহার দোকানটিতে।ছবিতে পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় রূপ আমাকে দারুণ ভাবে আকৃষ্ট করছিল।ভাবছিলাম, নিজের ক্যামেরায় পাহাড়ের এমন রূপ ধারণের সুযোগ হবে কি বাকি দুইদিনে। মিশেল এখান থেকে একটি পুতুল কিনল।কোথাও ঘুরতে গেলে যেটা ও সব সময় করে। দুইদিন ধরে পেটে ভাত পড়েনি কারো ,তাই এখান থেকে বেরিয়ে বাসায় রান্নার জন্য কারফো CARREFOUR সুপার মার্কেটে গিয়ে কিছু চাল,ডিম,সবজি ও সালাদ কিনলাম।

আমাদের ইচ্ছে ছিল একদিন  এখানকার সন্ত ভিল ঘুরে দেখার।সেটা একই দিন কাজের মধ্য দিয়ে হয়েগেল। 

  

রাস্তায় কয়েকজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে  ছা জারভে লে বাঁ লো ফায়ে যাওয়ার বাস কিভাবে পাবো ?কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারলনা।আমি গুগল মাপ অনুসন্ধান করে দেখলাম এখান থেকে আমাদের বাসায় হেঁটে যেতে ত্রিশ মিনিটের পথ।ওদের দুজনকে বললাম,এভাবে এলোমেলোভাবে বাস ষ্টেশন খুঁজে সময় নষ্ট না করে গুগোল ম্যাপের সাহায্যে দেখতে দেখতে হেঁটে গেলে কেমন হয়।ওরা আমার প্রস্তাবে সাড়া দিলো।সেই অনুযায়ী মোবাইল স্কিনে গুগলের দেখানো নির্দেশনা অনুযায়ী বুলভার্ট বা বড়রাস্তার ফুটপাতে জমে থাকা বরফের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলাম ।নির্জন রাস্তা আমরা তিনজন ছাড়া কোনও জনমানব নেই।মাঝে মাঝে দুই একটি মোটরযান আমাদের পাশদিয়ে শাঁশাঁ শব্দ করে চলে যাচ্ছে।রাস্তাটির একপাশে বিশাল পাহাড়ের বিশাল পাড় ।রাস্তাটি পাহাড়ের শরীর কেটে  তৈরি করা হয়েছে।আমরা দশ মিনিটের পথ পাড়ি দেবার পর এসে দাঁড়ালাম একটি টানেল মুখের মত একটি ওভার ব্রিজের কাছে।ব্রিজের প্রবেশ মুখের পাশ দিয়ে নেমে গেছে একটি ঝোপঝাড়ের খাড়া পাহাড়ি আলপথ।পথটিতে জমে আছে বরফের স্তর।গুগল আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে এই ভয়ঙ্কর পথ অনুসরণ করতে বলছে।দারুণ এক দ্বিধায় পড়ে গেলাম,কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না।।ভেবেছিলাম বড়রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে যাবো, কিন্তু গুগল ম্যাপ যেভাবে বলছে  তাতে কিছুতেই মন সাড়া দিচ্ছে না এই অন্ধকারের  জংলা পথে পা বাড়াতে।আবার গুগল ম্যাপের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে  যদি ব্রিজ পার হয়ে বড়রাস্তা ধরে হাঁটি তবে কোথায় গিয়ে পৌঁছুবো তাও জানি না।এ সময় সাহায্যের জন্য রাস্তায় কোন পথচারীও পাবো না।সম্পূর্ণ অজানা অচেনা পথ। মনে হচ্ছিলো, আমরা না বুঝে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি।যদি আবার শহরের দিকে ফিরে যাই তাহলে ঢালু থেকে পিচ্ছিল পথ বেয়ে উপড়ে  উঠতে হবে।মনে হল,এই জংলা পথে কিছু দূর হাঁটলে হয়তো আবার বড় রাস্তা পাবো।এই ভেবে ওদের দুজনকে খুব সতর্কতার সঙ্গে আলপথের দুই ধারের ঝোপঝাড়ের গাছ ধরে ধরে নিচে নামতে বললাম।আমিও ওদের সাথে থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকলাম।আমরা এতো নিচে নেমে এলাম যে চাইলেই আবার উপড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। যেখানে এসে থামলাম তার একপাশে পাহাড়ের ঝোপ ঝাড়ের খাড়া পার অন্য পাশে ঘন গাছপালাবেষ্টিত  সমতল বনভূমি। এর  মধ্যদিয়ে একটি সরু রাস্তা বয়ে গেছে।মনে হল, রাস্তাটি মানুষের খুব ব্যবহৃত নয়।হয়তো স্থানীয়রা কখনো শর্টকাট হেঁটে সন্ত ভিলে যাওয়ার জন্য এই পথ ব্যাবহার করে থাকে।অন্ধকার রাস্তা তবে আবছা দেখা যায়। সুমি’র মোবাইলের টর্চ লাইট অপশন অন করে মিশেলকে খুব সাবধানে ধরে আমরা এগুতে লাগলাম।কোন রকম অসতর্ক হলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। আলপথের  একপাশ মৃত্যুকূপ।সেই মৃত্যুকূপের পাড় দিয়ে বরফের উপর পা টিপে টিপে এগুচ্ছি।গুগল ম্যাপ প্রায় পনেরো মিনিট এভাবে হাঁটার নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা যতই এগুচ্ছি ততই ঘন বনের মধ্যে প্রবেশ করছি। চারপাশে নিঝুম নিস্তব্ধতা।আমার মনের মধ্যে কিছুটা ভয় ও শঙ্কার উদয় হল কিন্তু ওদেরকে বুঝতে দিলাম না। জনমানবহীন এমন দুর্গম নির্জন রাস্তায় দুই ধরণের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।বুনো শেয়ালের আক্রমণ এবং রোমানিয়ান জিপ্সি বা যাযাবরদের দ্বারা ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার ।সমস্ত ইউরোপ জুড়ে এই রোমানিয়ান জিপ্সিদের বিস্তার।চেহারা এবং বেশভূষা ইউরোপের শিক্ষিত ভদ্রলোকদের মত।ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর সীমানা উন্মুক্ত হওয়ার কারণে এরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবাধে  ছুটে বেড়ায়,এবং শহরের পরিত্যক্ত স্থান ও বনবাদাড়ে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করে।এরা চুরি, ছিনতাই,জুয়া খেলা,ভিক্ষা করা ইত্যাদি অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে।পথ যত লম্বা এবং দুর্গম হচ্ছিলো আমার ভেতরে শঙ্কা ততই জেগে বসছিল।যাইহোক,পনেরো মিনিট হাঁটার পর একটি বশতবাড়ীর  দেখা মিলল।বাড়ীটি দেখে মনে বল ফিরে এলো।মনে হল, বিপদসংকুল এক দীর্ঘ যাত্রাপথ শেষ করে জনবসতিতে প্রবেশ করলাম।রাত প্রায় দশটা,আশেপাশের বাড়ীগুলোর উঠোনে বাতি জ্বলে আছে কিন্তু কোনও মানুষের আনাগোনার শব্দ নেই।স্থানীয় বাড়িঘরের গলিরাস্তার  ভেতর দিয়ে আরও কিছুদূর হাঁটার পর আমরা বড় রাস্তায় গিয়ে উঠলাম।একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে জীবনের বড় একটি শিক্ষা অর্জন হল যা পরবর্তীর দিনের ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক বার্তা হয়ে থাকবে আমাদের জন্য।       

         

 ঘরের ফিরে বুঝলাম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ার সঙ্গে পেটের টানটাও বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু তখন অনুভব হয়নি।বিলম্ব না করে পোশাক বদলে হাতমুখ ধুয়ে চুলায় তেল, মশলা ও  গরুর মাংস একসঙ্গে মিশিয়ে বসিয়ে দিলাম। একঘণ্টা পর ভাপ ওটা মাংসের সঙ্গে গরম ভাতের তৃপ্তির নৈশ আহারের মধ্যে দিয়ে শেষ হল আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উৎকণ্ঠার একটি ভ্রমণ দিনের গল্প।  

বরফে ঢাকা আল্পস ভ্রমণের দিনগুলো (পর্ব-১)

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

কে রাজনৈতিক নেতা ?

একজন ব্যবসায়ী খোঁজে মুনাফা, শিল্পী খোঁজে তারকা খ্যাতি , খেলোয়াড় খোঁজে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার আর মেডেল, আমলা খোঁজে পরিপাটি চেয়ার, মোটা অঙ্কের বেতন, কিন্তু যে মানুষটির মুনাফার মনোবৃত্তি নেই, নেই তারকা খ্যাতির সুপ্ত বাসনা বা ম্যাচ সেরার পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা, অধনস্থ ঘেরা নির্দেশের নরম চেয়ারের স্বাদ যার কাছে তুচ্ছ, তিনিই রাজনৈতিক নেতা , মানুষের সমস্যা,শঙ্কট, সমাধান ও সম্ভাবনা যিনি অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পান, তিনিই রাজনৈতিক নেতা। পরিবারকে পরিবার না ভেবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে যিনি পরিবার ভাবেন, তিনিই রাজনৈতিক নেতা।

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কানকথা

যুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে নগর, জনপদ ধ্বংস হয়ে যায়, এটা দৃশ্যমান।পৃথিবীতে আরও একটি অদৃশ্যমান বোমা রয়েছে যা দৃশ্যমান বোমার মতই শক্তিশালী যা মানুষের অদৃশ্য মধুর সম্পর্কের সংযোগ ছিন্ন করে, নাম কানকথা।অর্থাৎ,দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কারো কানে অন্যের নামে মিথ্যা কথা ঢুকিয়ে দেওয়া।আমাদের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা অন্যের সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি করে দূর থেকে এক ধরনের বন্য আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে মূলত এমন কর্ম করে থাকে।এমন কুপ্রবৃত্তি সমাজের স্যুটকোট পরা শিক্ষিত ও অশিক্ষিত উভয় শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যাদের ব্যক্তিত্ব দুর্বল তারা পর্যবেক্ষণ ছাড়াই এমন কান কথায় কান দিয়ে প্রথমেই আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখায় , কখনো নিজের মধ্যে সন্দেহজনক মনোবৃত্তির উদয় ঘটায়। এমন আচরণের কারণে অনেক সময় দীর্ঘদিনের কাছের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, পরিবার ধ্বংস মুখে নিপতিত হয়। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ এমন কথা শুনে কখনো তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখান না।তার শত্রুর নামেও কান কথা লাগালে তারা পর্যবেক্ষণ করেন।
তাই কোন মানুষ কারো নামে কোন কথা তার অনুপস্থিতিতে বললে সবসময় প্রতিক্রিয়া দেখানোর পূর্বে পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তা নাহলে তিলে তিলে গড়া একটি বন্ধুত্ব ও বিশ্বস্থতার সম্পর্ক বোমার আঘাতের মতই ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যেতে পারে।এতে দুষ্ট মানুষ আপনার ধ্বংস দেখে দূর থেকে খিলখিল করে হাসবে আর আপনি আপনার ধ্বংসের দহনে জ্বলতে থাকবেন।
তাই কান কথায় প্রতিক্রিয়া নয়, পর্যবেক্ষণ, পর্যবেক্ষণ এনং পর্যবেক্ষণ ...............

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২

আত্মকেন্দ্রিক মানুষ

মানুষের মধ্যে নানা প্রবৃত্তির মানুষ রয়েছে।এরমধ্যে আত্মকেন্দ্রিক মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিশেষ শ্রেণী। এই শ্রেণীর মানুষ আমাদের চারপাশে অহরহ ঘোরাফেরা করে কিন্তু চিনতে পারিনা এদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য  হল এরা নিজের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেনা। এদের চিন্তার সমস্ত জগতটাই নিজেকে ঘিরে।ভোগবাদী জীবন যাপন করা এদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য। নিজের সমস্যা ব্যতীত বন্ধু,প্রতিবেশী,সংসার,সমাজ,রাষ্ট্র বিশ্বের সমস্যা এদের কাছে গুরুত্বহীন।এরা ততোটুকু সমাজের অন্য মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে যতটুক তার প্রয়োজন। এমন মানুষদের একটি ভয়ংকর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল, কথার অতি মিষ্টতা। যা শিকারির ফাঁদে রাখা লোভনীয় খাবারের মত।এরা যখন কোন প্রয়োজন বা স্বার্থের জন্য কোন মানুষের সঙ্গে মেশে তখন এতোটাই নম্র ভদ্র আচরণ করে যে রক্তের অতি আপন মানুষদের থেকে তাকে বেশি আপন মনে হবে।এরা নিজের সমস্যা অশ্রু জলে ভিজিয়ে এমন ভাবে অন্যের কাছে প্রকাশ করে তাতে যেকোন পাথরসম হৃদয়ের মানুষেরও মানবিকতা জেগে উঠবে এবং তার সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করবে ।অতীব স্বার্থের প্রয়োজনে এরা প্রভুভক্ত কুকুরের মত অন্যের পা চেটে দেবার জন্যও  উদগ্রীব থাকে।এদের এমন আচরণ ও কথায়  মনে হবে, আপনার বিপদে সে জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত, কিন্তু ধ্রুব বাস্তবতা হল প্রয়োজন হাসিল হলে এরা পেছনের দৃশ্যপট বেমালুম ভুলে যায় এবং  উপকারীর সঙ্গেই প্রতাপশালী স্বৈরশাসকের মত আচরণ করে। আর যদি মনে মনে ভাবে  ওই উপকারীর দ্বারা বিন্দু পরিমাণ স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ নিরীক্ষণ ছাড়াই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে   উপকারীর বুকের উপর বসে  ছুরি মেরে দিতে বিন্দু পরিমাণ দ্বিধাবোধ করবে না। 

আমাদের বাস্তব জীবনে এমন প্রবৃত্তির মানুষদের সঙ্গে আমরা নানা সম্পর্ক চুক্তিতে জরিয়ে সময় অতিবাহিত করি, কিন্তু সহজে চিনতে পারিনা।কেউ হয়তো দ্রুত এমন মানুষদের আবিষ্কার করতে পারে, কারো আবিষ্কার করতে করতে জীবনের মূল্যবান অনেক সময় পার হয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। জীবনের যে সময়ই হোক এমন মানব আকৃতির গোখরা সাপ আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তা নাহলে এদের বিষাক্ত ছোবলে মৃত্যু অনিবার্য...।। 


কোন মানুষের কথা আচরণ দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে  কোন চুক্তি বা বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে তার পেছনের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনা জরুরী। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রতারক,অকৃতজ্ঞ আত্মকেন্দ্রিক, ভোগবাদী  মানুষদের স্বার্থ উদ্ধারের প্রধান পূঁজি হচ্ছে কথার অতি মিষ্টতা এবং আচরণের অতি নম্রতা