মানুষের মধ্যে নানা প্রবৃত্তির মানুষ রয়েছে।এরমধ্যে আত্মকেন্দ্রিক মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিশেষ শ্রেণী। এই শ্রেণীর মানুষ আমাদের চারপাশে অহরহ ঘোরাফেরা করে কিন্তু চিনতে পারিনা । এদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এরা নিজের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেনা। এদের চিন্তার সমস্ত জগতটাই নিজেকে ঘিরে।ভোগবাদী জীবন যাপন করা এদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নিজের সমস্যা ব্যতীত বন্ধু,প্রতিবেশী,সংসার,সমাজ,রাষ্ট্র ও বিশ্বের সমস্যা এদের কাছে গুরুত্বহীন।এরা ততোটুকু সমাজের অন্য মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে যতটুক তার প্রয়োজন। এমন মানুষদের একটি ভয়ংকর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল, কথার অতি মিষ্টতা। যা শিকারির ফাঁদে রাখা লোভনীয় খাবারের মত।এরা যখন কোন প্রয়োজন বা স্বার্থের জন্য কোন মানুষের সঙ্গে মেশে তখন এতোটাই নম্র ভদ্র আচরণ করে যে রক্তের অতি আপন মানুষদের থেকে তাকে বেশি আপন মনে হবে।এরা নিজের সমস্যা অশ্রু জলে ভিজিয়ে এমন ভাবে অন্যের কাছে প্রকাশ করে তাতে যেকোন পাথরসম হৃদয়ের মানুষেরও মানবিকতা জেগে উঠবে এবং তার সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করবে ।অতীব স্বার্থের প্রয়োজনে এরা প্রভুভক্ত কুকুরের মত অন্যের পা চেটে দেবার জন্যও উদগ্রীব থাকে।এদের এমন আচরণ ও কথায় মনে হবে, আপনার বিপদে সে জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত, কিন্তু ধ্রুব বাস্তবতা হল প্রয়োজন হাসিল হলে এরা পেছনের দৃশ্যপট বেমালুম ভুলে যায় এবং উপকারীর সঙ্গেই প্রতাপশালী স্বৈরশাসকের মত আচরণ করে। আর যদি মনে মনে ভাবে ওই উপকারীর দ্বারা বিন্দু পরিমাণ স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ ছাড়াই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ঐ উপকারীর বুকের উপর বসে ছুরি মেরে দিতে বিন্দু পরিমাণ দ্বিধাবোধ করবে না।
আমাদের বাস্তব জীবনে এমন প্রবৃত্তির মানুষদের সঙ্গে আমরা নানা সম্পর্ক ও চুক্তিতে জরিয়ে সময় অতিবাহিত করি, কিন্তু সহজে চিনতে পারিনা।কেউ হয়তো দ্রুত এমন মানুষদের আবিষ্কার করতে পারে, কারো আবিষ্কার করতে করতে জীবনের মূল্যবান অনেক সময় পার হয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। জীবনের যে সময়ই হোক এমন মানব আকৃতির গোখরা সাপ আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তা নাহলে এদের বিষাক্ত ছোবলে মৃত্যু অনিবার্য...।।
কোন মানুষের কথা ও আচরণ দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে কোন চুক্তি বা বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে তার পেছনের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনা জরুরী। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রতারক,অকৃতজ্ঞ ও আত্মকেন্দ্রিক, ভোগবাদী মানুষদের স্বার্থ উদ্ধারের প্রধান পূঁজি হচ্ছে কথার অতি মিষ্টতা এবং আচরণের অতি নম্রতা ।